Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

তিহাড় থেকে বেরিয়েই সনিয়ার কাছে চিদম্বরম

সকালেই সুপ্রিম কোর্ট আইএনএক্স মামলায় শর্তসাপেক্ষে জামিন দেয় চিদম্বরমকে। জেল থেকে বেরোতে গড়িয়ে যায় রাত আটটা।

তিহাড় জেল থেকে বেরিয়ে বাড়ি পৌঁছলেন পি চিদাম্বরম। বুধবার। ছবি: পিটিআই।

তিহাড় জেল থেকে বেরিয়ে বাড়ি পৌঁছলেন পি চিদাম্বরম। বুধবার। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:৪৫
Share: Save:

রাতের বেলায় বাড়ির পাঁচিল টপকে তাঁকে গ্রেফতার করতে গিয়েছিল সিবিআই। অগস্ট মাসের শেষ দিককার ঘটনা সেটা। ১০৬ দিন পর আজ ফের রাতের বেলাই দিল্লির তিহাড় জেল থেকে ছাড়া পেলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম।

সকালেই সুপ্রিম কোর্ট আইএনএক্স মামলায় শর্তসাপেক্ষে জামিন দেয় চিদম্বরমকে। জেল থেকে বেরোতে গড়িয়ে যায় রাত আটটা। সনিয়া গাঁধীর নির্দেশে তিহাড়ের সামনে তখন কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের থিকথিকে ভিড়। আদালতের নির্দেশে মামলা নিয়ে বলা বারণ। সে কথা মনে করিয়ে দিয়েও চিদম্বরম বললেন, ‘‘মামলা নিয়ে কিছু বলতে পারব না। কিন্তু বিচারের আগে ১০৬ দিনের জেলবাসের মধ্যে আমার বিরুদ্ধে একটিও চার্জ গঠন করে ওঠা যায়নি।’’ রাতেই চিদম্বরম দেখা করেন সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে। পরে বেরিয়ে বলেন, মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে পেরে ভাল লাগছে। জানা গিয়েছে, কাল তিনি সংসদে যাবেন। অর্থনীতির হাল নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকও করবেন।

কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, এক সময় অমিত শাহও ৯০ দিনের বেশি জেলে ছিলেন। সেই সময় কেন্দ্রে ক্ষমতায় ছিলেন চিদম্বরম। এখন ১০০ দিনের বেশি জেলে রাখা হল চিদম্বরমকে, যখন অমিত শাহ ক্ষমতায়। এটি নিছক রাজনৈতিক বদলা ছাড়া আর কিছু নয়। চিদম্বরমের জামিনের পর রাহুল গাঁধী টুইট করেন: ‘‘প্রতিশোধ নিতেই চিদম্বরমের ১০৬ দিন জেল। সুপ্রিম কোর্ট জামিন দেওয়ায় আমি খুশি। ঠিকমতো বিচার হলে তিনি নির্দোষ প্রমাণ হবেন বলেই আমার বিশ্বাস।’’ কংগ্রেসের নেতাদের মতে, ১০৬ দিন জেলে থেকেও ৭৪ বছরের চিদম্বরম ভেঙে পড়েননি। বরং নিয়মিত বিভিন্ন বিষয়ে টুইট করে মতামত দিয়েছেন। তাঁর মনোবল জিইয়ে রাখতে দফায় দফায় সনিয়া গাঁধী, রাহুল-প্রিয়ঙ্কা-সহ বড় নেতারা জেলে দেখা করতে গিয়েছেন।

কী শর্তে জামিন?

• ২ লক্ষ টাকার বন্ড
• সিবিআইয়ের কাছে পাসপোর্ট গচ্ছিত
• আদালতের অনুমতি ছাড়া বিদেশ যাত্রা নিষিদ্ধ
• তদন্তের প্রয়োজনে জেরার ডাক পড়লে হাজিরা
• তথ্যপ্রমাণ নষ্ট নয়, ভয় দেখাবেন না সাক্ষীদের, প্রভাবিতও করবেন না
• এই মামলায় নিজের ও অন্য অভিযুক্তদের ভূমিকা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলবেন না

নিতিন গডকড়ীর বক্তব্য, ‘‘বিজেপি কোনও দিনই প্রতিশোধের মনোভাব নিয়ে চলেনি। চিদম্বরম শুধু জামিনই পেয়েছেন, নির্দোষ প্রমাণ হননি।’’ বিজেপির তরফে এ-ও বলা হচ্ছে, চিদম্বরম এত দিনে সনিয়া-রাহুলের দলে যোগ দিলেন! সনিয়া-রাহুলও ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় জামিন পেয়েছেন!

আরও পড়ুন: যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলায় তৈরি সেনাবাহিনী, চিন প্রশ্নে সংসদে জবাব রাজনাথের

অগস্টে গ্রেফতার হওয়ার পরে গোটা সেপ্টেম্বর মাস জেলের খাবারই খেতে হয়েছিল চিদম্বরমকে। গত ৩ অক্টোবর আদালতে বাড়ির খাবারের অনুমতি চান তিনি। আইনজীবীদের যুক্তি ছিল, চিদম্বরম পেটের সমস্যায় ভুগছেন। তাঁর প্রায় চার কিলোগ্রাম ওজন কমেছে। আদালত তাঁকে বাড়ির খাবার খাওয়ার অনুমতি দেয়। আইনজীবীদের বক্তব্য, তিহাড় জেলে তাঁর সেলে কোনও বালিশ ছিল না। কোনও চেয়ারও ছিল না। চিদম্বরমের পিঠে ব্যথা শুরু হয়। এর আগে দিল্লি হাইকোর্ট চিদম্বরমের জামিনের আর্জি খারিজ করে দিয়েছিল। আজ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আর ভানুমতীর বেঞ্চ সেই রায় খারিজ করে চিদম্বরমকে জামিন দিলেও একাধিক শর্ত রেখেছে। তার মধ্যে অন্যতম হল, তিনি নিম্ন আদালতের অনুমতি ছাড়া বিদেশে যেতে পারবেন না। তাঁর পাসপোর্ট সিবিআইয়ের কাছে জমা থাকবে। আইএনএক্স মামলায় তাঁর বা অন্য অভিযুক্তদের ভূমিকা নিয়ে তিনি সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার বা বিবৃতি দিতে পারবেন না।

ইডি দিল্লি হাইকোর্টে মুখ-বন্ধ খামে চিদম্বরমের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা করেছিল। চিদম্বরমের জামিন খারিজ করতে গিয়ে সেই খামের তথ্যকেই ভিত্তি করেছিল দিল্লি হাইকোর্ট। আজ সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, এই মুখ-বন্ধ খাম দেওয়ার অভ্যাস নিরপেক্ষ বিচারের পরিপন্থী। কারণ সেই সব নথি অভিযুক্তকে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে অভিযুক্ত ওই সব অভিযোগের জবাব দেওয়ার সুযোগও পাচ্ছেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE