Advertisement
০৫ মে ২০২৪
PM Narendra Modi

লাচিতকে ঢাল করে হিন্দুত্ব-গৌরব, প্রশ্ন মোদীর তথ্য নিয়েও

আহোম বীর লাচিত বরফুকনের চারশোতম জন্মজয়ন্তী উৎসবকে ইসলামের উপরে হিন্দুত্বের বিজয়ের আখ্যান হিসেবে তুলে ধরার প্রচ্ছন্ন প্রচেষ্টা বরাবরই চলছে বলে মনে করছেন অনেকে।

আহোম সেনাপতি লাচিত বরফুকনের ৪০০তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে যে বর্ষব্যাপী উদ্‌যাপন চলছিল, তার সমাপ্তি অনুষ্ঠান ছিল এ দিন। সেখানে উপস্থিত অসমের রাজ্যপাল জগদীশ মুখি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে। পিটিআই

আহোম সেনাপতি লাচিত বরফুকনের ৪০০তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে যে বর্ষব্যাপী উদ্‌যাপন চলছিল, তার সমাপ্তি অনুষ্ঠান ছিল এ দিন। সেখানে উপস্থিত অসমের রাজ্যপাল জগদীশ মুখি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে। পিটিআই

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২২ ০৮:২৪
Share: Save:

অষ্টম শতক থেকে ভারতে থাকা মোগলরা ‘বহিরাগত আততায়ী’। কিন্তু ত্রয়োদশ শতকে চিনের ইউনান থেকে ভাগ্য অন্বেষণে অসমে পৌঁছনো আহোমরা ‘আদি ভূমিপুত্র’। আর ১৮৫৮ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত সরাসরি ভারতে শাসন-শোষণ চালানো ইংরেজরা? প্রধানমন্ত্রীর ‘নয়া ইতিহাসে’ তারা নেহাতই উপেক্ষিত!

আহোম বীর লাচিত বরফুকনের চারশোতম জন্মজয়ন্তী উৎসবকে ইসলামের উপরে হিন্দুত্বের বিজয়ের আখ্যান হিসেবে তুলে ধরার প্রচ্ছন্ন প্রচেষ্টা বরাবরই চলছে বলে মনে করছেন অনেকে। সেই সূত্র ধরেই, দিল্লিতে চলা লাচিত উৎসবও যেন হয়ে উঠল ভারত-ইতিহাসের পুনর্নির্মাণের গেরুয়া খসড়া। বৃহস্পতিবার যেখানে শেষ করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, আজ সেখান থেকেই ব্যাটন তুলে নিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নিজের ভাষণে লাচিতের বীরত্বের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি তিনি বারবার প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করলেন, ইসলামের শাসন মানেই বিদেশি, ধর্মান্ধ, হত্যাকারীদের অরাজকতা। আর সেই আমলে লেখা ইতিহাস পড়েই এখনকার প্রজন্ম স্বদেশি বীরত্বের কথা ভুলতে বসেছে। তাই ‘দাসত্বের আমলে’ লেখা ওই ইতিহাসের বদলে নতুন করে ‘বীরত্বের ইতিহাস’ লিখতে হবে।

‘লাচিত বরফুকন— অসমস্ হিরো হু হল্টেড দ্য মুঘলস্’ বইটি প্রকাশ করে মোদী পরোক্ষে কংগ্রেসকেও কটাক্ষ করে বলেছেন, “লাচিত আমাদের শেখান, স্বজনপোষণ ও পরিবারবাদের তুলনায় দেশ অনেক বড়।” লাচিতের জীবন নিয়ে বড় নাট্য প্রযোজনা তৈরি করে দেশের সর্বত্র নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাবও দেন তিনি।

মোদীর ঐতিহাসিক ব্যাখ্যার সমালোচনা করে অসম তৃণমূল কংগ্রেসের মিডিয়া ইনচার্জ অভিজিৎ মজুমদার বলেন, “লাচিত অমর বীর। কিন্তু তাঁকে ঢাল করে বিজেপির হিন্দুত্ব প্রচার ও প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা নিন্দনীয়। মনে রাখতে হবে, শরাইঘাটে লাচিতের বিরুদ্ধে লড়াইতে মোগলদের সেনাপতি ছিলেন রাজপুত হিন্দু রাম সিংহ। অধিকাংশ সেনা ছিল বাংলার। তিরন্দাজ বাহিনীর সকলে ছিল কোচ।”

মোদীর দাবি, মোগলদের থেকে গুয়াহাটি তথা অসমের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করেন লাচিত। ইতিহাসবিদেরা এই তথ্যও ভুল বলছেন। কারণ শরাইঘাট যুদ্ধের পরেও গুয়াহাটি মোগলদের দখলেই ছিল। শরাইঘাটের যুদ্ধের নামে ইতিহাস বিকৃত করা ও নতুন ইতিহাস রচনার দাবির সমালোচনা করে নর্থ ইস্টার্ন হিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক মহম্মদ শাহ নুরুর রহমান বলেন, “৭১২ সালেই মহম্মদ বিন কাসেম সিন্ধে শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। ১১ শতকে সুলতান মামুদ ভারতে ঢুকে পড়েছেন। ১২০৬ সালে তো সুলতানি সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাই হয়ে গিয়েছে। অন্য দিকে, চিনের ইউনানের মানুষ স্যুকাফা (আহোম সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা) ১২২৮ সালে অসমে আসেন। তাই আহোমদের ভারতমাতার ভূমিপুত্র ও মুসলিমদের পরবর্তীকালে আসা বহিরাগত দখলদার হিসেবে ব্যাখ্যা করা সত্যের অপলাপ।” নতুন করে ইতিহাস লেখার সরকারি পরামর্শ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ইতিহাস লেখার ব্যাকরণ রয়েছে। নৈর্ব্যক্তিক ও নির্মোহ ভাবে ইতিহাস লিখতে হয়। পূর্বনির্ধারিত ধারণা, পক্ষপাতদুষ্ট মনন নিয়ে কখনও প্রকৃত ইতিহাস লেখা সম্ভব নয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

PM Narendra Modi Lachit Barphukan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE