Advertisement
E-Paper

ভর্তুকিতে কোপ, নাকি ভোটের লাইনেই রেল

সেঞ্চুরি হল না। একশো ছোঁয়ার আট কদম আগেই ‘আউট’ হয়ে দেশের সাধারণ বাজেটের সঙ্গে আগামিকাল থেকে মিশে যাচ্ছে রেল বাজেট। স্বাধীনতার পরে এই প্রথম রেল ও সাধারণ বাজেট যৌথ ভাবে পেশ করতে চলেছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।

অনমিত্র সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:০৭

সেঞ্চুরি হল না। একশো ছোঁয়ার আট কদম আগেই ‘আউট’ হয়ে দেশের সাধারণ বাজেটের সঙ্গে আগামিকাল থেকে মিশে যাচ্ছে রেল বাজেট। স্বাধীনতার পরে এই প্রথম রেল ও সাধারণ বাজেট যৌথ ভাবে পেশ করতে চলেছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।

সাধারণ বাজেটে আয়করের সীমা নিয়ে উত্তেজনাটুকু বাদ দিলে, বরাবরই আম আদমির আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে রেল বাজেটই। ভাড়া বাড়ল না কমলো, নিত্যযাত্রীদের কোনও সুরাহা হল কিনা তা নিয়ে সাধারণ মানুষ উৎসুক থাকতেন, তেমনি রেল বাজেট পেশ হতেই কোন রাজ্য ক’টা ট্রেন পেল তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণে সংসদেই গলা ফাটাতে নেমে পড়তেন বিভিন্ন রাজ্যের সাংসদরা। আবার দেশের উন্নয়নে রেল কী পদক্ষেপ করল, তার দিকে অধীর আগ্রহে চেয়ে থাকত অর্থনৈতিক মহল। কিন্তু এ বার সে সব উত্তেজনা উধাও। রেল মন্ত্রক জানিয়েছে, মাত্র দু’পাতার একটি সারাংশ কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের হাতে তুলে দিয়েছেন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু। কৃষি বা প্রতিরক্ষার মতো আর
পাঁচটা মন্ত্রকের ধাঁচেই যা পড়ে শোনাবেন জেটলি।

যদিও বর্তমান পরিস্থিতিতে রেলের দায়িত্ব ঘাড়ে নেওয়া যে বাড়তি বোঝা, তা-ও বিলক্ষণ বুঝছেন অর্থমন্ত্রী। বর্তমানে পণ্য ও যাত্রী— উভয় খাতেই আয়ের সূচক গোত্তা খেয়ে নিম্নমুখী। পণ্যের ক্ষেত্রে যেমন সড়ক পরিবহণের হাতে রেল মার খাচ্ছে, তেমনি যাত্রীভাড়ায় ভর্তুকির কড়ি গুনতে গুনতে কার্যত নিঃস্ব রেলের ভাণ্ডার। পরিসংখ্যান বলছে, যাত্রীভাড়ার প্রায় ৪৭ শতাংশ ভর্তুকি দিয়ে থাকে রেল। সেই খরচ তুলতে অবিলম্বে ভাড়া বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। সুরেশ প্রভুর হিসেবে যাত্রীভাড়া খাতে ফি বছর তাঁকে ৩৩ থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। সেই ভর্তুকির অবসান হলেই রেল ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলেই মত রেল মন্ত্রকের কর্তাদের।

কিন্তু ভর্তুকি ওঠানোর সিদ্ধান্ত জেটলির জন্য কার্যত শাঁখের করাতের মতো। কারণ গত তিন বছরে বাতানুকূল শ্রেণিতে যে পরিমাণ ভাড়া বেড়েছে তাতে বড় সংখ্যক রেলযাত্রী ট্রেন ছেড়ে বিমানযাত্রা বেছে নিয়েছেন। কমেছে যাত্রী পরিবহণ। চাহিদার অনুপাতে টিকিটে ভাড়া বাড়িয়ে (ডায়নামিক প্রাইসিং) ক্ষতি মেটানোর চেষ্টা হলেও, গত এক বছরে যাত্রীভাড়ায় প্রায় ৯ শতাংশ আয় কমেছে রেলের। অনেকেই মনে করছেন, এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি, তাতে যাত্রীভাড়া বাড়াতে গেলে তা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে স্লিপার শ্রেণিতে। ভোটের মুখে দাঁড়িয়ে আমজনতার শ্রেণিতে ভাড়া বৃদ্ধি কার্যত কঠিন জেটলির পক্ষে। তবে দেখার বিষয়, ভোটের বাধ্যবাধকতায় জেটলি রেল ভাড়া একই রাখেন নাকি সঙ্কট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে ভাড়া বাড়ানোর দিকেই এগোন।

জেটলির বাজেটের সময়ে চূড়ান্ত সঙ্কটের মধ্যে ধুঁকছে রেল। যাত্রী ও পণ্য পরিবহণে রেলের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১.৩৪ লক্ষ কোটি টাকা, সেখানে আয় হয়েছে ১.১৯ লক্ষ কোটি টাকার কাছাকাছি। সব মিলিয়ে আয় কমেছে প্রায় ১১ শতাংশ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সপ্তম বেতন কমিশনের ধাক্কা। ফলে অপারেটিং রেশিও যেখানে ৯২ টাকা হওয়ার কথা ছিল (১০০ টাকা আয় করতে খরচ হওয়ার কথা ছিল ৯২ টাকা), তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৫ এর কাছাকাছি।

এর মধ্যেই সুরক্ষা খাতে খরচ বাড়ানোর চাপ রয়েছে। গত দু’মাসে একের পর এক রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর পরে সুরক্ষার দিকটি যে কোনও ভাবেই অবহেলা করা যাবে না তা স্বীকার করে নিচ্ছেন রেলকর্তারা। কিন্তু এ জন্য প্রয়োজন বিপুল অর্থ। সেই টাকা আসবে কোথা থেকে? রেল কর্তারা বলছেন, বছরে ২০ হাজার কোটি টাকার একটি সুরক্ষা পরিকল্পনা অর্থ মন্ত্রকের কাছে জমা দিয়েছেন তাঁরা। সেই টাকা জোগাড়ে রেলের টিকিটে ‘সেফটি সেস’ বসানোর কথা ভাবছেন অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা। যার অর্থ ঘুরিয়ে ভাড়া বাড়ানো। কিন্তু ভোটের মুখে সেই ভাড়া বাড়ানোর ঝুঁকি নেওয়া হবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর উপরে। অন্য ভাবনাও রয়েছে। বিদ্যুৎ বা পেট্রোলিয়াম ক্ষেত্রের মতোই রেলের ভাড়া বাড়ানোর দায় ঝেড়ে ফেলার প্রস্তাব রয়েছে। আগামী দিনে ভাড়া সংক্রান্ত সমস্ত সিদ্ধান্ত রেল ট্যারিফ অথরিটির হাতে তুলে দিতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ করতে পারেন জেটলি।

বাজেটে জোর দেওয়ার কথা হাই স্পিড ট্রেন চালানোর দিকে। বর্তমানে মুম্বই-দিল্লি ও দিল্লি-কলকাতার মধ্যে ঘন্টায় ১৬০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালাতে সক্ষম রেল। ওই দুই লাইনে ট্রেনের গতি বাড়ানোর আগে লাইনগুলিকে লোহার বেড়া দিয়ে ঘিরে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে রেল। দুর্ঘটনা এড়াতে ওই পদক্ষেপের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার মঞ্জুরি জেটলি দেন কিনা, সেটাই এখন দেখার। সেই সঙ্গে নতুন লাইন, ডবল লাইন, বা বৈদ্যুতিকরণের মতো পরিকাঠামোগত বিষয়গুলিতে জেটলি কত টাকা দেন, সেটাও দেখার।

তবে এ সবেরই মধ্যেই কোথাও যেন চাপা হা-হুতাশ ঘুরে বেড়াচ্ছে গোটা রেলভবনে। বাজেটের আগের রাতের বাৎসরিক উত্তেজনা একেবারেই উধাও। নেই শেষ মুহূর্তের কোনও পরিবর্তন বা প্রকল্প জোড়ার চাপ। প্রতি বছর বাজেটের আগের দুপুরে প্রাক-বাজেট ফোটো তোলা হয় রেলমন্ত্রীর। এ বার সে সবই বাতিল। আর পাঁচটা দিনের মতোই নিস্তরঙ্গ গোটা সুরেশ প্রভুর মন্ত্রক। রেলবাজেট এখন ইতিহাসের পাতায়।

Budget People
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy