Advertisement
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

বিরোধী চাপেও গাজায় নাক গলাচ্ছে না দিল্লি

গাজায় ইজরায়েলের লাগাতার আক্রমণের নিন্দা করে সংসদে প্রস্তাব নেওয়ার দাবিতে প্রায় সব বিরোধী দল উত্তাল হলেও, কেন্দ্র আজ সে সম্ভাবনা সরাসরি খারিজ করে দিয়েছে। কেন্দ্রের স্পষ্ট বক্তব্য, দেশের ঘরোয়া রাজনীতির স্বার্থ ভারতের বিদেশনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুর কথায়, “বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর পর্যায়ে রয়েছে। এর মধ্যে এমন কোনও পদক্ষেপ করা ঠিক নয় যার বিরূপ ফল হয়।”

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৪ ০২:৪৩
Share: Save:

গাজায় ইজরায়েলের লাগাতার আক্রমণের নিন্দা করে সংসদে প্রস্তাব নেওয়ার দাবিতে প্রায় সব বিরোধী দল উত্তাল হলেও, কেন্দ্র আজ সে সম্ভাবনা সরাসরি খারিজ করে দিয়েছে। কেন্দ্রের স্পষ্ট বক্তব্য, দেশের ঘরোয়া রাজনীতির স্বার্থ ভারতের বিদেশনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুর কথায়, “বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর পর্যায়ে রয়েছে। এর মধ্যে এমন কোনও পদক্ষেপ করা ঠিক নয় যার বিরূপ ফল হয়।”

পরে বেঙ্কাইয়া বলেন, “আমরা অবশ্যই সব দেশের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান চাই। কিন্তু দু’টি দেশের মধ্যে সংঘাতের ব্যাপারে ভারত একটি তৃতীয় দেশ হিসেবে কী ভাবে কোনও প্রস্তাব আনতে পারে? দেশের ঘরোয়া রাজনীতির স্বার্থ পূরণে এমনটা করা যায় না।” বেঙ্কাইয়ার এই মন্তব্যে বিরোধীরা অভিযোগ করেন, তিনি কংগ্রেস, সিপিএম, তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টির মতো দলগুলির মুসলিম-তোষণের নীতিকে কটাক্ষ করছেন।

আজ গোটা দিনই দফায় দফায় লোকসভা উত্তাল হয় গাজার ঘটনা নিয়ে। সরকারের অবস্থানের প্রতিবাদে কক্ষ ত্যাগ করেন কংগ্রেস, সিপিএম, পিডিপি এবং তৃণমূলের সাংসদরা। জিরো আওয়ারে বিষয়টি প্রথম তোলেন পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি। তিনি সংসদে মুলতুবি প্রস্তাবের জন্য নোটিস দেন। তাঁর বক্তব্য, ব্রিকস সম্মেলন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা এখন ব্রাজিলে। সেখানেই ভারতের উদ্যোগে প্রস্তাব নেওয়া হোক গাজায় একতরফা হামলার প্রতিবাদে। সরকার সংসদেও নিন্দা-প্রস্তাব গ্রহণ করুক। একই দাবিতে মুখর হয় অন্যান্য বিরোধী দলও। সিপিএমের মহম্মদ সেলিম বলেন, “এত দিন পশ্চিমী দেশগুলি প্যালেস্তাইনকে যে চোখে দেখে এসেছে, ভারত সরকারও এখন সে ভাবেই দেখছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক। তবে দক্ষিণপন্থী একটা সাম্প্রদায়িক দল তো এমন আচরণই করবে।”

বিরোধীদের তুমুল হট্টগোলে আধ ঘণ্টা মুলতুবি রাখতে হয় লোকসভা। পরে ফের অধিবেশন শুরু হলে কংগ্রেসের শশী তারুর, কেন্দ্রের অবস্থানকে ‘মর্মান্তিক ট্র্যাজেডি’ আখ্যা দেন। মুসলিম লিগ নেতা তথা প্রাক্তন বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ই আহমেদের কথায়, “ইজরায়েল যা করছে তা মানবাধিকারের চূড়ান্ত লঙ্ঘন।”

কূটনীতিকরা জানাচ্ছেন, প্রতিরক্ষা, কৃষি, জল-সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ইজরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ক্রমশ ঘনিষ্ঠ করার চেষ্টা করছে ভারত। মোদী ক্ষমতায় আসার পর আরও গভীর করার চেষ্টা চলছে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ আনার যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে, ইজরায়েল থেকে বড় বিনিয়োগ আশা করছে সাউথ ব্লক। এমন পরিস্থিতিতে এনডিএ সরকার এমন কিছু করতে নারাজ যাতে ইজরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কে কোনও বিরূপ আঁচ পড়ে।

এখানকার ইজরায়েলি দূতাবাসের মাধ্যমে সে দেশের সঙ্গে নিরন্তর যোগাযোগ রাখছে নয়াদিল্লি। এই সংঘর্ষের মধ্যে যে সব ভারতীয় আটকে রয়েছেন, তাঁদের উদ্ধার এবং নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়েও কথা হয়েছে। ইজরায়েলি দূতাবাস জানাচ্ছে, হাতে গোনা যে ক’জন ভারতীয় সংঘর্ষের এলাকায় রয়েছেন, তাঁদের সব রকম নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। ইচ্ছা করলেই তাঁরা গাজা ছাড়তে পারেন। ইজরায়েলের ডিমোনা অঞ্চলে প্রায় ১ লক্ষ ভারতীয় বংশোদ্ভূত ইজরায়েলি থাকেন। এ ছাড়া প্রায় সাড়ে সাত হাজার ভারতীয় রয়েছেন সে দেশে। প্রত্যেকেরই দেখভাল করা হচ্ছে।

গাজায় হামলার প্রতিবাদ হচ্ছে সংসদের বাইরেও। কাশ্মীরি ব্যবসায়ীরা ইজরায়েলি পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছেন। সব স্কুল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১৭ দিন বন্ধ রাখা হয়েছে জম্মু-কাশ্মীরে। গাজায় ইজরায়েলি হানা বন্ধের দাবিতে পশ্চিমবঙ্গে পথে নামছে রাজ্য বামফ্রন্ট। পরশু তারা কলকাতায় মিছিল করবে। ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু আজ বলেন, “গাজায় মৃত্যুমিছিল বন্ধ করতে ভারত সরকারের সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া ও আন্তর্জাতিক স্তরে চাপ সৃষ্টি করা উচিত।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE