কিছু দিন আগেও কলাইকুন্ডা, ব্যারাকপুর, পানাগড়ের মতো বায়ুসেনা ঘাঁটিগুলির উপর দিয়ে, এমনকী, কাছ দিয়েও যাত্রী বিমান ওড়ার অনুমতি পাওয়া যেত না। কিন্তু, সেই নিয়ম বদলে যাচ্ছে। বলা হচ্ছে, আকাশ এ ভাবে ভাগ করে ফেলা যাবে না। সবাই সব এলাকা ব্যবহার করতে পারবে।
এর ফলে অনেকটা এলাকা জুড়ে উড়তে পারবে যাত্রী বিমান। চাইলেই কাঙ্খিত উচ্চতায় উঠে যেতে পারবে। কমবে জ্বালানি খরচ। কমবে দূষণ।
সম্প্রতি হায়দরাবাদ থেকে কলকাতায় আসছিল যাত্রিবাহী বিমান। সাধারণত ভূবনেশ্বর ঘুরে আসাই রেওয়াজ। কারণ, সোজা আসতে গেলে কলাইকুন্ডার উপর দিয়ে উড়ে আসতে হবে। সেখানে বায়ুসেনার যুদ্ধ বিমান ওড়ে। তাই, সে দিকে যাওয়া বারণ।
কিন্তু, সে দিন জানা গেল, সরাসরি কলাইকুন্ডার মাথার উপর দিয়ে উড়ে আসা যাবে। সেই সময়ে সেখানে বায়ুসেনার বিমান উড়ছিল না। এর ফলে বাঁচানো যাবে জ্বালানি। তাই মাঝ আকাশে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল ইন্ডিগো-র সেই বিমানের রুট। সরলরেখা রুটে উড়ে এসে সময় ও জ্বালানি বাঁচিয়ে সেই বিমান কলকাতায় নামার মুখে হঠাৎই পাইলট জানিয়েছিলেন, নামা যাবে না। কারণ, জ্বালানি বাঁচানোর ফলে এই মুহূর্তে বিমানের ওজন যা দাঁড়িয়েছে, তাতে রানওয়েতে নামতে গেলে বিপত্তি হবে। একে বিমান পরিবহণের ভাষায় ‘ল্যান্ডিং ওয়েট’ বলা হয়। ওড়ার সময়েই সেই ল্যান্ডিং ওয়েট হিসেব কষে নিতে হয়। রানওয়ে ছোঁওয়ার আগে সেই হিসেবের চেয়ে বেশি ওজন হলে দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
তা হলে উপায়? পাইলট জানিয়েছিলেন, আকাশে কয়েক পাক চক্কর কেটে ওই অতিরিক্ত জ্বালানি পুড়িয়ে তবে নামা যাবে। সে দিন প্রায় ১৫ মিনিট চক্কর কেটে জ্বালানি পুড়িয়ে তবে নেমে আসে ওই বিমান। জ্বালানি সাশ্রয় তো হয়ইনি, উল্টে সোজা রুটে আসার জন্য যে সাত মিনিট সময় বেঁচেছিল, চক্কর কাটতে গিয়ে তার অতিরিক্ত আরও আট মিনিট খরচ হয়ে গিয়েছিল।
তা হলে লাভ কী হল?
বলা হচ্ছে, সমন্বয় দরকার। সে দিন অনেক আগে থেকে যদি জানা যেত যে কলাইকুন্ডার উপর দিয়ে উড়ে আসা যাবে, তখন ওড়ার আগেই কম জ্বালানি নিয়ে উড়তে পারত ইন্ডিগো-র বিমানটি। তবেই জ্বালানি বাঁচত। যেমন, প্রতি রবিবার কলকাতা থেকে গোয়া ও হায়দরাবাদ যাতায়াত করার সময়ে সোজা রুটে উড়ে যায় সমস্ত বিমান। কারণ, রবিবার কলাইকুন্ডা থেকে সাধারণত যুদ্ধবিমান ওড়ে না। বিমানবন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতা-হায়দরাবাদ রুটে কলাইকুন্ডার উপর দিয়ে উড়ে গেলে এক পিঠে এয়ারবাস ৩২০ বিমানের ৩২০ কিলোগ্রাম জ্বালানি বাঁচে। যার অর্থ, গড়ে ৯৬০ কিলোগ্রাম কম কার্বন নির্গমন হয়।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের রিজিওনাল এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর শুদ্ধসত্ত্ব ভাদুড়ি বলেন, ‘‘যাত্রী বিমানগুলি আকাশে যত বেশি এলাকা ব্যবহার করতে পারবে, ততই সুবিধা। এক, সময় তো বাঁচবেই, তার সঙ্গে বাঁচবে জ্বালানি। জ্বালানি বাঁচলে টাকা বাঁচবে আর সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, বাতাসে কার্বন-নির্গমন কমবে। এটাই প্রধান উদ্দেশ্য।’’ তবে, তার জন্য প্রয়োজন সমন্বয়ের। এই সমন্বয়ের কাজ করতেই এই প্রথম কলকাতা বিমানবন্দরে শুরু হয়েছে প্রশিক্ষণ। এর আগে দিল্লিতে হয়েছে। কলকাতার এই প্রশিক্ষণে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, বিভিন্ন বিমানসংস্থার প্রতিনিধি ছাড়াও রয়েছেন সেনা, বায়ুসেনা, নৌসেনার প্রতিনিধিরা। প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও)-এর প্রতিনিধিরাও।
জানা গিয়েছে, শুধু বায়ুসেনার যুদ্ধবিমান নয়, মাঝেমধ্যেই মিসাইল পরীক্ষার জন্য বন্ধ করে দিতে হচ্ছে আকাশের একাংশ। শ্রীহরিকোটা, চাঁদিপুর থেকে ইদানীং বেশ ঘন ঘন মিসাইল পরীক্ষা করছে ডিআরডিও। এর ফলে ওই এলাকা দিয়ে একটি দীর্ঘ সময় জুড়ে যাত্রী বিমান যেতে পারে না। শুদ্ধসত্ত্ববাবু জানান, এ বার থেকে সবাই যে যার নিজের সূচি নিয়ে যাতে নিজেদের মধ্যে নিয়মিত আলোচনা করে, তারই চেষ্টা করা হচ্ছে। তা হলে দু’ঘণ্টা ধরে মিসাইল পরীক্ষার সময়ে ওই এলাকায় যাত্রী বিমান বন্ধ থাকলেও পরে সেখান দিয়ে আবার যাত্রী বিমান উড়তে পারবে। অথবা সকালে তিন ঘণ্টা যুদ্ধবিমানের মহড়ার পরে হয়তো কলাইকুন্ডার উপর দিয়ে উড়ে যেতে পারবে অন্য বিমান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy