Advertisement
E-Paper

জন্মভূমিতে আবেগেই ভর মোদীর

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে আজই প্রথম বার নিজের জন্মস্থান বডনগরে ফিরলেন নরেন্দ্র মোদী। উৎসে ফেরার সেই আবেগকে আজ পুরোপুরি কাজে লাগালেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৪৯
সান্নিধ্য: পড়ুয়াদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রবিবার বডনগরের এক মেডিক্যাল কলেজে। ছবি: পিটিআই।

সান্নিধ্য: পড়ুয়াদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রবিবার বডনগরের এক মেডিক্যাল কলেজে। ছবি: পিটিআই।

সফরের প্রথম দিন দিয়েছেন কাজের খতিয়ান। ঢাক পিটিয়েছেন জিএসটিতে ছাড় ঘোষণা নিয়ে। ঘোষণা করেছেন, দীপাবলি এসে গিয়েছে আগেই। শুনিয়েছেন তাঁর জমানার উন্নয়নের কথা। আর আজকের দিনটি পুরোই আবেগে সওয়ার তিনি। হবে না-ই বা কেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে আজই প্রথম বার নিজের জন্মস্থান বডনগরে ফিরলেন নরেন্দ্র মোদী। উৎসে ফেরার সেই আবেগকে আজ পুরোপুরি কাজে লাগালেন। গেলেন নিজের স্কুলে। সেখানে মাথা নুইয়ে তুলে নিলেন এক মুঠো বালি। মেখে নিলেন কপালে।

আরও পড়ুন: আত্মহত্যা অপরাধ নয়, মতামত চাইছে কেন্দ্র

কাট টু, তিন বছর আগে প্রথম বার তাঁর সংসদে পা রাখার ছবিটি। গণতন্ত্রের মন্দিরে পা রাখার আগে সে দিন হাঁটু মুড়ে বসে কপাল ঠেকিয়েছিলেন তার সিঁড়িতে। সে ছিল সাফল্যের শিখরে পৌঁছে আগামীর শপথের মতো। একই সঙ্গে বিনয় ও নিষ্ঠার বার্তাও।

আজ ফের তেমনই আবেগতাড়িত ছবিটি মোদী মেলে ধরলেন নিজের জন্মস্থানে ফিরে। আজকের বার্তাটি আরও স্পষ্ট। আমি তোমাদেরই লোক। এখানে এক মেডিক্যাল কলেজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে নিজের মুখে বললেনও সে কথা, ‘‘২০০১ সাল থেকে কিছু লোক কত বিষই না ছুড়ে দিয়েছে। কিন্তু এই বডনগরই আমাকে শিখিয়েছে বিষ পান করে নিতে।’’ আর এ কথা বলার আগে আগেই ভূমিপুত্র মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘এখান থেকে যাত্রা শুরু করে কাশী (তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্র বারাণসী) পৌছেছি। বডনগরের কাশীও ভোলে বাবার শহর মতো এই বডনগরও শিবভূমি।

তবে কি মোদী আজ নীলকণ্ঠ অবতারে! না। কণ্ঠে বিষ ধারণ নয়, তার চেয়েও এক ধাপ এগিয়ে মোদী আজ দাবি করেছেন, ‘‘ভোলে বাবাই আমাকে শক্তি দিয়েছেন বিষ খেয়ে হজম করে ফেলার। তার জোরেই মাতৃভূমির সেবা করে যেতে পারছি এত দিন ধরে।’’ শুধু বিষপানের প্রসঙ্গ তোলা নয়, মোদী আজ স্থানীয় হাটকেশ্বর মন্দিরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপাণীকে সঙ্গে নিয়ে পুজোও করেছেন মহাদেবের।

রাজনীতির লোকজন বলছেন, নিজেকে ঘিরে আবেগের স্লুইস গেট খোলার এই চেষ্টার পিছনে ভোটের দায়ও কম নয়। মোদী গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিল্লিতে যাওয়ার পরে এটাই প্রথম ভোট তাঁর রাজ্যে। এই তিন বছরে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব অনেকটাই দুর্বল হয়েছে। ঝাঁঝরা হয়েছে অন্তর্দ্বন্দ্বে। ফলে গুজরাতে ভোট হবে মোদীর নামেই। তবে উন্নয়ন-পুরুষ হিসেবে তাঁকে তুলে ধরাই যথেষ্ট নয়, আবেগ বিপণনে প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব কুশলতাও ব্র্যান্ড মোদীর অঙ্গ। ভোটের আগে তাই এই ভাবেই নব নব রূপে গুজরাতে তাঁকে দেখা যাবে বলে মনে করছেন বিরোধীরা।

এর মোকাবিলায় কামড় বসানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারলেও সনিয়া গাঁধীর দল প্রায় দাঁতে দাঁত দিয়ে লড়ে মোদী-রাজ্য থেকে অহমেদ পটেলকে রাজ্যসভায় নিয়ে যেতে পেরে চাঙ্গা হয়েছিল কিছুটা। এখন দলের সভাপতি হওয়ার প্রক্রিয়া যত এগোচ্ছে, রাহুল গাঁধীও আগের চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয় হচ্ছেন জাতীয় রাজনীতি এবং ভোটমুখী গুজরাতে। আটঘাঁট বেঁধে সোশ্যাল মিডিয়াতেও টক্কর নিতে শুরু করেছেন মোদীর। নিশানা করছেন প্রধানমন্ত্রীকে। যার সূত্রে গুজরাতেও লোকের মোবাইলে মোবাইলে ঘুরছে, ‘বিকাশ গান্ডো থায়ো ছে’, বিকাশ বেপাত্তার মতো বার্তা।

এর পাল্টা ‘রাহুলবাবা’কে নিশানা করার দায়িত্বটা তুলে নিয়েছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। আর মোদী আঙুল তুলছেন বিগত ইউপিএ আমলের দিকে। তুলনা টানছেন নিজের জমানার সঙ্গে। আজও ব্যতিক্রম হয়নি তার। কিন্তু ভোট গুজরাতের। আর যত আলোচনা জাতীয় রাজনীতি ও তার কলাকুশলীদের নিয়ে! মোদী জানেন, ভোটের ময়দানে আমজনতার মন জয় করতে এটুকুই যথেষ্ট নয়। তাই এই রাজ্যের মানুষের কথায়-উপকথায় নিজেকে মিশিয়ে রাখতে, তাদের আবেগের সঙ্গে নিজেকে জুড়ে রাখার চেষ্টায় খামতি রাখতে চান না। বডনগরে এ দিন জনসভা শুধু নয়, রোডশো-ও করেছেন মোদী।

ভূমিপুত্রকে যার পর নাই উষ্ণ অভ্যর্থনাই জানিয়েছে বডনগর। পথের দু’ধারে উড়েছে আবির। পুষ্পবৃষ্টির মধ্যেই ধ্বনি উঠেছে মোদী-মোদী। জবাবে জনসভায় মোদী বলেছেন, ‘‘বডনগরের মানুষের এত ভালবাসা ছুঁয়ে গেল আমাকে। জোগাল দেশ সেবা করার নতুন শক্তি। শুভেচ্ছা জানাতে আসা মুখগুলি দেখে ছোটবেলার কত কথাই না মনে পড়ে গেল!’’ ছোট এই শহরটির রেল স্টেশনেই এক সময়ে চা বিক্রি করা ছেলেটি পরে ১৩ বছর কুর্সি সামলেছেন রাজ্যের। দলের হাতে সেটি অটুট রাখার দায়িত্বও এখন তাঁরই ঘাড়ে!

সেই কা়জটি মন ঢেলেই করে যাচ্ছেন মোদী।

Narendra Modi নরেন্দ্র মোদী Badnagar বডনগর
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy