E-Paper

পুরসভায় ভাঙচুর করা রেখার হাতে দিল্লির ভার

দু’দিন আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিধানসভায় ভাঙচুরের অভিযোগে সরব হয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী।

অনমিত্র সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৮:২৯
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্ত।

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্ত। —ফাইল চিত্র।

দু’বছর আগে পুরসভায় ভাঙচুর করার পুরস্কার হিসাবেই কি মুখ্যমন্ত্রিত্ব পেলেন রেখা গুপ্ত! পাঁচ বছর আগে দিল্লির গোষ্ঠী-সংঘর্ষে প্ররোচনা দেওয়ায় অভিযুক্ত কপিল মিশ্র কিংবা বিরোধী প্রার্থীর বিরুদ্ধে কুকথা বলার সব নজির ভেঙে দেওয়া প্রবেশ বর্মাকে কি পুরস্কার দেওয়া হল মন্ত্রী বানিয়ে? আজ শপথ গ্রহণের পরে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বিরোধীরা।

দু’দিন আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিধানসভায় ভাঙচুরের অভিযোগে সরব হয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। আজ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিলেন রেখা গুপ্ত। গতকাল রাতে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণার পরেই দু’বছরের পুরনো একটি ভিডিয়ো নতুন করে ছড়িয়ে পড়েছে। যাতে দেখা গিয়েছে, দিল্লি পুরসভায় ভোটাভুটিতে কারচুপির অভিযোগ তুলে কাউন্সিলরদের নিয়ে ঠেলাঠেলি করে এসে ধাক্কা মেরে পোডিয়াম ফেলে দিচ্ছেন রেখা। উপড়ে দিচ্ছেন মাইক্রোফোন।

রেখা ছাড়াও আজ শপথ নিয়েছেন প্রবেশ বর্মা, আশিস সুদ, মনজিন্দর সিংহ সিরসা, রবীন্দ্র ইন্দ্রজ সিংহ, কপিল মিশ্র এবং পঙ্কজ সিংহ। এদের মধ্যে প্রবেশ ও কপিলের বিরুদ্ধে কু-কথা বলার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। দু’জনই কট্টর মুসলিম-বিরোধী বলে পরিচিত। আম আদমি পার্টি থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া কপিলের বিরুদ্ধে দিল্লির গোষ্ঠী সংঘর্ষের সময়ে উস্কানিমূলক ‌বক্তব্য রাখার একাধিক অভিযোগ উঠেছিল। এ বারও মেরুকরণের হাওয়া তোলার জন্যই প্রবেশ ও কপিলকে মন্ত্রিত্বের পুরস্কার দেওয়া হয়েছে বলে আজ সরব হন আপ নেতা দিলীপ রাই। তাৎপর্যপূর্ণ হল আজ রামলীলা ময়দানে ছিলেন বহু মুসলিম। প্রবেশ-কপিলরা যখন মন্ত্রী হিসাবে নিরপেক্ষতার শপথ নিচ্ছেন, তখন তাঁদের অনেকের চোখে অবিশ্বাসের চাউনি। দিলশাদ গার্ডেন থেকে এসেছিলেন আবদুল সাত্তার। তাঁর বক্তব্য, ‘‘গত দশ বছরে আমাদের সমাজের কোনও উন্নয়ন হয়নি। তাই বিজেপিকে ভোট দিয়েছি।’’ খানিক পরে ফের নীরবতা ভেঙে বললেন, ‘‘এ ছাড়া কী বা করার আছে! বাঁচতে গেলে বিজেপি করতেই হবে।’’

সত্তর আসনের দিল্লি বিধানসভার মন্ত্রিসভায় সর্বাধিক সাত জনের স্থান হওয়া সম্ভব। মুখ্যমন্ত্রী নিজে মহিলা এবং বণিক সম্প্রদায়ের। মন্ত্রিসভায় অন্য জাতের প্রতিনিধিত্বও নিশ্চিত করতে চাওয়া হয়েছে। মন্ত্রীদের মধ্যে প্রথম শপথ নেওয়া প্রবেশ বর্মা জাঠ সমাজের। তাঁকে মন্ত্রী করে দিল্লি ও হরিয়ানার জাঠ সমাজকে বার্তা দেওয়া হল। শিখ ভোটের কথা মাথায় রেখে মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন শিখ নেতা মনজিন্দর সিংহ সিরসা। আশিস সুদ ক্ষত্রিয় সমাজের প্রতিনিধি। রবীন্দ্র ইন্দ্রজ সিংহ দলিত। সামনে বিহার নির্বাচন। দিল্লিতে থাকা বিহারের ভোটব্যাঙ্ক মাথায় রেখে দুই পূর্বাঞ্চলীয় নেতা পঙ্কজ সিংহ ও কপিল মিশ্রকে মন্ত্রিসভায় রাখা হল। কপিল উপরন্তু ব্রাহ্মণও।

আজ সকাল থেকেই দিল্লির সব রাস্তা ছিল কার্যত রামলীলা ময়দানমুখী। দীর্ঘ ২৭ বছর পরে ক্ষমতায় ফেরার সাক্ষী থাকতে দিল্লি ছাড়াও হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ থেকে সমর্থকেরা ভিড় জমান। প্রচুর সংখ্যায় ছিলেন মহিলারা। বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলির মধ্যে একমাত্র দিল্লিতেই শাসনভার কোনও মহিলাকে দিল বিজেপি। আজ বেলা বারোটার কিছু পরে রামলীলা ময়দানে আসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছিলেন জেপি নড্ডা, অমিত শাহেরা। ছিলেন অন্যান্য বিজেপি ও এনডিএ শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা। সাড়ে বারোটা নাগাদ শপথগ্রহণ শুরু হয়। মুখ্যমন্ত্রী-সহ সাত বিধায়ককে শপথবাক্য পাঠ করান উপরাজ্যপাল বিনয় কুমার সাক্সেনা।

সন্ধ্যায় মন্ত্রিসভার বৈঠকে বসেন রেখারা। পরে জানানো হয়, দ্রুত কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রকল্প আয়ুষ্মান ভারতে অংশ নিতে চলেছে দিল্লি। সেটা হলে কেবল পশ্চিমবঙ্গই ওই প্রকল্পের বাইরে থেকে যাবে। পাশাপাশি অরবিন্দ কেজরীওয়ালের ব্যয়বহুল বাড়ি (শিশমহল) প্রসঙ্গে সিএজি রিপোর্ট দ্রুত বিধানসভায় পেশ করার ব্যাপারে সম্মত হয় মন্ত্রিসভা। সূত্রের মতে, ভবিষ্যতে শিশমহলকে মিউজিয়াম হিসাবে গড়ে তোলার প্রস্তাবেও নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

আজ দিল্লির বাসুদেব ঘাটে যমুনা আরতি দেখতে যান রেখা-সহ মন্ত্রিসভার সব সদস্যরা। এ বারের প্রচারে যমুনার দূষণকে প্রধান হাতিয়ার করেছিল বিজেপি। কিন্তু আজ সেই দূষিত যমুনাতেই আরতি দেখতে যাওয়া অবশ্য একাধিক প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। নতুন সরকারের শপথের অপেক্ষা না করেই যমুনায় ড্রেজিং শুরু করে দেন উপরাজ্যপাল। প্রশ্ন উঠেছে, আপের সরকার থাকাকালীন ওই ড্রেজিং হল না কেন। তবে কি বিরোধীদের দাবি মতো বিজেপিকে সাহায্য করে দিতেই উন্নয়নমূলক কাজে পরিকল্পিত বাধা সৃষ্টি
করা হচ্ছিল?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

BJP Delhi

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy