Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
ইস্তফা প্রশ্নে নীরব প্রধানমন্ত্রী

সংসদ অচল রাখতে এ বার ঝাঁপাবে তৃণমূল

প্রথম সপ্তাহের গোটাটাই ভেস্তে গিয়েছে। আগামিকাল থেকে শুরু বাদল অধিবেশনের দ্বিতীয় সপ্তাহ। কিন্তু ঝড়ের পূর্বাভাস সেখানেও। বিজেপি বিরোধিতার প্রশ্নে আগামিকাল থেকে কংগ্রেসের মতোই সরব হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তবে আলাদা ভাবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৫ ০২:৪৫
Share: Save:

প্রথম সপ্তাহের গোটাটাই ভেস্তে গিয়েছে। আগামিকাল থেকে শুরু বাদল অধিবেশনের দ্বিতীয় সপ্তাহ। কিন্তু ঝড়ের পূর্বাভাস সেখানেও।

বিজেপি বিরোধিতার প্রশ্নে আগামিকাল থেকে কংগ্রেসের মতোই সরব হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তবে আলাদা ভাবে। আলাদা মঞ্চে। সব মিলিয়ে ফের প্রথম সপ্তাহের পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা দ্বিতীয় সপ্তাহেও।

প্রথম সপ্তাহে কংগ্রেস সংসদে বিজেপি বিরোধিতায় উচ্চগ্রামে সরব হলেও তৃণমূলের আপাত নীরব অবস্থান জন্ম দেয় একাধিক প্রশ্নের। সিপিএম-কংগ্রেসের মতো দলগুলি অভিযোগ তোলে সারদা নিয়ে তৃণমূল এতটাই চাপে যে, দুর্নীতির অভিযোগে নাস্তানাবুদ মোদী সরকারকে আক্রমণ করাও তাদের পক্ষে সমস্যার।

দলের এই কৌশলী অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই ভাবমূর্তি শোধরাতে তৎপর হন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশেই কেন্দ্রীয় সরকারের সার্বিক দুর্নীতির বিরোধিতা করে আগামিকাল সংসদ ভবনে প্রবেশের মূল সিঁড়িতে ধর্নায় বসতে চলেছে তৃণমূল।

ঠিক তার উল্টো দিকে গাঁধী মূর্তির সামনে কাল ধর্নায় বসতে চলেছে কংগ্রেসও। শাসক শিবিরের দুর্নীতির বিরোধিতার প্রশ্নে তৃণমূল যে পিছিয়ে নেই তা বুঝিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি তারা যে কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই বিরোধিতার অভিযানে নামছেন না, আলাদা ধর্নামঞ্চ বেছে নিয়ে সেই বার্তাও দিতে চাইছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

দুর্নীতি ছাড়াও রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনা, কালো টাকা ফিরিয়ে আনার দাবিতেই কাল সরব হওয়ার কথা তৃণমূল শিবিরের। সব সাংসদকে সকাল দশটার মধ্যে সংসদে উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, সওয়া দশটা থেকে শুরু হবে ধর্না। তবে মাত্রাছাড়া বিরোধিতায় যেতে বারণ রয়েছে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

দুই প্রধান বিরোধী দল দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতেই যে ভাবে আক্রমণাত্মক মনোভাব নিয়ে নামতে চলেছে, তাতে চলতি সপ্তাহে যে অধিবেশন সুষ্ঠু ভাবে চলবে এমন আশা দেখছে না বিজেপি নেতৃত্বও। দিশা দেখতে ব্যর্থ খোদ প্রধানমন্ত্রীও। আজ ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদী সংসদ অচল প্রসঙ্গে মন্তব্য এড়িয়ে গিয়েছেন। বিরোধীরা যে সুষমা স্বরাজ-সহ অন্য বিজেপি মন্ত্রীদের পদত্যাগের দাবিতে সরব হয়েছে, তা নিয়েও আজ মুখ খুলতে চাননি প্রধানমন্ত্রী।

ফলে অচলাবস্থা যে কাল থেকে ফের শুরু হবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত শাসক শিবির। তা ছাড়া, বিরোধীদের মুখরক্ষার প্রশ্নেও নরম মনোভাব নিতে চাইছে না দল।

সংসদীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুর মতে, ‘‘বিরোধীরা সংসদে এসে আলোচনায় অংশ নিয়ে তাদের কথা বলুন। নিজেদের দাবি-দাওয়া পেশ করুন। নয় তো তাঁরা কক্ষ ত্যাগ করুন। যাতে সংসদ চালানো যায়।’’

কিন্তু বিরোধীরা তা শুনবেন কেন! কংগ্রেস শিবির এখন এক সময়ের বিরোধী আসনে থাকা বিজেপির ধাঁচেই সংসদ অচল করে দিয়ে সরকারকে নাস্তানাবুদ করার রণকৌশলেই ভরসা রাখছেন।

কংগ্রেস আজ ফের দাবি করেছে, অভিযুক্ত নেতারা ইস্তফা না দেওয়া পর্যন্ত সংসদ চলার কোনও প্রশ্নই নেই। বিজেপির শীর্ষ সূত্রের মতে, নরেন্দ্র মোদী কিংবা তাঁর সেনাপতি অরুণ জেটলির মতো নেতারা যে সুষমা স্বরাজ, বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া কিংবা শিবরাজ সিংহ চৌহানকে বাঁচানোর জন্য আন্তরিক, এমন নয়। তাই বলে তাঁদের ইস্তফা দেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই।

কারণ, এক বার তাঁদের ইস্তফা মেনে নিলেও তার আঁচ পড়বে সরাসরি নরেন্দ্র মোদীর উপরে। কিন্তু এই নেতাদের ইস্তফার দাবিতে সংসদ যদি অচল থাকে, তা হলে বিজেপির অন্দরে মোদী-বিরোধী গোষ্ঠীর উপরে চাপ বজায় থাকবে। দলও এখনও মানসিক ভাবে প্রস্তুত যে সংসদের অধিবেশন দ্বিতীয় সপ্তাহেও চলার আশা ক্ষীণ।

কিন্তু প্রশ্ন হল সে ক্ষেত্রে সংস্কার সংক্রান্ত বিলগুলির ভবিষ্যত কী হবে?

সামনেই বিহার নির্বাচন। তাই দলও এখন চাইছে না ওই সব বিল নিয়ে আসতে। তবে পণ্য পরিষেবা করের মতো বিলগুলি বাদল অধিবেশনের একেবারে শেষ লগ্নে পাশ করানোর চেষ্টা করবে দল। সেই লক্ষ্যে সমাজবাদী পার্টি, তৃণমূল, বহুজন সমাজ পার্টির মতো দল যারা এই বিলটির পক্ষে, তাদের সঙ্গে তলে তলে আলোচনা জারি রেখেছে বিজেপি নেতৃত্ব। তা ছাড়া, মোদী-অমিত শাহদের আশা, তত দিনে বিরোধীদের আক্রমণের ধারও অনেক কমে আসবে। ফলে একেবারে শেষবেলায় ওই বিলগুলি পাশ করাতে সে অর্থে অসুবিধা হবে না সরকারের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE