Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

আসুন ভারতে কারখানা গড়ে তুলুন, আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

লাল ফিতের ফাঁস নয়, লাল কার্পেট। ভারত শুধু বড় বাজার নয়। পণ্য তৈরির জন্য লগ্নির আকর্ষণীয় গন্তব্যও। প্রতিশ্রুতির এই দুই তারে সুর বেঁধেই দেশি-বিদেশি শিল্পপতিদের মনজয়ের চেষ্টা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র। আহ্বান জানালেন, “আসুন, যাবতীয় পণ্য ভারতে তৈরি করুন। তার পর তা বিক্রি করুন এ দেশের বিশাল বাজারে। রফতানি করুন বাকি বিশ্বেও।” যে কথা এ বারের স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লার প্রাচীর থেকেই বলতে শুরু করেছেন তিনি।

মেক ইন ইন্ডিয়ার লোগো প্রকাশ প্রধানমন্ত্রীর।  ছবি: পিটিআই।

মেক ইন ইন্ডিয়ার লোগো প্রকাশ প্রধানমন্ত্রীর। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:১০
Share: Save:

লাল ফিতের ফাঁস নয়, লাল কার্পেট।

ভারত শুধু বড় বাজার নয়। পণ্য তৈরির জন্য লগ্নির আকর্ষণীয় গন্তব্যও।

প্রতিশ্রুতির এই দুই তারে সুর বেঁধেই দেশি-বিদেশি শিল্পপতিদের মনজয়ের চেষ্টা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র। আহ্বান জানালেন, “আসুন, যাবতীয় পণ্য ভারতে তৈরি করুন। তার পর তা বিক্রি করুন এ দেশের বিশাল বাজারে। রফতানি করুন বাকি বিশ্বেও।” যে কথা এ বারের স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লার প্রাচীর থেকেই বলতে শুরু করেছেন তিনি।

এ দিন দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে মোদী যখন এ কথা বলছেন, তখন দর্শকাসন চাঁদের হাট। প্রথম সারিতে মুকেশ অম্বানী, সাইরাস মিস্ত্রি, আজিম প্রেমজি, কুমার মঙ্গলম বিড়লা, ওয়াই সি দেবেশ্বরের মতো দেশের প্রথম সারির শিল্পপতিরা। উপস্থিত সুজুকি, লকহিড মার্টিনের মতো অন্তত পাঁচশো বহুজাতিকের শীর্ষ ব্যক্তিরাও। এমনকী বসার জায়গা না-পেয়ে অনেকে দাঁড়িয়েও থেকেছেন!

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম মার্কিন সফরে রওনা দেওয়ার ঠিক আগে এই নক্ষত্রখচিত সমাবেশে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র প্রচার শুরু করে দিলেন মোদী। দেশের অর্থনীতির হাল ফেরাতে যাকে তাঁর মোক্ষম দাওয়াই বলে মনে করছেন অনেকে। কারণ তাঁদের মতে, ভারতকে মূলত বিশাল সংখ্যক মধ্যবিত্তের সম্ভাবনাময় বাজার হিসেবে দেখতেই অভ্যস্ত বাইরের দুনিয়া। সেই ধারণাকে আমূল বদলাতে চাইছেন মোদী। চাইছেন, দেশি-বিদেশি সংস্থা এখানে কারখানা খুলুক। যাতে অর্থনীতির চাকায় গতি ফেরে। তৈরি হয় কাজের সুযোগ।

কিন্তু শুধু আমন্ত্রণে যে লগ্নি আসে না, গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে অভিজ্ঞতা থেকে তা বিলক্ষণ জানেন মোদী। যে কারণে এ দিন প্রথম থেকেই আটঘাট বেঁধে নেমেছেন তিনি। সম্প্রতি বিমা ও প্রতিরক্ষায় বিদেশি লগ্নির পথ সুগম করা হয়েছে। এ দিন শ্রম আইন সংস্কারের ইঙ্গিত দিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। এমনকী উপস্থিত অনেকে বলছেন, পরিকল্পনার স্পষ্ট ছাপ এ দিন উদ্বোধন হওয়া মেক ইন ইন্ডিয়ার ওয়েবসাইটেও।

মোদীর দাবি, “গত দু’তিন বছরে অনেকে ভারত ছেড়ে চলে যেতে চাইছিলেন। গত তিন মাসে সেই মনোভাব বদলেছে।” কিছুটা শিল্পের মন পড়েই তাঁর সংযোজন, “হঠাৎ নীতি বদলালে, সিবিআই গেলে, বিশ্বাস হারিয়ে যায়। আমি আপনাদের কাছে তা-ই শুনেছি। এই ছবি বদলাতে চাই।” বিদেশি লগ্নির পিছনে ছুটতে গিয়ে তাঁর সরকার যে সাধারণ মানুষকে ভুলবে না, তা বোঝাতে গিয়ে তাঁর মন্তব্য, এফডিআই মানে ফার্স্ট ডেভেলপ ইন্ডিয়া-ও। তাঁর আশ্বাস, সমস্যা হলে, কেন্দ্র হস্তক্ষেপ করবে। কথা বলবে রাজ্য সরকারের সঙ্গে। জোর দেবে পরিকাঠামো তৈরির উপরেও। বিশ্ব ব্যাঙ্কের রিপোর্ট অনুযায়ী, লগ্নির পরিবেশের মাপকাঠিতে ভারত এখন বিশ্বে ১৩৪-তম। সেখান থেকে দেশকে প্রথম পঞ্চাশে টেনে তুলতে চান তিনি।

মোদী-জমানায় আস্থা যে ফিরছে, তা এ দিন খোলা গলায় স্বীকার করেছেন অম্বানী, মিস্ত্রি, প্রেমজি, বিড়লার মতো শিল্পপতিরা। এই লক্ষ্যে কেন্দ্রের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে শিল্পমহল। ঠিক যেমনটা এতদিন ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাত’ শিল্প সম্মেলনের মঞ্চে দেখা যেত। সকলেই মেনে নিয়েছেন, ভারতকে উৎপাদন শিল্পের গন্তব্য হিসেবে গড়ে তুলতে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র কর্মসূচি একেবারে সঠিক পদক্ষেপ। মুকেশের দাবি, তাঁর গোষ্ঠী রিলায়্যান্স আগামী ১২ থেকে ১৫ মাসে লগ্নি করবে ১ লক্ষ ৮০ হাজার কোটি টাকা। তাতে তৈরি হবে বিপুল কাজের সুযোগও। প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরে যেতে না-পারলেও আমেরিকায় তিনি যাচ্ছেন।

মোদীর বিশ্বাস, “আমন্ত্রণ জানানোর দরকার নেই। বিশ্ব ভারতে আসতে তৈরি। আমাদের শুধু তাদের ঠিকানা দিতে হবে।” বিভিন্ন দেশে ভারতীয় দূতাবাস থেকেও আজ এই প্রচার কর্মসূচি শুরু হয়েছে। যার প্রতীক (লোগো) সিংহ। মোদী একে সিংহের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে একে টক্কর দিতে এ দিনই লগ্নি টানতে একগুচ্ছ ব্যবস্থার কথা ঘোষণা করে প্রচারে নেমেছে চিনও। যাকে ‘মেড ইন চায়না’ নাম দিয়েছে তারা।

মোদীকে ঘিরে উন্মাদনা এ দিন ছিল চোখে পড়ার মতো। সভাকক্ষে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। অনেকে বসেছেন সিঁড়িতেই। মোদীর হিন্দি বক্তৃতার ইংরেজি অনুবাদ ইয়ারফোনে শুনতে শুনতেই তার প্রশংসা করেছেন বিদেশি শিল্পপতিরা। লগ্নির গন্তব্য হিসেবে মোদী-সরকার ২৫টি ক্ষেত্রে জোর দিচ্ছে। তার জন্য তৈরি পুস্তিকা পেতেও কাড়াকাড়ি হয়েছে রীতিমতো।

কিন্তু এই উন্মাদনার সঙ্গে মানানসই লগ্নির পরিবেশ কি সত্যিই তৈরি করতে পেরেছেন মোদী?

অন্তত এ দিন শিল্পমহলের জবাব, ‘হ্যাঁ’। তাঁদের দাবি, এই ক’দিনে প্রশাসনে গতি এসেছে। ঘুচেছে নীতিপঙ্গুত্বের সমস্যা। সংস্কারে গতি আনার চেষ্টা হয়েছে। শিল্পের লাইসেন্সের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া সহজ হয়েছে। নানা রকম অনুমোদন ও ছাড়পত্রের প্রক্রিয়া সহজ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারগুলিকেও। তার উপর এ দিন আবার ইন্সপেক্টর-রাজ খতম করার বার্তা দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী।

বিদেশি পর্যটক টানতে ‘ইনক্রেডিবল্ ইন্ডিয়া’র প্রচার হয়েছিল। তার পরিকল্পনা করেছিলেন অমিতাভ কান্ত। তিনিই এখন শিল্পনীতি ও উন্নয়ন দফতরের সচিব হিসেবে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র প্রচারের দায়িত্বে। মোদী বলেন, “আমার টিম এখন ইতিবাচক ভাবছে। আমার থেকে দু’কদম

আগে দৌড়চ্ছে।”

কংগ্রেস অবশ্য মোদীর এই প্রচারের সমালোচনা করে একে নতুন বোতলে পুরনো মদের আখ্যা দিয়েছে। কংগ্রেস মুখপাত্র আনন্দ শর্মার দাবি, “ইউপিএ জমানায় যে সব সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সেগুলিই নতুন মোড়কে তুলে ধরছেন মোদী-সরকার।” মোদী অবশ্য আগেই বলেছেন, “প্রথমে লোকে বলছিল, আমরা যা করছি, তার সবই ওঁরা শুরু করেছিলেন। আর বলবেন না। তা হলে আপনাদের ব্যর্থতার প্রশ্নও আসবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE