সরাসরি কথাবার্তা কার্যত বন্ধ। শুধু কবিতায় ভাবের আদানপ্রদান।
বিহারের প্রথম দফার ভোটগ্রহণের জন্য প্রার্থীদের মনোনয়ন জমার শেষ দিন ১৭ অক্টোবর। তার মাত্র তিন দিন বাকি থাকলেও বিহারে বিরোধীদের ‘মহাগঠবন্ধন’ আসন বণ্টন নিয়ে রফায় পৌঁছতে পারল না। উল্টে মঙ্গলবার সারাদিন কংগ্রেস ও আরজেডি-র মধ্যে কথাবার্তা কার্যত বন্ধ রইল। আরজেডি ও কংগ্রেস নেতারা সমাজমাধ্যমে নানা রকম কবিতা লিখে একে অন্যকে জোট রক্ষার প্রয়োজনের কথা মনে করালেন।
সূত্রের খবর, মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, তাতে কংগ্রেস, আরজেডি, বাম, মুকেশ সাহনির ভিআইপি-র মতো বিরোধী জোটের শরিক দলের মধ্যে আসন বণ্টন নিয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগেই কংগ্রেস, আরজেডি নিজেদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা শুরু করে দিতে পারে। কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটি মল্লিকার্জুন খড়্গে, রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রার্থীতালিকা নিয়ে আলোচনায় বসে পড়েছে। যে সব আসন নিয়ে কোনও বিবাদ নেই, মূলত সেই সব আসনেই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে দেওয়া হবে।
মঙ্গলবার সিপিআই-এমএল লিবারেশনের একটি ১৮ জনের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ্যে এসে গিয়েছিল। পরে তা প্রত্যাহার করে দলের তরফে জানানো হয়েছে, ভুল করে ওই তালিকা প্রকাশ্যে এসে গিয়েছিল। লিবারেশন সূত্রের ইঙ্গিত, দল গত বিধানসভা নির্বাচনে ১৯টি আসনে লড়েছিল। সেই সাফল্যের ভিত্তিতে এ বার লিবারেশন আরও অনেক বেশি আসনে লড়তে বদ্ধপরিকর। শেষ পর্যন্ত কিছু আসনে বিরোধী জোটের মধ্যে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ লড়াইয়ের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিরোধী শিবিরের নেতারা।
তেজস্বী যাদব সোমবার দিল্লিতে কংগ্রেসের সাংগঠনিক সম্পাদক কে সি বেণুগোপাল ও বিহারের নেতাদের সঙ্গে দু’ঘণ্টা বৈঠক করেছিলেন। কিন্তু সেখানে ঐকমত্য হয়নি।
কংগ্রেসের তরফে বিহারের ভারপ্রাপ্ত নেতা কৃষ্ণ অল্লাভুরু জোরালো দর কষাকষি করছেন। তাঁর দাবি, কংগ্রেসকে শুধু গোটা ষাটেক আসন দিলে হবে না। অন্তত খান চল্লিশেক জেতার মতো আসন দিতে হবে। এর পরে রাহুল গান্ধী বা মল্লিকার্জুন খড়্গের সঙ্গে দেখা না করেই তেজস্বী পটনায় ফিরে যান।
সূত্রের খবর, মঙ্গলবার সারাদিন কংগ্রেস ও আরজেডি নেতৃত্বের মধ্যে কোনও কথা হয়নি। আরজেডি সাংসদ মনোজ কুমার ঝা এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, ‘রহিমন ধাগা প্রেম কা, মত তোড়ো ছিটকায়, টুটে সে ফের না মিলে, মিলে গাঁঠ পরিজায়’। অর্থাৎ, ভালবাসার সুতো ছেঁড়া উচিত নয়। ছিঁড়লে আর মিলবে না। মনোজের মতে, এই কথাগুলি সবসময়ের জন্য প্রাসঙ্গিক। জবাবে কংগ্রেসের সাংসদ ইমরান প্রতাপগড়ি লিখেছেন, ‘পানি আঁখ মে ভর কর লায়া জা সকতা হ্যায়, অব ভি জলতা শহর বাচায়া জা সকতা হ্যায়।’ অর্থাৎ, এখনও সময় রয়েছে জোট বাঁচানোর।
সূত্রের খবর, কংগ্রেস ও আরজেডি-র মধ্যে যে সব আসনে ঐকমত্য হয়ে গিয়েছে, সেই সব আসনে দুই দলই প্রার্থী ঘোষণা করে দেবে। দুই দলেরই বক্তব্য, কে কতগুলি আসনে লড়বে, তার থেকেও বেশ কিছু আসনে জোটের মধ্যে কে কোন আসনে লড়বে, তা নিয়ে বিবাদ রয়েছে। যেমন, আগের বার বামেরা লড়েছিল, এমন কিছু আসন কংগ্রেস চাইছে বলে আরজেডি-র আপত্তি। আবার কংগ্রেসের ক্ষোভ, আরজেডি কংগ্রেসকে মুকেশ সাহনির বিকাশশীল ইনসান পার্টিকে নিজেদের ভাগের আসন ছেড়ে দিতে বলছে।
কংগ্রেসের একটি সূত্রের দাবি, মুকেশ সাহনি সোমবার দিল্লিতে এসে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রাহুল সময় দেননি। রাহুল মঙ্গলবার চণ্ডীগড় থেকে শিমলা চলে যান। সেখান থেকেইভিডিয়ো কনফারেন্সে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির প্রার্থী তালিকা নিয়ে বৈঠকে যোগ দেন। কংগ্রেস আগেই ২৫টির মতো আসনে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করে ফেলেছিল। কমিটির বৈঠকে ৫০টির মতো আসনের প্রার্থী তালিকা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। বৈঠক শেষে জোটের মধ্যে বিবাদ নিয়ে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের দাবি, ‘‘সবঠিক হ্যায়।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)