Advertisement
১৭ জুন ২০২৪
অসহিষ্ণুতা বিতর্ক

কংগ্রেসের কথা বলা শোভা পায় না: মোদী

দেশ জুড়ে অসহিষ্ণুতার ঘটনা নিয়ে তিনি সে ভাবে কিছু বলেননি বলে অভিযোগ বিরোধীদের। লেখক-শিল্পী-শিক্ষাবিদ-চিত্রপরিচালকরা লাগাতার তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও পটনা শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:৪৫
Share: Save:

দেশ জুড়ে অসহিষ্ণুতার ঘটনা নিয়ে তিনি সে ভাবে কিছু বলেননি বলে অভিযোগ বিরোধীদের। লেখক-শিল্পী-শিক্ষাবিদ-চিত্রপরিচালকরা লাগাতার তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন। সোমবার নিজের জন্মদিনে সরব হয়েছেন শাহরুখ খানও। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বেছে নিলেন এই দিনটিকেই। অসহিষ্ণুতার প্রশ্নে সোজাসুজি পাল্টা আক্রমণ হানলেন কংগ্রেসকে। আর তার পরেই সনিয়া গাঁধী আচমকা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেছেন। যে প্রণব মুখোপাধ্যায় এই নিয়ে তিন তিন বার দেশকে সহিষ্ণুতার বার্তা দিয়েছেন।

বিহার ভোটে আজই শেষ জনসভা ছিল মোদীর। পূর্ণিয়ার সমাবেশে কংগ্রেসের উদ্দেশে তোপ দেগে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আজ ২ নভেম্বর। ১৯৮৪ সালের আজকের দিনটা মনে করুন। ইন্দিরা গাঁধীর হত্যার পরে দিল্লিতে প্রকাশ্যে শিখদের গণহত্যা চলছিল। আজ কংগ্রেস আমাদের সহিষ্ণুতা শেখাচ্ছে। ডুবে মরুন, আপনাদের এ সব শোভা পায় না।’’

মোদী একা নন। বস্তুত গোটা বিজেপি শিবিরই আজ অসহিষ্ণুতা নিয়ে পাল্টা প্রচারে নামে। গত কাল ফেসবুকে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি দীর্ঘ পোস্ট লিখেছিলেন। আগামী কাল রাষ্ট্রপতির কাছে কংগ্রেসের পদযাত্রার কর্মসূচি স্থির হয়ে আছে। তার আগেই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন বিজেপি নেতৃত্ব। দুপুরে বেঙ্কাইয়া নায়ডু সাংবাদিক সম্মেলন করে বললেন, ‘‘কংগ্রেস রাষ্ট্রপতির কাছে যাচ্ছে, এ যেন ভূতের মুখে রামনাম। শিখ দাঙ্গা কিংবা কাশ্মীরি পণ্ডিতদের উচ্ছেদের সময় কংগ্রেসের সহিষ্ণুতা কোথায় ছিল? অথবা জরুরি অবস্থার সময়?’’ গত কালই জেটলি লিখেছিলেন, কংগ্রেস এবং বাম মনোভাবাপন্ন বিশিষ্ট জনেরা গোড়া থেকে বিজেপির প্রতি অসহিষ্ণুতা দেখিয়ে আসছেন। আজ সেই সুরেই বেঙ্কাইয়া দাবি করেন, অতীতে একের পর এক ঘটনায় কাউকে এ ভাবে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি। আজ দেশে একটি বিকল্প জাতীয়তাবাদী ভাবনার উত্থান হচ্ছে, সেটি তাঁরা মেনে নিতে পারছেন না। তাঁর কথায়, ‘‘যত জন এ যাবৎ পুরস্কার পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে মুষ্টিমেয় কয়েক জন ফেরত দিয়েছেন। এঁরা বরাবরই বিজেপি-বিরোধী ছিলেন।’’

অর্থাৎ সামগ্রিক ভাবে মোদী নিজে এবং তাঁর দল আজ অসহিষ্ণুতার তিরটি কংগ্রেসের দিকে ঘুরিয়ে দিতে চেয়েছেন। কিছু দিন আগে জেটলি ’৮৪ দাঙ্গার প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। সেই পথ ধরেই অন্যরা এগিয়েছেন। কংগ্রেস অবশ্য দমেনি। বরং মোদীর মন্তব্য আসার পরে সনিয়া আজই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত নেন। প্রণববাবুর কাছে দাদরি-পরবর্তী পরিস্থিতি এবং তার নিয়ন্ত্রণে সরকারের সদিচ্ছার অভাব নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি। কংগ্রেস সভানেত্রীর বক্তব্য, ‘‘দাদরি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এ ব্যাপারে একটি মতাদর্শের নিষ্ঠুর ষড়যন্ত্র রয়েছে।’’ বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের সেই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই কাল কংগ্রেস নেতা-সাংসদদের নিয়ে মিছিল করে ফের রাষ্ট্রপতির কাছে যাবেন সনিয়া।

বিজেপি নেতৃত্ব বেশ বুঝতে পারছেন, বিহার নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে কংগ্রেস ও বামপন্থী নেতারা অসহিষ্ণুতা নিয়ে প্রচারকে উচ্চগ্রামে নিয়ে যেতে চাইছেন। যার রেশ থাকবে সংসদের পরের অধিবেশন পর্যন্ত। বিহারে শেষ দফার ভোট হবে ৫ তারিখ। সীমাঞ্চলের যে অংশে ওই দিন ভোট হবে, তা মূলত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকা। তার আগে অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে মিছিল করে কংগ্রেস সংখ্যালঘুদেরও বার্তা দিতে চাইছে বলে মনে করা হচ্ছে।

কংগ্রেস সূত্রের মতে, সনিয়ার কৌশল খুবই স্পষ্ট। মোদী সরকারের জমি অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে এর আগে প্রথম বার পথে নেমেছিলেন সনিয়া। মোদী সরকারের উপরে কৃষক-বিরোধী তকমা সেঁটে দিতে অনেকটাই সফল হয়েছিল কংগ্রেস। এ বারও অসহিষ্ণুতার পরিবেশ নিয়ে আন্দোলনে নেমে নরেন্দ্র মোদীকে ‘বিভাজনের রাজনীতির মুখ’ হিসেবে তুলে ধরাটাই লক্ষ্য। লেখক-শিল্পী-শিক্ষাবিদ এবং শিল্পমহলের কর্তারা ইতিমধ্যেই মুখ খোলায় কংগ্রেসের জন্য রাজনৈতিক জমিও তৈরি রয়েছে। সেই উর্বর জমিতেই সনিয়া ফসল তুলতে চাইছেন। সুচিন্তিত ভাবেই আন্দোলনের রাশ নিজের হাতে নিয়েছেন তিনি। কারণ, অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে জাতীয় স্তরে আন্দোলন গড়ে তুলতে গেলে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলিকে একজোট করা প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে সনিয়া গাঁধীর গ্রহণযোগ্যতা রাহুলের তুলনায় অনেক বেশি।

শিখ দাঙ্গা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের জবাবও তৈরি রেখেছে কংগ্রেস। রাহুল গাঁধীর মন্তব্য, ‘‘মোদী ডুবছেন বলেই গাল পাড়ছেন।’’ আর দলের মুখপাত্র আনন্দ শর্মা বলেন, ‘‘দাদরি-পরবর্তী পরিস্থিতিতে কোথায় মোদী সম্প্রীতির পরিবেশ রক্ষার কথা বলবেন, তা নয় ৩১ বছরের পুরনো ক্ষত খুঁচিয়ে আরও বিভাজন তৈরি করতে চাইছেন!’’ আনন্দের দাবি, ‘‘শিখ-বিরোধী দাঙ্গার ঘটনা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু সরকার তার পরে উপর্যুপরি যে সব ব্যবস্থা নিয়েছে, তাতে এত দিনে ক্ষত অনেকটাই মেরামত করা গিয়েছে।’’ কংগ্রেস নেতৃত্ব পাল্টা কটাক্ষে বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর ১৯৮৪-র দাঙ্গার কথা মনে পড়ল! কিন্তু ২০০২ সালে গুজরাত দাঙ্গার পর অটলবিহারী বাজপেয়ী তাঁকে যে রাজধর্মের পাঠ দিয়েছিলেন, তা মনে পড়ল না! বাজপেয়ী জমানার মন্ত্রী অরুণ শৌরিও এ দিন মোদীর নীরবতার প্রতিবাদ করে অস্বস্তি বাড়িয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

intolerance Modi slams Congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE