Advertisement
০৫ মে ২০২৪

কনভয়ে জঙ্গি হামলা, মণিপুরে নিহত ৪ পুলিশ

মণিপুরে ফের জঙ্গি-নিশানায় নিরাপত্তা বাহিনী। মোরে ও টেংনাউপালে পরপর হামলায় মারা গেলেন ৪ পুলিশকর্মী।

জঙ্গি হানায় বিধ্বস্ত পুলিশের ট্রাক। বৃহস্পতিবার মণিপুরে। — নিজস্ব চিত্র

জঙ্গি হানায় বিধ্বস্ত পুলিশের ট্রাক। বৃহস্পতিবার মণিপুরে। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৯
Share: Save:

মণিপুরে ফের জঙ্গি-নিশানায় নিরাপত্তা বাহিনী। মোরে ও টেংনাউপালে পরপর হামলায় মারা গেলেন ৪ পুলিশকর্মী।

১৯ নভেম্বর অসমের পেঙেরি, ২৬ নভেম্বর চাণ্ডেল ও ৩ ডিসেম্বর অরুণাচলে সেনা ও আধা সামরিক বাহিনীর কনভয়ে হামলা চালিয়েছিল আলফা-খাপলাং-এনডিএফবি ও মণিপুরের জঙ্গি সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চ। পুলিশের বক্তব্য, আজ ওই হামলায় জড়িত থাকতে পারে সংঘর্ষবিরতিতে থাকা এনএসসিএন (আইএম)-এর।

মণিপুরে নাগা এলাকাগুলি ভাগ করে নতুন সাতটি জেলা তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবাদে নাগাদের আন্দোলন ও অবরোধ চলছে। রাজ্য সরকারের দাবি, আন্দোলনে পিছন থেকে মদত দিচ্ছে আইএম জঙ্গিরা। অবরোধকারীদের গুলিতে জখম হয়েছেন একাধিক ট্রাক চালক। উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই একের পর এক নতুন জেলা উদ্বোধন করে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী ওক্রাম ইবোবি সিংহ।

এ দিন নবগঠিত টেংনাউপাল জেলা উদ্বোধন করতে যান ইবোবি। তাঁর সফরের আগে রাস্তার নিরাপত্তা দেখতে যায় ‘রোড ওপেনিং পার্টি’। পুলিশ সূত্রে খবর, সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ লোকচাও এলাকায় মোরে থেকে ইম্ফলগামী পুলিশ কনভয়ে হামলা চালায় জঙ্গিরা। চাণ্ডেলের অতিরিক্ত এসপি দু’টি জিপ ও একটি মিনি ট্রাকের কনভয় নিয়ে টেঙনাউপালের দিকে যাচ্ছিলেন। তখনই জঙ্গিদের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গুলি, গ্রেনেড বিস্ফোরণে গুরুতর জখম হন একটি ট্রাকে থাকা পুলিশকর্মীরা। তিন জন ঘটনাস্থলেই মারা যান। তাঁদের নাম আয়ুব খাম, গারেই মারি ও জামখলুন বাইতে। জখম হন ৬ জন। সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ ফের হানা দেয় জঙ্গিরা। বংয়াং এলাকায় ফের থৌবাল পুলিশের কনভয়ের দিকে গুলি চলে। মারা যান ওয়াই জীবন সিংহ নামে এক হাবিলদার। রাতে তামেলঙের নোনেতেও একটি সেনা শিবিরের দিকে গুলি চালায় জঙ্গিরা। তাতে দু’জন জওয়ান জখম হন।

মুখ্যমন্ত্রী ওই হামলার পরেও জেলা উদ্বোধনের অনুষ্ঠান বাতিল করেননি। তিনি সকাল ৯টা নাগাদ নির্দিষ্ট সময়েই টেঙনাউপাল জেলার উদ্বোধন করে জানান— কোনও হুমকি ও নাশকতার কাছে মাথা নত করবে না সরকার। তিনি নিহত কনস্টেবলদের পরিবারপিছু পাঁচ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। ঘটনার নিন্দা করে তিনি বলেন, ‘‘এ ভাবে জোর করে নাগারা মণিপুরের জমি দখল করতে পারবে না।’’ তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতি ঢাল এনএসসিএন (আইএম) রাজ্যে অশান্তি ছড়াচ্ছে। পাশাপাশি তিনি জানান, আইএম-এর সঙ্গে সংঘর্ষবিরতি শুধু
নাগাল্যান্ডে প্রযোজ্য।

নতুন জেলা গঠনের প্রতিবাদে এ দিন রাজ্যব্যাপী আন্দোলনের ডাক দিয়েছে ‘ইউনাইটেড নাগা কাউন্সিল’। ইউএনসি এ দিন নাগা অধ্যূষিত জেলাগুলিতে জনসভা করে রাজ্যপালের উদ্দেশে স্মারকলিপি পাঠায়। তারা গুলি চালনা ও ট্রাকচালকদের উপরে অত্যাচারের নিন্দা করে নাগাদের সংযত থাকতে বলে। অন্য দিকে থৌবাল জেলার লিলংয়ের নুঙ্গেই এলাকায় গত কাল সন্ধেয় শুরু হয় গোষ্ঠী সংঘর্ষ। পোড়ানো হয় কয়েকটি বাড়ি। চলছে গুলি। জখম হয়েছে দু’জন।

প্রশাসনিক সূত্রে খবর, নাগা সংগঠনগুলির আন্দোলন ও তাদের সমর্থনে নাগা জঙ্গিদের সশস্ত্র ‘প্রতিরোধ’ মোকাবিলায় রাজ্য সরকার কেন্দ্রের কাছে ৬০ কোম্পানি অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়েছে। ইতিমধ্যে ৩০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী রাজ্যে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ৪৫ দিন ব্যাপী অর্থনৈতিক অবরোধ এখনও ওঠানো যায়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মণিপুরে প্রতিনিধি পাঠিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বিশেষ সচিব মহেশ কুমার সিংলার সঙ্গে বৈঠকে রাজ্য পুলিশের ডিজি এল এম খাউতে অতিরিক্ত বাহিনীর আবেদন জানান। বৈঠকে আসাম রাইফেলসের কর্তারা ও রাজ্যের মুখ্যসচিব ও নবকিশোর হাজির ছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

police killed Convoy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE