চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন। ন’মাস পরে বৃহস্পতিবার তিনিই আবার বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন!
বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ, আরএসএসের তাত্ত্বিক নেতা রাকেশ সিন্হার এই একই বছরে দু’বার দু’রাজ্যে ভোট দেওয়া নিয়ে বিরোধীরা নির্বাচন কমিশন তথা বিজেপির বিরুদ্ধে ‘ভোট চুরি’-র নতুন অস্ত্র পেয়ে গেল। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠল ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর-এর কার্যকারিতা নিয়েও। প্রশ্ন উঠেছে, কেউ চাইলেই কি যখন যে রাজ্যে নির্বাচন হচ্ছে, সেখানে ভোটার তালিকায় নাম তুলে ভোট দিতে পারেন? নির্বাচন কমিশন এর কোনও উত্তর দেয়নি।
শুধু রাকেশ সিনহা নন। দিল্লির রাজ্য বিজেপির পূর্বাঞ্চল মোর্চার প্রধান সন্তোষ ওঝা এবং দিল্লির বিজেপি নেতা নগেন্দ্র কুমার গত কাল বিহারে ভোট দিয়েছেন। দু’জনেই গত ফেব্রুয়ারিতে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনেও ভোট দিয়েছিলেন। রাকেশ জানিয়েছেন, তিনি আইনসঙ্গত ভাবেই দিল্লির ভোটার তালিকা থেকে নাম কাটিয়ে বিহারের ভোটার তালিকায় নাম তুলেছেন। কারণ বিহার তাঁর স্থায়ী ঠিকানা। আম আদমি পার্টির নেতা সৌরভ ভরদ্বাজের প্রশ্ন, রাকেশ দিল্লির একটি কলেজে শিক্ষকতা করেন। তাঁর স্ত্রী এখনও দিল্লির ভোটার। রাকেশ হঠাৎ বিহারের ভোটার হয়ে গেলেন কেন? অথচ তিনি দিল্লির বাসিন্দা। তা ছাড়া গত সেপ্টেম্বরেও তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সংগঠনের নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন।
কেন্দ্রে এনডিএ-র শরিক এলজেপি-র সমস্তিপুরের সাংসদ সম্ভাবী চৌধরিও প্রশ্নের মুখে। গত কাল তিনি ভোট দিয়ে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সামনে ছবি তোলাতে গেলে দেখা যায়, তাঁর দু’হাতের আঙুলেই কালির দাগ! তিনি দু’বার ভোট দিয়েছেন কি না, সে প্রশ্ন উঠেছে স্বাভাবিক ভাবেই।
দু’দিন আগেই হরিয়ানায় ভোটার তালিকায় ২৫ লক্ষ ভুয়ো ভোটার নিয়ে অভিযোগ তুলে রাহুল গান্ধী দেখিয়েছি লেন, উত্তরপ্রদেশে ভোট দেওয়া বিজেপি নেতারা হরিয়ানায় ভোটার তালিকায় নাম তুলে ফেলেছিলেন। আজ লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী বলেন, ‘‘আমি হরিয়ানায় ভোট চুরি নিয়ে যে অভিযোগ তুলেছিলাম, তা থেকে সংবাদমাধ্যম ছোটখাটো কিছু উদাহরণ তুলে ধরছে। যেমন ব্রাজ়িলের মহিলার হরিয়ানায় ভোটার তালিকায় ছবি। বৃহত্তর বিষয় হল, নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ, নির্বাচন কমিশন আমাদের সংবিধানের উপরে হামলা করছে। সংবিধান বলে, এক ব্যক্তি, এক ভোট। হরিয়ানায় প্রমাণিত, এক ব্যক্তির অনেক ভোট। বিহারেও তাই করার চেষ্টা হচ্ছে। এর আগে মহারাষ্ট্র, ছত্তীসগঢ়, হরিয়ানা, গুজরাতে একই কাণ্ড হয়েছে।’’
লোকসভা নির্বাচনের পরে মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিপুল ভোটারের নাম ভোটার তালিকায় যোগ হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। বিরোধীরা সে সময় অভিযোগ তুলেছিলেন, ওই সব ভোটারেরা এর পর হরিয়ানা, তার পরে বিহারে গিয়ে নাম তুলবেন। বিরোধীদের প্রশ্ন, রাকেশ সিন্হার মতো নেতারা কি সেই পরিকল্পনারই অংশ? রাহুল গান্ধী বলেন, ‘‘আমাদের কাছে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। আমরা দেখিয়ে দেব, নরেন্দ্র মোদী ভোট চুরি করে দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। বিজেপি নির্বাচন চুরি করছে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)