Advertisement
E-Paper

মুসলিমদের প্রোফাইলে কাশ্মীর নিয়ে পোস্ট হলেই উড়িয়ে দিচ্ছে ফেসবুক!

‘ইসলামোফোবিয়া’। ফেসবুক এখন এই রোগে ভুগছে। এক রাশ উষ্মা আর ক্ষোভ নিয়ে কথাগুলো বললেন রিজওয়ান শাহিদ। কাশ্মীরি যুবক রিজওয়ান ফেসবুকে নিজের প্রোফাইল পিকচার বদলে দিয়েছিলেন সম্প্রতি।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৬ ১৫:০৪
উত্তপ্ত কাশ্মীরে এ বার অভিযোগ উঠল ফেসবুক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও। —ফাইল চিত্র।

উত্তপ্ত কাশ্মীরে এ বার অভিযোগ উঠল ফেসবুক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও। —ফাইল চিত্র।

‘ইসলামোফোবিয়া’। ফেসবুক এখন এই রোগে ভুগছে।

এক রাশ উষ্মা আর ক্ষোভ নিয়ে কথাগুলো বললেন রিজওয়ান শাহিদ। কাশ্মীরি যুবক রিজওয়ান ফেসবুকে নিজের প্রোফাইল পিকচার বদলে দিয়েছিলেন সম্প্রতি। বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর নিজের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে নিজের ছবি সরিয়ে বুরহানের ছবি লাগিয়েছিলেন রিজওয়ান। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এর পর ব্লক করে দিয়েছে রিজওয়ান শাহিদের প্রোফাইল। দীর্ঘ দিনের পুরনো ফেসবুক অ্যাকাউন্টটা আর ব্যবহার করতে পারছেন না রিজওয়ান। সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকতে হলে আবার নতুন অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে, নতুন করে সোশ্যাল মিডিয়ার বন্ধুদের খুঁজতে হবে, সব যোগাযোগ নতুন করে জুড়তে হবে।

শুধু রিজওয়ান শাহিদ নন, গত কয়েক দিনে অনেক কাশ্মীরির প্রোফাইল-ই ব্লক করে দিয়েছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। কারও কারও প্রোফাইল পুরোপুরি ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে। কারও কারও ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু পোস্ট ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে। ইংরেজি সংবাদপত্র ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এ বিশদে প্রকাশিত হয়েছে এই খবর। হিজবুল মুজাহিদিন কম্যান্ডার বুরহান ওয়ানি সেনা অভিযানে নিহত হওয়ার পর থেকে উপত্যকা যে ভাবে উত্তপ্ত, তার আঁচ ফেসবুকেও পড়েছে। তার পরই কড়াকড়ি শুরু করেছেন ওই সোশ্যাল মিডিয়া কর্তৃপক্ষ। বুরহান ওয়ানি বা কাশ্মীরের পরিস্থিতি সম্পর্কে কাউকে ফেসবুকে কোনও ‘বিতর্কিত’ পোস্ট করতে দেখলেই, তা ডিলিট করে দেওয়া হচ্ছে। কারও কারও ক্ষেত্রে প্রোফাইল ব্লক বা ডিলিটও করে দেওয়া হচ্ছে।

কাশ্মীরিদের একাংশের অভিযোগ, শুধু মুসলিমদের ফেসবুক প্রোফাইলই ব্লক করা হচ্ছে। জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করছেন। কিন্তু মুসলমিদের পোস্ট নিয়ে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ যতটা স্পর্শকাতর হয়ে পড়েছেন, অন্যদের ‘বিতর্কিত’ পোস্ট সম্পর্কে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের আচরণ মোটেই ততটা কঠোর নয়।

৮ জুলাই বুরহানের মৃত্যুর পর থেকে উপত্যকা যত উত্তাল হয়েছে, ততই সরকারি নিষেধাজ্ঞার পরিমাণও বেড়েছে। কারফিউ তো ছিলই। শ্রীনগর ছাড়া অন্য সব এলাকায় মোবাইল, ল্যান্ডলাইন, ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ করে দেওয়া হয়। কাশ্মীরের বিভিন্ন সংবাদপত্রের অফিসে হানা দিয়ে ছাপাখানা বন্ধ করে দেয় পুলিশ। বাজেয়াপ্ত করা হয় সংবাদপত্রের হাজার হাজার কপি। বেশ কয়েক দিন উপত্যকায় সংবাদপত্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। মঙ্গলবার সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সংবাদপত্রের সম্পাদকরা জানিয়েছেন, যত ক্ষণ না সরকার ক্ষমা চাইছে, তত ক্ষণ কোনও খবরের কাগজই কাশ্মীরে প্রকাশিত হবে না। সরকারের তরফে এখনও ক্ষমা চাওয়া হয়নি। ফলে উপত্যকায় খবরের কাগজও মিলছে না। গোটা রাজ্যের খবরাখবর পাওয়ার জন্য ভরসা শুধু দু’টি টেলিভিশন চ্যানেল। এবং সোশ্যাল মিডিয়া। কিন্তু, ফেসবুক কর্তৃপক্ষ কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে এখন এতটাই সতর্ক যে, কোনও প্রোফাইলে কাশ্মীর সংক্রান্ত কোনও বিতর্কিত কথোপকথন, ছবি বা ভিডিও দেখলেই তা সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

কাশ্মীরি ব্লগার তথা পিএইচডি ছাত্র জাগার ইয়াসির জানালেন, সোশ্যাল মিডিয়াই এখন যোগাযোগ আর খবর আদানপ্রদানের একমাত্র মাধ্যম উপত্যকায়। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে ফেসবুক প্রোফাইলটাও কর্তৃপক্ষ এক সপ্তাহের জন্য ব্লক করে দিয়েছে। একাধিক পোস্ট এবং বুরহান ওয়ানিকে নিয়ে লেখা তাঁর ব্লগ ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে।

‘কাশ্মীর মনিটর’-এর সাংবাদিক মুবাশির বুখারি বললেন, ‘‘অফিসে এসে ফেসবুক খুলে দেখতে পেলাম, আমার পোস্ট করা একটা ভিডিও পেজ থেকে ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে। সৈয়দ আলি শাহ গিলানি (বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা) বুরহান ওয়ানির হত্যার নিন্দা করে যে ভাষণ দিয়েছেন, তার ভিডিও। আগেও এমন অনেক ভিডিও পোস্ট করেছি। কিন্তু ফেসুবক কর্তৃপক্ষ কখনও তা ডিলিট করেনি।’’

কাশ্মীরি শিক্ষাবিদ হুমা দারের অভিজ্ঞতা আরও তিক্ত। হুমা কাশ্মীরে এখন থাকেন না। তিনি ক্যালিফোর্নিয়ায় থাকেন। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান। গত রবিবার বুরহান ওয়ানির শেষকৃত্যের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন হুমা দার। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তাঁর প্রোফাইলটাই ডিলিট করে দিয়েছেন। ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং ইউসি-বার্কলে-তে ‘সিনেমা ও সন্ত্রাসবাদ’ বিষয়ের শিক্ষক হুমা দার হতভম্ব। তিনি বলেন, ‘‘বুরহান যে দিন খুন হলেন, সে দিন ভারত থেকে বেশ কয়েক জন বন্ধু-বান্ধবের মেসেজ এল। তাঁরা জানালেন, তাঁদের পোস্ট করা বেশ কিছু ছবি ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে। আমি ভাবলাম, নিশ্চয়ই ভারত সরকার কোনও কলকাঠি নাড়ছে। কিন্তু তার পর দেখলাম আমার সঙ্গে আমেরিকাতেও একই ঘটনা ঘটল। ফেসবুক সদর দফতর থেকে আমি মাত্র দু’কিলোমিটার দূরে থাকি। আমি কখনও ভাবিনি, এই রকম ঘটনা আমার সঙ্গে ঘটবে!’’

আরও পড়ুন: কাশ্মীরে বড় ভুল সরকারের, মুখর অমর্ত্যও

শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, পড়ুয়া, সাধারণ কাশ্মীরি তরুণ— ফেসবুকের ‘কড়াকড়ি’র শিকার অনেকেই। তাঁদের অধিকাংশেরই অভিযোগ, কাশ্মীরে মুসলিমদের প্রোফাইলের উপরেই বেশি নজরদারি চলছে। অন্য অনেকে বিতর্কিত মন্তব্য বা পোস্ট করে পার পেয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কোনও মুসলিমের প্রোফাইলে বুরহান ওয়ানির প্রতি সহানুভূতির আঁচ পেলেই, ‘অতি সক্রিয়’ হয়ে উঠছে জুকেরবার্গের সংস্থা।

Facebook Kashmir Unrest Burhan Wani
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy