Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পাক পরমাণু আস্ফালন নতুন নয়, তৈরি আছে দিল্লি: বিদেশ মন্ত্রক

মার্কিন কংগ্রেসের স্বশাসিত শাখা ‘কংগ্রেসনাল রিসার্চ সার্ভিস (সিআরএস)-এর সাম্প্রতিক রিপোর্ট অপ্রত্যাশিত নয় ভারতের কাছে। কিন্তু নিঃসন্দেহে তা কিছুটা রক্তচাপ বাড়িয়েছে সাউথ ব্লকের। পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্র ভান্ডার নিয়ে ২৮ পাতার যে রিপোর্ট মার্কিন কংগ্রেসের জমা পড়েছে তাতে ইসলামাবাদের সমরসজ্জা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সিআরএস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৬ ২০:০২
Share: Save:

মার্কিন কংগ্রেসের স্বশাসিত শাখা ‘কংগ্রেসনাল রিসার্চ সার্ভিস (সিআরএস)-এর সাম্প্রতিক রিপোর্ট অপ্রত্যাশিত নয় ভারতের কাছে। কিন্তু নিঃসন্দেহে তা কিছুটা রক্তচাপ বাড়িয়েছে সাউথ ব্লকের। পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্র ভান্ডার নিয়ে ২৮ পাতার যে রিপোর্ট মার্কিন কংগ্রেসের জমা পড়েছে তাতে ইসলামাবাদের সমরসজ্জা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সিআরএস। তাতে বলা হয়েছে সে দেশের ১৩০টি পরমাণু বোমার সবকটি তাক করা রয়েছে ভারতের দিকে। ইসলামাবাদের নাকি আশঙ্কা, নয়াদিল্লি যে কোনও সময় সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে। তাই পাল্টা নিশানাতে ভারতকে রাখা হয়েছে। পাকিস্তানের এই ‘ফুল স্পেকট্রাম ডেটারেন্স’ তত্ত্ব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে রিপোর্টে।

প্রকাশ্যে অবশ্য উদ্বেগ দেখাচ্ছে না নয়াদিল্লি। বিদেশমন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, তিনি জানিয়েছেন, ‘‘এই রিপোর্ট অন্তত আমাদের কাছে নতুন কিছু নয়। ভারতের নিরাপত্তা সুরক্ষিত করতে সরকার প্রতিশ্রতিবদ্ধ।’’ সূত্রের খবর, এ ব্যাপারে ভারত দীর্ঘদিন ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই মার্কিন কংগ্রেসেই পেশ হওয়া মাস তিনেকের পুরনো একটি রিপোর্ট বলছে, পরমাণু অস্ত্রের যথেষ্ট রসদ ভারতের ভাঁড়ারে মজুদ রয়েছে। যে প্লুটোনিয়াম এবং ইউরেনিয়াম ভারতের রয়েছে তার সত্তর শতাংশই যে কোনও সময় অস্ত্র হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারে।

আরও পড়ুন:

১৩০ পাক পরমাণু বোমা ভারতের দিকে তাক করা! মার্কিন রিপোর্টে চাঞ্চল্য

এস-৩০০ মিসাইল কোথায় মোতায়েন করল ভারত? চিন্তায় পাকিস্তান

ঘটনা হল, এই মুহূর্তে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্কে তিক্ততার পারদ কিছুটা কমেছে। পঠানকোট কান্ডের পর দু’দেশ ঐক্যবদ্ধভাবে তদন্ত চালানোর চেষ্টা করছে। ভারত-বিরোধী পাক জঙ্গি ডেরাগুলির উপরে কিছুটা হলেও অভিযান শুরু করেছে নওয়াজ শরিফের সরকার। আজকেও এ ব্যাপারে বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ জানিয়েছেন, ‘‘দু’দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পারষ্পরিক যোগাযোগের মধ্যে রয়েছেন। বিদেশসচিবও যোগাযোগ রাখছেন পাক বিদেশসচিবের সঙ্গে।’’ কিন্তু কূটনৈতিক শিবিরের মতে, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে এমনই নাটকীয় ওঠাপড়ার মধ্যে দিয়ে চলে যে আজকের সাময়িক উষ্ণতা দেখে আগামি কাল‌ের নিরাপত্তায় আলগা দেওয়া কখনই সম্ভব হয় না। এই প্রসঙ্গে এক বছর আগে খোদ পেন্টাগনের দেওয়া রিপোর্টটিকেও মাথায় রাখতে চাইছে নয়াদিল্লি। সেই রিপোর্টে পরমাণু প্রসঙ্গ না থাকলেও, স্পষ্ট বলা হয়েছিল, আফগানিস্তানে প্রতিপত্তি খোয়ানোর বদলা ও ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে ওঠা ভারতীয় সেনার সঙ্গে টক্কর নিতেই বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীকে বিভিন্ন সময়ে ব্যবহার করে ছায়াযুদ্ধ চালাচ্ছে পাকিস্তান।

সম্প্রতি ভারতের কাছে রিপোর্ট এসেছে যে চিনের সহযোগিতায় করাচিতে দু’টি নতুন পরমাণু চুল্লি বসাচ্ছে পাকিস্তান। মূলত পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদনই করাচির ওই নতুন দু’টি চুল্লির উদ্দেশ্য হলেও বিদ্যুতের পাশাপাশি অস্ত্র বানানোর প্রক্রিয়া বরাবর পাকিস্তান চালিয়ে এসেছে। ভারতের অভিযোগ, চুল্লিতে বাড়তি জ্বালানি ব্যবহার করে তা বোমা তৈরির জন্য সরিয়ে রেখে দেয় ইসলামাবাদ। তারা নিউক্লিয়ার সাপ্লাই গ্রুপ বা এনএসজি-র সদস্য না হওয়ার জন্য পাক চুল্লিগুলিতে এখনও কোনও আন্তর্জাতিক নজরদারির ব্যবস্থা নেই। তা ছাড়া এখনও পর্যন্ত পরমাণু অস্ত্র প্রসার রোধ চুক্তিতে সই না করার জন্য, গোপনে তারা অবাধে পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে।

এই ধরণের সব রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতেই ভারতও গোপনে প্রস্তুতি নিচ্ছে। পরমাণু অস্ত্র প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি ৪০ হাজার কোটি টাকা মূল্যের ক্ষেপনাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা কেনার বিষয়ে সম্প্রতি ছাড়পত্র দিয়েছে মন্ত্রিসভা। প্রতিরক্ষাসূত্রের খবর, ইতিমধিযেই আর্ন্তদেশীয় দূর নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপনাস্ত্র, জাহাজ থেকে উৎক্ষেপনযোগ্য ক্ষেপনাস্ত্র এবং পরমাণু অস্ত্র প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বাড়ানো নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কর্তারা। নয়াদিল্লির বক্তব্য, পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যায় পাকিস্তানের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার চেয়ে পরমাণু অস্ত্র নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া বা প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বাড়ানোটা বেশি জরুরি। কারণ, হিসাব অনুযায়ী পরমাণু অস্ত্রের এক কনাই (১ মেগাটন) উড়িয়ে দিতে পারে ২১০ বর্গ কিলোমিটার(যা নাকি দক্ষিণ মুম্বইয়ের তিনগুণ এলাকা!)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE