মায়াবতী ও মুলায়ম সিংহ যাদব।
রাজনীতির অলিন্দে তাঁদের সাপে-নেউলে সম্পর্ক নিয়ে যতই আলোচনা হোক, খুব কাছাকাছি এলে একে অন্যের প্রতি সৌজন্য দেখাতে কখনওই খামতি ছিল না মুলায়ম সিংহ যাদব ও মায়াবতীর। সামনাসামনি এলে মুলায়মের চোখে মায়াবতী যেমন ‘বহেনজি’, তেমনই মুলায়মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মায়াবতীও। ১৮ বছর ধরে বহুজন সমাজ পার্টি (বসপা) নেত্রীর ব্যাক্তিগত নিরাপত্তা অফিসারের দায়িত্বে থাকা গোয়েন্দা অফিসার পদম সিংহ তেমনটাই দেখেছেন। এও দেখেছেন, সামনাসামনি এসে পড়লে মায়াবতীর প্রতি কেমন শ্রদ্ধাশীল হয়ে পড়েন মুলায়ম-পুত্র অখিলেশ ও তাঁর স্ত্রী। আর ওই সময় তাঁদের চিনতে না পারার জন্য পরে কতটা আক্ষেপ হয় মায়াবতীর।
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে পদম জানিয়েছেন ২০০২ সালের একটি ঘটনার কথা। বিমানের বিজনেস ক্লাসে লখনউ থেকে দিল্লি যাচ্ছিলেন মায়াবতী। তাঁর পরে বিমানে ওঠেন মুলায়ম-পুত্র অখিলেশ ও তাঁর স্ত্রী ডিম্পল। অখিলেশের বয়স তখন মাত্র ২৯ বছর। মায়াবতীকে দেখেই তাঁর সামনে এসে হাত জোড় করে নমস্কার জানান অখিলেশ ও ডিম্পল। কিন্তু মায়াবতী তখন অখিলেশকে চিনতে পারেননি। চিনতে পারেননি ডিম্পলকেও। বিমান থেকে নামার পর পদম যখন মায়াবতীকে বিমানবন্দরের বাইরে এসকর্ট করে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে তুলে দিচ্ছেন, তখন মায়াবতী তাঁকে প্রশ্ন করেন, ‘‘বিমানে যে দু’জন আমাকে দেখে নমস্কার জানালেন, তাঁরা কে? আমি চিনতে পারলাম না তো?’’ পদম জবাব দেন, অখিলেশ ও তাঁর স্ত্রী। শুনেই চটে যান মায়াবতী। বলেন, ‘‘আমাকে তো আস্তে আস্তে বলতে পারতে ও অখিলেশ। বলবে তো ওই মেয়েটা ওর বউ। ওরা আমাকে নমস্কার করল। আর আমি তার জবাবই দিলাম না। কী ভাবল ওরা আমাকে! এটা আমার ঠিক হয়নি। তুমি তো চুপিচুপি বলে দিতে পারতে আমাকে।’’
মায়াবতীর সঙ্গে পদম সিংহ। -ফাইল ছবি
মায়াবতীকে বিমানবন্দরের বাইরে গাড়িতে তুলে দিয়ে পদম যখন ফের ভিতরে ঢুকেছেন তাঁর লাগেজ নিতে, তখন দেখেন, অখিলেশও তাঁদের লাগেজ নিচ্ছেন। পদম তখন এগিয়ে গিয়ে অখিলেশকে জানান মায়াবতীর কথাটা। শুনে মৃদু হেসে অখিলেশ বলেন, ‘‘বহেনজির সঙ্গে আমরা যদি হাত মেলাতে পারতাম, তা হলে আমরাই এক সঙ্গে চালাতে পারতাম দেশটাকে। এত শক্তি আমাদের অথচ আমরাই রয়েছি ক্ষমতার বৃত্তের বাইরে। ধাঁধাটা এটাই।’’
আরও পড়ুন- মমতা নাকি মায়াবতী, প্রধানমন্ত্রী পদে কাকে পছন্দ? অখিলেশ বললেন...
আরও পড়ুন- শিবপালের সভায় হাজির মুলায়ম
১৯৯৫-এর ৩ জুন মায়াবতীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা অফিসার হন পদম। ৬৯ বছর বয়সী পদম মায়াবতীর সঙ্গে কাজ করেছেন ৫ বছর আগে পর্যন্ত। মায়াবতীর আগে মুলায়ম-সহ আরও ৪ মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা অফিসার ছিলেন পদম। তাই খুব কাছ থেকে দেখেছেন সমাজবাদী পার্টি (সপা) নেতা মুলায়মকেও।
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আরও একটি ঘটনার কথা জানিয়েছেন পদম। ওই সময় মায়াবতী যাচ্ছিলেন দিল্লি। সঙ্গে ছিল তাঁর বেশ কয়েক জন দেহরক্ষী। একই বিমানে যাচ্ছিলেন মুলায়মও। মায়াবতী আর মুলায়মের দু’টি সিট ছিল পাশাপাশি। তা হলে মায়াবতীর পাশে বসবেন কী ভাবে তাঁর দেহরক্ষী? ফলে আর এক জনের সিট বদলাতে হল। ওই সময় বিমানে মুলায়মের সামনে দিয়ে মায়াবতীকে নিয়ে যাওয়া হল পিছন দিকের একটি সিটে। দেখলাম, মায়াবতী সামনে দিয়ে যাচ্ছেন বলে নিজেকে আড়াল করে কাগজ পড়ছেন মুলায়ম। দিল্লি পৌঁছতেই দেখলাম, উঠে দাঁড়িয়ে ‘নমস্তে বহেনজি’ বলে মায়াবতীকে নমস্কার জানালেন মুলায়ম। বিমান থেকে আগে নামার জন্য অনুরোধ জানালেন মায়াবতীকে। তখন মায়াবতী তাঁকে বললেন, ‘‘আপনি সামনের আসনে, আপনিই আগে নামুন।’’ অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল হয়ে মুলায়ম জবাব দিলেন, ‘‘বহেনজি, আপনি আমার বড় দিদি। আগে আপনি নামবেন। তার পর আমি নামব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy