Advertisement
০২ মে ২০২৪

বাগি ও আয়ারাম-গয়ারাম

কথা হচ্ছিল পাইনের ফাঁকে পাহাড়ের ঢালে একা এক নির্জন দোতলা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে। নীচ থেকেই এক হোটেল মালিক দেখিয়েছিলেন, “ওই দেখুন, প্রিয়ঙ্কা গাঁধীর বাড়ি।” নিছক কৌতূহলেই ১৪ কিলোমিটার পেরিয়ে সেই বাড়ির দোরগোড়ায় পৌঁছতেই আটকে দিলেন কয়েক জন।

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
পালমপুর শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:২৭
Share: Save:

অনেক দিন পরে শুনলাম কথাটা। আয়ারাম-গয়ারাম।

কথা হচ্ছিল পাইনের ফাঁকে পাহাড়ের ঢালে একা এক নির্জন দোতলা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে। নীচ থেকেই এক হোটেল মালিক দেখিয়েছিলেন, “ওই দেখুন, প্রিয়ঙ্কা গাঁধীর বাড়ি।” নিছক কৌতূহলেই ১৪ কিলোমিটার পেরিয়ে সেই বাড়ির দোরগোড়ায় পৌঁছতেই আটকে দিলেন কয়েক জন। কে, কেন, কী চাই—হাজারো প্রশ্ন। সব প্রশ্নের জবাব দিতেও বললেন, “ফিরে যান।” কিন্তু আপনারা কে? পাল্টা প্রশ্ন করতে বললেন, রাজ্যের গোয়েন্দা। সব সাদা পোশাকের পুলিশ। চোখে পড়ল এসপিজির গাড়িও। তখনও জানতাম না, সনিয়া গাঁধী শিমলাতে। অসুস্থ হয়ে পড়ায় শুক্রবার তাঁকে দিল্লিতে নিয়ে যাওয়ার পরে বুঝেছি, দুদিন আগে ভিআইপি-পাড়ায় কেন এত নিরাপত্তা। তখনকার মতো ওই গোয়েন্দাদের সঙ্গে আলাপ জমে উঠেছিল হিমাচলের ভোট নিয়ে। ভোটের হাওয়া কোন দিকে, রাজ্য গোয়েন্দাদের থেকে ভাল কে জানবেন? জিজ্ঞেস করতেই জবাব এল, “দেখুন, আয়ারাম-গয়ারাম আর বাগি (বিদ্রোহী)-রাই যে কোনও দিকে খেলা ঘুরিয়ে দিতে পারেন।”

ঠিক ৫০ বছর আগে পাশের রাজ্য হরিয়ানায় গয়া লাল নামে এক নেতা ১৫ দিনে তিন বার দল বদল করেছিলেন। কংগ্রেস থেকে জনতা পার্টি, ফের কংগ্রেস, আবার ৯ ঘণ্টার মধ্যে জনতা পার্টিতে। মাঝে কংগ্রেসে ফিরে আসার সময়ে দলের নেতা রাও বীরেন্দ্র সিংহ সাংবাদিক বৈঠকে গয়া লালকে স্বাগত জানাতে গিয়ে বলেন, “গয়া রাম এখন আয়া রাম।” তখন থেকেই ভারতের রাজনীতির চালু ‘আইকন’ এই শব্দগুচ্ছ। হিমাচলে এ বারের ভোটে যা খুবই প্রাসঙ্গিক।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিংহ সম্প্রতি সুখরামকে ‘আয়ারাম-গয়ারাম’ বলে খোঁচা দিয়েছেন। সুখরাম ও তাঁর ছেলে অনিল শর্মা ভোটের মুখে কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার পরে। প্রচারে এসে উত্তরাখণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হরিশ রাওয়ত বলেছেন, “সুখরাম এখন ঠিক জায়গায় গিয়েছেন। তাঁর মতোই এক জন শিক্ষক দরকার ছিল অমিত শাহের ছেলে জয়ের। দুর্নীতির সেরা প্রশিক্ষণ দিতে পারবেন তিনিই।” এর মধ্যে ‘হিমাচল-নির্মাতা’ তথা রাজ্যের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী যশবন্ত সিংহ পরমারের নাতি চেতনও কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন গত কাল।

পালমপুরে এসে টের পেলাম, আয়ারাম-গয়ারামদের পাশাপাশি বাগিরাও কত গুরুত্বপূর্ণ এই ভোটে। ভ্যা-ভ্যা করে কাঁদছেন প্রবীণ শর্মা। কান্নার ভিডিও ভাইরাল গোটা হিমাচলে। অমিত শাহ টিকিট দেননি তাঁকে। দিয়েছেন বিজেপির মহিলা মোর্চার সভানেত্রী ইন্দু গোস্বামীকে। শত বুঝিয়েও বাগে আনা যাচ্ছে না প্রবীণকে। ‘অটো’ প্রতীকে ‘পদ্ম’কে হারাতে তিনি মরিয়া। আর ইন্দু বলছেন, “পালমপুরে পদ্ম ফুটিয়ে নরেন্দ্র মোদীর ঝুলিতে দেব।”

হিমাচলে নাম প্রত্যাহারের শেষ দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরেও ময়দানে এমন ‘বাগি’র সংখ্যা ডজনেরও বেশি। বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ৪৩ জনের নাম প্রত্যাহার করানোর পরেও। এরা কেউ বিজেপির পথে কাঁটা, তো কেউ কংগ্রেসের।

হিমাচল বিধানসভায় আসন মোট ৬৮টি। জয়ের জন্য দরকার ৩৫। গত ভোটে কংগ্রেস সরকার গড়ে মাত্র ৩৬টি আসনে জিতে। ফলে ওই ১২-১৩ জন বাগিই অনায়াসে বদলে দিতে পারে খেলার মোড়। কংগ্রেস তাই একটি ‘ওয়ার রুম’ই বানিয়ে ফেলেছে। বীরভদ্রে পুরো ভরসা না রেখে রাহুল গাঁধী দিল্লি থেকে ঘন-ঘন পাঠাচ্ছেন সুশীলকুমার শিন্ডেকে। বিজেপির রামলাল, জে পি নড্ডাও এখন এই বিক্ষুব্ধদের সামলাতে ব্যস্ত। ঝড় তুলতে মোদীর সভাও হবে সব লোকসভা কেন্দ্রে। বাগিদের ভোট কাটা ঠেকাতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE