প্রত্যাশামতোই ২৬/১১ মুম্বই হামলার প্রধান চক্রী জাকিউর রহমান লকভি মুক্তি পেলেন আজ। আর সেই খবর ছড়াতেই ভারত-সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা।
যদিও লকভি মুক্তির দায় আজ প্রকারান্তরে ভারতের উপরেই চাপিয়েছে পাকিস্তান। পাক বিদেশ মন্ত্রকের এক মুখপাত্রের বক্তব্য, মুম্বই সন্ত্রাসের বিচারে সহযোগিতার প্রশ্নে ভারত অতিরিক্ত দেরি করেছে। যার ফলে লকভির বিরুদ্ধে মামলা দুর্বল হয়ে পড়েছে।
গত কালই এই মুক্তির নির্দেশের খবর পাওয়ামাত্র কড়া ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল নয়াদিল্লি। আজও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এই খবর শুনে বলেছেন, ‘‘ভারত সব সময়েই পাকিস্তানের সঙ্গে কথা বলতে চায়। কিন্তু এই পদক্ষেপ দুর্ভাগ্যজনক এবং হতাশাব্যঞ্জক।’’ এ দিন পাকিস্তানে ভারতের হাই কমিশনার টি সি এ রাঘবন দেখা করেন পাক বিদেশসচিব আইয়াজ আহমেদ চৌধরির সঙ্গে। লকভির মুক্তি নিয়ে দিল্লির অসন্তোষ ব্যাখ্যা করে ভারতের তরফে তাঁকে জানানো হয়েছে, ‘‘২৬/১১ মুম্বই হামলায় আক্রান্তদের পরিবারের প্রতি এটা চূড়ান্ত অপমান।’’ বিদেশ মন্ত্রকের এক বিবৃতিতে এই সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গটি তুলে বলা হয়েছে, জঙ্গি প্রশ্নে পাকিস্তানের দ্বিচারিতা এই ঘটনায় স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে সারা দুনিয়ার কাছে।’’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তা বলেছেন, এত দিনের মধ্যে দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটাই সব চেয়ে নেতিবাচক দিক।
আজ ফ্রান্সে আইনসভার সদস্যদের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেখা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর কথা হয়েছে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোঁয়া ওলাঁদের সঙ্গেও। সেখানে উঠেছে লকভি-প্রসঙ্গ। ওলাঁদ বলেছেন, ‘‘এটা খুবই দুঃখজনক।’’ ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরুদ্দিন প্যারিসে সাংবাদিকদের জানান, ‘‘ফরাসি প্রতিনিধি দলের এক জন বলেছেন, ‘পাকিস্তানে লকভির মুক্তি ভারত বা বাকি বিশ্বের জন্য একেবারেই ভাল খবর নয়। ফ্রান্স এ ব্যাপারে ভারতের পাশে রয়েছে।’’ বিদেশের সমর্থন পেলেও বিরোধী দল কংগ্রেস এই বিষয়ে বিজেপি সরকারের সমালোচনায় নেমে পড়েছে। কংগ্রেস নেতা মণীশ তিওয়ারি বলেছেন, ‘‘এটা যে এনডিএ সরকারের ব্যর্থতা, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। জম্মু ও কাশ্মীরে বিজেপি-পিডিপি সরকার যখন মাসারাত আলমের মতো ব্যক্তিকে মুক্তি দেয়, তখন সীমান্তপারে এই বার্তাই যায় যে, আমরা সন্ত্রাস প্রশ্নে কঠোর নই। তাই পাকিস্তানও লকভিকে মুক্তি দেয়।’’
আজ লাহৌর হাইকোর্টের নির্দেশ হাতে পাওয়ার পরে মুম্বই সন্ত্রাসের মূল চক্রীকে ছেড়ে দেন রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেল কর্তৃপক্ষ। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে গ্রেফতার করা হয়েছিল লকভিকে। লস্কর ই তইবা এবং জামাত উদ দাওয়া প্রধান হাফিজ সইদের ঘনিষ্ঠ ৫৫ বছর বয়সি এই নেতার জন্য জেলের বাইরেই অপেক্ষা করছিল জামাত সমর্থকরা। দুপুর একটার মধ্যে সেখানে পৌঁছে গিয়েছিল চার-পাঁচটি গাড়ি।
লকভি জেল থেকে বেরিয়েই ইসলামাবাদে নিজের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। লকভির আইনজীবী রাজা রিজওয়ান আব্বাসি বলেছেন, ‘‘তাঁকে আটক রাখার উপরে স্থগিতাদেশ নিয়ে লাহৌর হাইকোর্টের নির্দেশের পরে আমার মক্কেলকে ছেড়ে দেওয়া ছাড়া সরকারের কাছে আর কোনও আইনি উপায় ছিল না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy