Advertisement
E-Paper

নাটক করছেন গগৈ, খোঁচা বিরোধীদের

কেউ বলছেন নাটক। কারও মতে, ঘোরতর বেআইনি সিদ্ধান্ত! ২০০৫ সাল থেকে চলে আসা জাতীয় নাগরিক পঞ্জীর ভিত্তিবর্ষ নিয়ে আচমকা রাজ্য সরকারের মত বদলের পিছনে ভোট-রাজনীতির ছায়া দেখছে বিরোধী শিবির।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৫ ০৩:৪৩

কেউ বলছেন নাটক। কারও মতে, ঘোরতর বেআইনি সিদ্ধান্ত!

২০০৫ সাল থেকে চলে আসা জাতীয় নাগরিক পঞ্জীর ভিত্তিবর্ষ নিয়ে আচমকা রাজ্য সরকারের মত বদলের পিছনে ভোট-রাজনীতির ছায়া দেখছে বিরোধী শিবির। বিজেপি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি প্রশ্ন তুলেছে— যদি মুখ্যমন্ত্রী সর্বশেষ ভোটার তালিকাকেই নাগরিকপঞ্জীর ভিত্তি করার পক্ষে ছিলেন, তবে কোটি-কোটি টাকা খরচ করে ১৯৫১-১৯৭১ সালকে নাগরিক পঞ্জীর ভিত্তিবর্ষ হিসেবে ঘোষণা করে বিজ্ঞাপন দেওয়া, সেবাকেন্দ্র তৈরি, ফর্ম বিলি করার কী প্রয়োজন ছিল?

ইউপিএ আমলে ২০০৫ সালের ৫ মে ত্রিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে ঠিক হয়, ১৯৫১ সালের নাগরিক পঞ্জীতে নাম থাকা ব্যক্তি ও তার পর থেকে ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ তারিখের আগে আসা সকলে ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের নাম এনআরসি-র (জাতীয় নাগরিক পঞ্জী) অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ২০১১ সালে ছয়গাঁও ও বরপেটায় এনআরসি তালিকা নবীকরণের কাজ শুরু হওয়ার পর প্রতিবাদ-সংঘর্ষের জেরে তা সাময়িক ভাবে বন্ধ করা হয়। চলতি বছর ১ জুন ফের ফর্ম বিলি শুরু হয়। কেন্দ্র সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছে, ২০১৬ সালের মধ্যে এনআরসির কাজ শেষ করা হবে। এই কাজে খরচ ধরা হয়েছে ২৮৮ কোটি টাকা।

কিন্তু, যে ভিত্তিবর্ষ মেনে নাগরিক পঞ্জীর কাজ হচ্ছিল, আচমকা তা বদলের মত জানালেন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। গত কাল তিনি জানান, নিয়মমতে ভোটার তালিকায় নাম থাকার অর্থই হল ভারতের নাগরিক হওয়া। তাই, সর্বশেষ ভোটার তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে তাঁদের সকলের নাম যেন নাগরিক পঞ্জীতে তোলা হয়। সে জন্য কেন্দ্রকে চিঠি দেবে রাজ্য সরকার।

বর্তমান নিয়মে ভোটার তালিকায় নাম থাকলেও নাগরিক পঞ্জীতে নাম তোলা যায় না। কারণ, প্রতি নাগরিক ও তাঁর পরিবারকে ‘লিগ্যাসি ডেটা’ দিয়ে প্রমাণ করতে হচ্ছে যে তাঁদের পূর্বপুরুষ ১৯৫১ সালের আগে থেকেই অসমে ছিলেন। কাজের তত্ত্বাবধানে সুপ্রিম কোর্ট থাকলেও এনআরসির প্রাথমিক নিয়ম-কানুন কী হবে তা রাজ্য সরকারই ঠিক করেছিল। রাজ্যের সুপারিশেই কেন্দ্র এনআরসির নিয়মাবলী নির্ধারণ করে।

অসম গণ পরিষদ গগৈয়ের সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছে। দলের কার্যবাহী সভাপতি অতুল বরা বলেন, ‘‘গগৈ রাজনৈতিক স্বার্থে অসম-বিরোধী কাজ করছেন। তিনি ২০০৫ সালের ত্রিপাক্ষিক চুক্তি মানছেন না। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে ১৯৭১ সালকে ভিত্তিবর্ষ ধরে নাগরিক পঞ্জী উন্নীতকরণ করা হচ্ছে। তাতেও বাধা দিচ্ছে কংগ্রেস সরকার।’’

অসম জাতীয়তাবাদী যুব ছাত্র পরিষদের মুখ্য আহ্বায়ক অরূপজ্যোতি কলিতার মতে, ‘‘গগৈয়ের মনে যদি এই ছিল তবে এতদিন ধরে, এত টাকা খরচ করে এনআরসি প্রক্রিয়া চালানো হল কেন, কেন এখনও ফর্ম পূরণ করানো হচ্ছে?’’

আসুর সভাপতি দীপাঙ্ক নাথ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে নতুন জটিলতা তৈরি করছেন। নাগরিকত্বের সংজ্ঞা ও যোগ্যতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে কাজ চলছে। তার মধ্যে কেন ২০১৪ সালের ভোটার তালিকার বিষয়টি ঢোকানো হচ্ছে?’’

বরাক উপত্যকার বিজেপি বিধায়ক দিলীপকুমার পাল বলেন, ‘‘নাগরিক পঞ্জী উন্নীত করার সদিচ্ছা কংগ্রেসের থাকলে নিয়ম ও ফর্ম এত জটিল করা হত না।’’ রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শিলাদিত্য দেব বলেন, ‘‘এনআরসি প্রক্রিয়া প্রথম থেকেই ত্রুটিপূর্ণ। গগৈ বিচারাধীন একটি বিষয় নিয়ে সবার মধ্যে বিভাজন করতে চাইছেন।’’ বিজেপির বরাকের মুখপাত্র অবধেশ সিংহ জানান, ৩০ জুন করিমগঞ্জে আসছেন রাজনাথ সিংহ. তাঁর সঙ্গে বরাকের বিজেপি নেতৃবৃ্ন্দ এ নিয়ে কথা বলবেন.

শিলচরের কংগ্রেস সাংসদ সুস্মিতা দেব মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও বলেন, ‘‘এই প্রস্তাব কেন্দ্রকে দেওয়াই যথেষ্ট নয়। রাজ্য সরকারের নিজস্ব হলফনামা সুপ্রিম কোর্টে দেওয়া উচিত। সুপ্রিম কোর্ট তা মেনে নিলে এনআরসি নিয়ে জটিলতা বন্ধ হবে।’’

বরাকের নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমিতির প্রধান সম্পাদক সাধন পুরকায়স্থ বলেন, ‘‘বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতিমাত্র।’’ বরাক উপত্যকার নাগরিকত্ব সুরক্ষা সংগ্রাম কমিটি আহ্বায়ক প্রদীপকুমার দেব বলেন, ‘‘কংগ্রেস সরকার দুমুখো নীতি নিয়েছে. এনআরসির নিয়মাবলী গগৈয়ের নেতৃত্বেই তৈরি হয়েছিল। এ বার রাজনৈতিক স্বার্থে গগৈ ২০১৪ সালের ভোটার তালিকাকে আঁকড়ে ধরে ভোটব্যাঙ্ক বাঁচাতে চাইছেন।’’

tarun gogoi dramatic u turn opposition protest nrc assam nrc deabte national registration of citizen
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy