বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অস্থিরতা নয়াদিল্লি এবং ঢাকার সম্পর্কেও প্রভাব ফেলেছে। দুই দেশের সম্পর্কের অবনতির জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসকেই দায়ী করলেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক হিংসাত্মক ঘটনার কারণও ব্যাখ্যা করেছেন আওয়ামী লীগ নেত্রী। হাসিনার অভিযোগ, অন্তর্বর্তী সরকার আদতে ক্ষমতাহীন। তাই বাংলাদেশে হিংসাই এখন স্বাভাবিক ঘটনা।
হাসিনা সংবাদসংস্থা এএনআই-কে ইমেল মারফত একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের সাম্প্রতিক নেতিবাচকতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে হাসিনা বলেন, “সম্পর্কের অবনতি, যা আপনারা লক্ষ করছেন, তা পুরোপুরি ইউনূসের তৈরি। তাঁর (ইউনূস) সরকার ভারতের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিচ্ছে, সংখ্যালঘুদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছে এবং চরমপন্থীদের বিদেশনীতি নির্ধারণ করার সুযোগ দিচ্ছে।” তবে ভারত এবং বাংলাদেশের সম্পর্কের স্থায়িত্ব নিয়ে আশাপ্রকাশ করেছেন তিনি। হাসিনা বলেন, “ভারত বাংলাদেশের বিশ্বস্ত বন্ধু এবং বহু দশকের সঙ্গী।” একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “আমি আশাবাদী যে, বৈধ সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বাংলাদেশ (ভারতের সঙ্গে) বাস্তববাদী বোঝাপড়ার রাস্তায় ফিরবে, যা আমরা গত ১৫ বছর ধরে বজায় রেখেছিলাম।”
এএনআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারেই বাংলাদেশে সাম্প্রতিক হিংসার কারণ ব্যাখ্যা করে হাসিনা বলেন, “এই অশান্তি ইউনূস জমানার মদতপুষ্ট চরমপন্থীদের তৈরি করা। এরাই ভারতীয় দূতাবাসের সামনে মিছিল করেছে, আমাদের সংবাদপত্রগুলির অফিসে হামলা করেছে, সংখ্যালঘুদের মেরেছে, আমাকে, আমার পরিবারের সদস্যদের প্রাণরক্ষায় দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে।” ইউনূস সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের জেল থেকে ছেড়ে দিয়ে হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেছেন হাসিনা।
বাংলাদেশ নতুন করে উত্তপ্ত হওয়ার তিন দিন পরে রবিবার প্রথম বিবৃতি জারি করেছিল ভারত সরকার। রবিবার ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল একটি বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশের পরিস্থিতির দিকে নিবিড় ভাবে নজর রেখেছে ভারত। সে দেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের আধিকারিকেরা যোগাযোগ রাখছেন। সংখ্যালঘুদের উপর হামলা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন— তা তাঁদের জানানো হয়েছে। দীপুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। ভারত সেই আবেদন জানিয়েছে।’’
ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের ওই বিবৃতির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাল্টা বিবৃতি প্রকাশ করে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিদেশ মন্ত্রক। ময়মনসিংহের ঘটনা নিয়ে নয়াদিল্লির বিবৃতি নিয়ে আপত্তি জানায় ঢাকা। ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ওই বিবৃতিতে দাবি করে, ময়মনসিংহের ঘটনা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। ভারতের কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা বলে দেখাচ্ছেন বলে দাবি করে তারা। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে দাবি করা হয়, বাংলাদেশে একজন নাগরিকের নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে সংখ্যালঘু নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত করার কোনও যৌক্তিকতা নেই। ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের বিদেশ মন্ত্রক এ-ও দাবি করে যে, ময়মনসিংহের ঘটনায় তারা দ্রুত পদক্ষেপ করেছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারও করেছে।