মেঘালয়ে রাজা রঘুবংশীর খুন নিয়ে যখন তোলপাড় চলছে, উত্তর-পূর্বেই আরও এক রাজ্যে ‘ত্রিকোণ’ প্রেম ঘিরে খুনের ঘটনা প্রকাশ্যে এল। এ বার ঘটনাস্থল ত্রিপুরা। এই রাজ্যেই তুতো বোনের প্রেমিককে খুনের অভিযোগ উঠল এক চিকিৎসক-সহ ছ’জনের বিরুদ্ধে। শুধু খুন করাই নয়, দেহ লোপাট করতে যুবকের দেহ প্লাস্টিকে মুড়িয়ে দোকানের আইসক্রিম রাখার ফ্রিজারেও লুকিয়ে রাখা হয়েছিল।
আগরতলা থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে ধলাই জেলার গান্দাচেরা বাজার এলাকার ঘটনা। গত ৮ জুন থেকে নিখোঁজ ছিলেন এক যুবক। তাঁর খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছিল পুলিশ। অবশেষে গান্দাচেরা বাজারে একটি দোকানের ভিতরে ফ্রিজ থেকে যুবকের দেহ উদ্ধার হয়েছে। পশ্চিম ত্রিপুরার এক শীর্ষ পুলিশ আধিকারিক কিরণ কুমার কে জানিয়েছেন, প্রাথমিক ভাবে এটি ত্রিকোণ প্রেমের ঘটনা বলে মনে হচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত যুবক বিদ্যুৎমিস্ত্রি ছিলেন। তিন দিন নিখোঁজ থাকার পর বুধবার ওই যুবকের দেহ উদ্ধার হয়েছে। তদন্তকারী এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ওই যুবকের সঙ্গে গান্দাচেরা এলাকার এক তরুণীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ঘটনাচক্রে, সেই তরুণীর প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন তাঁরই তুতো দাদা দিবাকর সাহা। পেশায় তিনি এক জন চিকিৎসক।
আরও পড়ুন:
পুলিশ সূত্রে খবর, গত ৮ জুন দক্ষিণ ইন্দ্রনগরের কবরখালা এলাকায় জয়দীপ দাসের বাড়িতে ওই যুবককে ডেকে নিয়ে আসেন দিবাকর। তাঁকে উপহার দেওয়ার অছিলায় ডেকে নিয়ে আসা হয় বলে অভিযোগ। জয়দীপের বাড়িতে ওই যুবক আসতেই তাঁর উপর দিবাকর এবং তাঁর দুই সঙ্গী অনিমেষ যাদব এবং নবনীতা দাস হামলা চালান। অভিযোগ, যুবককে প্রথমে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়। তার পর যুবকের দেহ প্লাস্টিকে মুড়িয়ে ট্রলিব্যাগে ভরে রাখা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার দু’দিন আগে ট্রলিব্যাগটি কিনে নিয়ে আসা হয়েছিল। আর এখান থেকেই পুলিশের সন্দেহ, কী ভাবে খুন করা হবে, তার পর কী ভাবে দেহ লোপাট করা হবে, সব আগে থেকে পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন অভিযুক্তেরা।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, ৯ জুন সকালে দিবাকরের বাবা দীপক এবং মা দেবিকা সাহা ট্রলিব্যাগে যুবকের দেহ নিয়ে যান গান্দাচেরা বাজারে। সেখানে তাঁদের একটি দোকান রয়েছে। সেই দোকানে রাখা আইসক্রিমের ফ্রিজারে যুবকের দেহ ভরে রাখেন দীপক এবং দেবিকা। যুবকের খোঁজে তদন্তে নেমে তাঁর প্রেমিকার হদিস পায় পুলিশ। সেই সূত্র ধরে তরুণীর তুতো দাদার হদিস মেলে। তার পরই মঙ্গলবার চিকিৎসক দিবাকরকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ করে তাঁর বাবা, মা-সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় দিবাকরকেও।
পুলিশ সুপার কিরণ কুমার জানিয়েছেন, হত্যার নেপথ্যে রয়েছে ত্রিকোণ প্রেম। দিবাকরের বোনের সঙ্গে ওই যুবকের প্রেম ছিল। আবার তুতো বোনের প্রেমে পড়েছিলেন দিবাকর। তাঁর প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। তরুণী এবং দিবাকরের মোবাইলের মেসেজেও সেই ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। এই ঘটনায় মোট ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।