Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

উধাও নীরবতার ভাষা, প্রয়াত ছবি

‘নীরবতারও ভাষা আছে/আমি ওই ভাষা শুনেছি’—নীরবতার ভাষার সেই শ্রোতা কবি ছবি গুপ্তার জীবনাবসান হল। ১৪ মাস সুন্দরীমোহন সেবাসদনে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। আজ সকালে সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।

প্রয়াত কবিকে শেষ শ্রদ্ধা জেলা উন্নয়ন কমিশনার মধুমিতা চৌধুরীর। সোমবার শিলচরে। ছবি: স্বপন রায়

প্রয়াত কবিকে শেষ শ্রদ্ধা জেলা উন্নয়ন কমিশনার মধুমিতা চৌধুরীর। সোমবার শিলচরে। ছবি: স্বপন রায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলচর শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৫৪
Share: Save:

‘নীরবতারও ভাষা আছে/আমি ওই ভাষা শুনেছি’—নীরবতার ভাষার সেই শ্রোতা কবি ছবি গুপ্তার জীবনাবসান হল। ১৪ মাস সুন্দরীমোহন সেবাসদনে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। আজ সকালে সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।

ছবি গুপ্ত ছিলেন নিঃসন্তান। স্বামী মারা গিয়েছেন অনেক দিন আগে। ভাই-ভাইপোরা অম্বিকাপট্টিতে ছিলেন বলে তারাপুরের বাড়ি বিক্রি করে দিয়েছিলেন। বাসিন্দা হন অম্বিকাপট্টিরই। কিন্তু মৃত্যু আগেই ছিনিয়ে নিয়ে যায় সেই ভাই-ভাইপোকে। অন্য দুই ভাই থাকেন লন্ডনে। দীর্ঘদিন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।

তাই বলে চিকিৎসা বা দেখাশোনায় ত্রুটি ছিল না। ২০১৫ সালের ১০ নভেম্বর অসুস্থতা বাড়লে তাঁর দায়িত্ব ভাগ করে নেয় মাতৃভাষা সুরক্ষা সমিতি এবং সুন্দরীমোহন সেবাসদন। তাঁর থাকা-খাওয়া-চিকিৎসার ভার নেন সেবাসদনের প্রধান কুমারকান্তি দাস। এক জন পরিচারিকা-সহ অন্যান্য খরচ বহন করছিল সুরক্ষা সমিতি। বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন-সহ অন্য বেশ কিছু সংগঠনও তাঁর যে কোনও সাহায্যে প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়ে রেখেছিল। আর্থিক সহযোগিতা করেন প্রাক্তন ছাত্রনেতা প্রদীপ দত্তরায়।

এ দিন শহরের সাহিত্য-সংস্কৃতি সংগঠকরা কবির মৃতদেহ নিয়ে শোভাযাত্রার আয়োজন করে। শ্রীকোণার সেবাসদন থেকে মৃতদেহ এনে শায়িত রাখা হয় গাঁধীবাগে। সেখানে বিধানসভার ভারপ্রাপ্ত স্পিকার দিলীপকুমার পাল, জেলা উন্নয়ন কমিশনার মধুমিতা চৌধুরী, পুরসদস্য অভ্রজিৎ চক্রবর্তী এবং বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন, মৈত্রেয়ী সঙ্ঘ, দ্বিজেন্দ্র-ডলি মেমোরিয়াল ট্রাস্ট, কবি করুণারঞ্জন অনুশীলন পর্ষদ, লায়নেস ক্লাব, আর্য সংস্কৃতি বোধনী সমিতি-সহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা তাঁকে শেষশ্রদ্ধা জানান। পরে শোভাযাত্রা যায় তাঁর অম্বিকাপট্টির আবাসন হয়ে শিলচর শ্মশানঘাটে। গানে-কবিতায় শেষ বিদায় জানান শিলচরের মানুষ। উপস্থিত ছিলেন চামেলি কর, সুবীর কর, সাধন পুরকায়স্থ, দিলীপ কর, স্নিগ্ধা নাথ দাস, গোরা চক্রবর্তী।

ছবিদেবী ছিলেন সাহিত্য সংগঠকও। ১৯৭২ সালে তারাপুরে শিশু-কিশোরদের নিয়ে তৈরি করেছিলেন শিশু শিল্পী চক্র। শিশুদের দিয়ে নাটক-গান-বাজনা করতেন। সেখান থেকেই জন্ম নেয় আর্য সংস্কৃতি বোধনী সমিতি। ১৯৯০ সালে তৈরি করেন লিটল ম্যাগ লিটারারি ক্লাব। তরুণ প্রজন্মকে লেখালেখিতে উৎসাহিত করতেন। ‘মা নিষাদ’ নামে নিজে একটি সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করেছেন। নাগাড়ে ২৪ বছর তিনি এই সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করেন। অসুস্থতার দরুন নিজে তাঁর পত্রিকার রজতজয়ন্তী সংখ্যা প্রকাশ করতে না পারলেও গত বছর দিলীপ নাথের নেতৃত্বে তাঁর শুভানুধ্যায়ীরা সেটি প্রকাশ করেন। অসম সরকার ছবি গুপ্তকে সাহিত্য পেনশনে সম্মানিত করে। বহু সংস্থা বিভিন্ন সময় তাঁকে সংবর্ধনা জানায়। শিলচর জেলা কংগ্রেস অফিসে আজ তাঁর মৃত্যুতে দু’মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Poet
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE