Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

দলিত নিগ্রহে মুখ খুললেন না মোদী

দলিত নিগ্রহ নিয়ে প্রবল চাপের মধ্যে সংযমের বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দলিতদের উপর অত্যাচারের ঘটনাগুলি নিয়ে আজ সরাসরি কথা বলেননি তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৩৫
Share: Save:

দলিত নিগ্রহ নিয়ে প্রবল চাপের মধ্যে সংযমের বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দলিতদের উপর অত্যাচারের ঘটনাগুলি নিয়ে আজ সরাসরি কথা বলেননি তিনি। তবে রবিবার রেডিওতে ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে মোদী মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর প্রসঙ্গ টেনে অহিংসা, প্রেম ও ক্ষমার কথা তুলে ধরেছেন। যাকে দলিতদের নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্কের সঙ্গেই জুড়ে দেখা হচ্ছে। তবে মোদী সরাসরি কেন এ প্রসঙ্গে মুখ খুললেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস।

মোদীর এই বার্তার মধ্যেই আজ উত্তরপ্রদেশ থেকে বিজেপির জন্য এসেছে দুঃসংবাদ। আগরায় ৪০ হাজার দলিতকে জড়ো করে মোদীর বার্তা দেওয়ার কথা ছিল বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের। কিন্তু লোক না আসায় তা বাতিল করতে হয়েছে।

রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যা দিয়ে শুরু হয়েছিল। তার পর উনা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দলিত নিগ্রহের ঘটনা, কখনও দলিত নেত্রী মায়াবতী সম্পর্কে বিজেপি নেতা দয়াশঙ্কর সিংহের অশালীন মন্তব্য— সব মিলিয়ে ঝড়ের মধ্যে পড়েছে মোদী সরকার। উনা কাণ্ড নিয়ে সংসদে এককাট্টা বিরোধীরা দলিত নিগ্রহে মোদীর নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। এই সময়েই প্রধানমন্ত্রীর মুখে শোনা গেল অহিংসার কথা।

‘মন কি বাত’-এ মোদী তাঁর সাম্প্রতিক দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের প্রসঙ্গ তোলেন। তাঁর মতে, ওই সফর নিছক কূটনীতি কিংবা বাণিজ্যের ছিল না। সেটি ছিল এক রকম তীর্থযাত্রা। গাঁধী আর নেলসন ম্যান্ডেলার দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন মোদী। বলেন, ‘‘অহিংসা, প্রেম ও ক্ষমা— এই শব্দগুলি কানে এলেই ওই দু’জনের কথা মনে পড়ে।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘সাম্য ও সমান সুযোগ’ নিয়ে গীতায় যে কর্তব্যের কথা বলা হয়েছে, সমাজ ও সরকারের কাছে তার থেকে বড় মন্ত্র হতে পারে না।

দলিত নিগ্রহ নিয়ে দিল্লির বিজেপি সাংসদ উদিত রাজও প্রশ্ন তুলেছেন। দলিতদের উপর হিন্দু ধর্মের ‘তথাকথিত রক্ষক’দের বৈষম্যের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তিনি। বিজেপির অন্দরেই ক্ষোভের স্বর শুনে নেমে পড়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। বিজেপির দলিত সাংসদদের ইস্তফার দাবি তুলেছেন তিনি। এদিকে, আজ মোদীর রাজ্য গুজরাতে এক জন দলিতের মৃত্যু হয়েছে। ক’দিন আগে দলিত নিগ্রহ নিয়ে প্রতিবাদের সময়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে তিনি হাসপাতালে ছিলেন। এই ঘোরালো পরিস্থিতির মধ্যেই মোদী আজ বুঝিয়েছেন, তাঁর সরকার ঐক্য ও সমান সুযোগের মন্ত্র নিয়েই এগোচ্ছে। স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লায় বক্তৃতার আগেও আম-জনতার পরামর্শ চেয়েছেন মোদী। দয়াশঙ্কর সিংহ মায়াবতীর বিরুদ্ধে অপশব্দ ব্যবহার করে গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু তাঁর এক মন্তব্যের জেরে উত্তরপ্রদেশের ভোটের আগে বড়সড় ধাক্কা খেতে হচ্ছে মোদী ও অমিত শাহকে। আজ আগরায় দলিতদের নিয়ে সভা করার কথা ছিল বিজেপি সভাপতির। কিন্তু সেখানে আসতে দলিতদের উৎসাহ দেখা যায়নি। সভা বাতিল করতে হয়েছে। দল যদিও আনুষ্ঠানিক ভাবে অতি বর্ষণের দোহাই দিয়েছে। তবে বিজেপি সূত্রের মতে, দয়াশঙ্করের মন্তব্যের পরে মায়াবতী অনেক বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। এই সভা হলে তাঁর বিরুদ্ধে বিক্ষোভের কর্মসূচিও প্রস্তুত করে রেখেছিলেন বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী।

কাল থেকে আবার সংসদের অধিবেশন শুরু হচ্ছে। বিজেপি সূত্রের মতে, সে কারণেই পরিস্থিতি শান্ত করতে হাল ধরতে হল প্রধানমন্ত্রীকে। তাঁকে বলতে হল, সকলেই নিজের ও পরবর্তী প্রজন্মের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ চান। সকলের প্রয়োজন ও অগ্রাধিকার ভিন্ন। কিন্তু সকলের পথই এক। আর সেটি হবে উন্নয়ন, সাম্য ও সমান সুযোগের মাধ্যমে।

তবে মোদীর বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস। রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রীর পরোক্ষ বার্তায় কী লাভ? তাঁকে সুনিশ্চিত করতে হবে যে দেশে দলিতদের উপর অত্যাচার হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

modi dalit incident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE