নমস্কার বিনিময়ের পরেই ওদিক থেকে ভেসে এল প্রশ্ন, ‘‘কী করেন?’’
-আমার একটা ছোটখাটো চা-মিঠাইয়ের দোকান আছে।
-আরে আপনি দেখছি আমার মতোই।
-না না স্যর, কী যে বলেন! আমি অনেক আলাদা।
এর পর ও প্রান্তের বক্তা একে একে জানতে চান, কত ক্ষণ খোলা থাকে দোকান? কোন মিষ্টি সব চেয়ে জনপ্রিয়? বোঝান, দোকানের সব চেয়ে ভাল মিষ্টিটার উপরেই বেশি মন দেওয়া উচিত। এটাই ব্যবসার নিয়ম। কোনও দোকানের নির্দিষ্ট সামগ্রীর নাম ছড়ালেই দোকানে খদ্দের বেশি আসে।
কোনও ‘ম্যানেজমেন্ট গুরু’ নন। পরামর্শদাতা সুদূর দিল্লি থেকে ভিডিয়ো কল করেছেন। ধার নিয়ে মিষ্টির দোকান চালানো রঙিয়ার যুবক হৃদয় ডেকা তাঁর কথা শুনবেন কী! তাঁর তো হাত-পা কাঁপছে, আনন্দে আর উত্তেজনায়। কিন্তু ওপার থেকে একের পর এক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী। সঙ্গে ছোট ছোট পরামর্শ।
কামরূপের ছোট্ট শহর রঙিয়ার হৃদয় ডেকা ২০১৫ সালে মুদ্রা প্রকল্পের অধীনে পঞ্চাশ হাজার টাকার ঋণ নিয়ে চা-মিষ্টির দোকান শুরু করেন। পরবর্তী কালে ব্যবসা ভাল হওয়ায়, গত বছর মুদ্রা প্রকল্প থেকে আরও পাঁচ লক্ষ টাকার ঋণ পান হৃদয়। ছোট্ট দোকান বড় হয়। কর্মচারীর সংখ্যাও ২ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭।
অন্য দিকে, মুদ্রা ব্যাঙ্ক কতটা সফল—তা যাচাই করতে ঋণগ্রহীতাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে কথা বলতে উদ্যোগী হন প্রধানমন্ত্রী। হৃদয়ের সাফল্যের জন্যই প্রধানমন্ত্রীর দফতর অসম থেকে তাঁর নাম বেছে নেয়। গত কাল হৃদয়ের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
হৃদয় ভেবেছিলেন ‘নমস্কার, সব ভাল তো? ভাল থাকবেন’—এমন কিছু কথাতেই সীমিত থাকবে বার্তালাপ। কিন্তু প্রথম থেকেই গল্পের মেজাজে থাকা প্রধানমন্ত্রী হৃদয়ের পরিচয় পেয়েই বলে ওঠেন, ‘‘আরে চা-মিষ্টির দোকান! আপনি তো আমার মতোই।’’ লজ্জা কাটিয়ে হৃদয় তাঁর যাত্রা-কথা প্রধানমন্ত্রীকে জানান। বলেন, দু’জন কর্মী নিয়ে কাজ শুরু করা দোকানে এখন সাতজন কর্মী। প্রধানমন্ত্রী জানতে চান, কতক্ষণ কাজ করেন? হৃদয় জানান, ‘‘সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দোকান খোলা থাকে। উৎসবের সময়ে দোকান বন্ধ হয় আরও দেরীতে।’’
উৎসাহিত মোদী তাঁকে বলেন, ‘‘একটা মিষ্টি, একটা নাম জনপ্রিয় করে তুলতে হয়। যাতে বাইরের লোকও এলাকায় ঢুকে ওই দোকানের খোঁজ করে।’’ তাঁর পরামর্শ, এখন বিজ্ঞাপনের যুগ, ব্র্যান্ডিংয়ের যুগ। তাই ‘ডেকা সুইটস’-এর রসগোল্লার নামটা ভাল করে তুলে ধরতে হবে।