আর মুখ বুজে থাকতে পারছিলাম না

ফেসবুকে একটি আবেগপ্রবণ পোস্ট। যা করেছেন, তা কেন করেছেন, তার দীর্ঘ ব্যাখ্যা।

প্রাক্তন প্রেমিক নেস ওয়াদিয়ার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মামলা দায়ের করার দিন থেকেই প্রশ্ন উঠেছে। শেষে সে সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন অভিনেত্রী প্রীতি জিন্টা। নেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে কেন তাঁকে পুলিশের কাছে যেতে হল, মূলত তার ব্যাখ্যাই আজ করেছেন প্রীতি। জানিয়েছেন, তাঁর অত্যন্ত কাছের মানুষটি যখন তাঁকে দিনের পর দিন ভয় দেখাতেন। হুমকিও দিতেন। অপমান আর নিগ্রহের পারদ এতটাই চড়ে যায় যে, পুলিশের কাছে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনও পথ তাঁর সামনে খোলা ছিল না। “আর মুখ বুজে থাকা সম্ভব হচ্ছিল না,” ফেসবুকে লিখেছেন প্রীতি।

১২ জুন মেরিন ড্রাইভ থানায় গিয়ে নেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন প্রীতি। আজ তিনি জানিয়েছেন, সেই ঘটনার পর থেকেই সাধারণ মানুষ, বন্ধু এবং সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে এমন কিছু প্রতিক্রিয়া তিনি পেতে শুরু করেন, যা দেখে তিনি স্তম্ভিত। তাঁর অসংখ্য ভক্ত ও সাধারণ মানুষের কাছে ‘আসল ঘটনাটা’ তুলে ধরতে আজ তাই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ফেসবুককেই বেছে নিয়েছেন প্রীতি। ফলও মিলেছে হাতেনাতে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রায় আট হাজার ‘লাইক’ পড়েছে তাঁর পোস্টে!

সস্তা প্রচার নাকি টাকার লোভ? নাকি নেহাতই হিংসা? কেন তিনি নেসের বিরুদ্ধে এমন তোপ দাগলেন? এ ধরনের হাজারো প্রশ্নের মুখে তাঁকে লাগাতার পড়তে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রীতি।

ফেসবুক তিনি লিখেছেন, “গত কয়েকটা দিন প্রচণ্ড মানসিক আর নৈতিক টানাপড়েনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি... আমাদের দেশে মহিলাদেরই সব কিছু মেনে নিতে হয়। সত্যিটা কী, সেটা জেনেও মুখ বুজে থাকতে হয়।” অনেকেই প্রকাশ্যে কাদা ছোড়াছুড়ির জন্য প্রীতিকেই দুষছেন। তাঁদের জন্য প্রীতির জবাব, “২০০৯ সালে আমাদের সম্পর্কটা আমি-ই ভেঙে দিই। তার পর থেকে যা কিছু হয়েছে, তার জন্য তো আমি কখনও পুলিশের কাছে যাইনি। কিন্তু সম্পর্ক ভাঙার ছ’বছর পরে বিষয়টা আর ব্যক্তিগত থাকে না।”

প্রীতি জানিয়েছেন, টাকা-পয়সা নিয়ে নেসের সঙ্গে তাঁর কোনও ঝামেলা হয়নি। ‘কিঙ্গস ইলেভেন পঞ্জাব’ কেনার সময় প্রীতির কাছ থেকে পাঁচ কোটি টাকা ধার নিয়েছিলেন নেস। কয়েক মাস পরে অবশ্য তা তিনি শোধও করে দেন। তাঁর দিক থেকে প্রতিহিংসারও কোনও অবকাশ নেই বলে জানিয়েছেন প্রীতি। তাঁর কথায়, “জীবন এগিয়ে চলে। মানুষ এগিয়ে চলে। আমিও তাই। যা করি, খুশি মনেই করি।”

খেলার মাঠের আসন নিয়ে বাক্-বিতণ্ডা প্রসঙ্গে প্রীতি জানিয়েছেন, তিনি নিজের কোটার আসনগুলোই খেলোয়াড়দের মধ্যে বিলিয়ে দিয়েছেন। আসনের জন্য কাউকে অপমান করার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। তাঁর কথায়, “এক সময় বলিউডের অনেক ব্লকব্লাস্টার ছবির নায়িকা ছিলাম। অনেক পুরস্কার পেয়েছি। সস্তা প্রচারের লোভে এ সব করা আমার ধাতে নেই।” কেন অভিযোগ জানানোর পরেই আমেরিকায় চলে গিয়েছিলেন? জানিয়েছেন, কাজের খাতিরেই তাঁকে সে সময় মার্কিন মুলুকে থাকতে হচ্ছিল। “যে মুহূর্তে মুম্বই পুলিশ তদন্তের কাজে ডেকেছে, দেশে ফিরে এসেছি,” লিখেছেন প্রীতি। আরও বলেছেন, “পুলিশ তদন্ত চালাচ্ছে। আর কিছু দিনের মধ্যেই সব সত্যি বেরিয়ে আসবে।”

প্রীতির দাবি, কাউকে আঘাত করতে নয়, শুধু মাত্র আত্মসম্মানটুকু বাঁচিয়ে রাখতেই এত কিছু করেছেন তিনি। দীর্ঘ পোস্টটি শেষ করেছেন তাঁদের শ্রদ্ধা জানিয়ে, যাঁরা নারী-নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। সম্মান জানান নারী-শক্তিকে। প্রীতির কথায়, “আপনারাই আমাদের নায়ক।”

এ দিকে, আজই প্রথম বার এ বিষয়ে মুখ খুললেন নেস। মুম্বই পুলিশের কাছে পাঠানো একটি চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যে। তিনি এমন ন’জনের নামও পুলিশকে দিয়েছেন, ঘটনার সময় যাঁরা ওয়াংখেড়েতে উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ সূত্রের খবর, দু’-এক দিনের মধ্যেই রেকর্ড করা হতে পারে নেসের বয়ান।