Advertisement
০৫ মে ২০২৪
ভোটের পঞ্জাব

হারের ভয়ে প্রচারে ‘না’ মোদীর

বিজেপি নেতারা রসিকতা করে বলতেন, রাহুল গাঁধী কোথাও প্রচারে গেলে নিশ্চিন্ত হন তাঁরা। কারণ, সে ক্ষেত্রে একটা ব্যাপার নিশ্চিত। ভোটে কথার খই যতই ফুটুক, চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায়, কংগ্রেসের হার কেউ ঠেকাতে পারবে না।

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩৩
Share: Save:

বিজেপি নেতারা রসিকতা করে বলতেন, রাহুল গাঁধী কোথাও প্রচারে গেলে নিশ্চিন্ত হন তাঁরা। কারণ, সে ক্ষেত্রে একটা ব্যাপার নিশ্চিত। ভোটে কথার খই যতই ফুটুক, চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায়, কংগ্রেসের হার কেউ ঠেকাতে পারবে না।

রাহুলকে হাসির খোরাক করে এমন কথা কিন্তু এখন বলতে শোনা যাচ্ছে না বিজেপির শীর্ষ নেতাদের। কেননা, পঞ্জাবের ভোটের আগে হারের ভয় ধরেছে গোটা বিজেপি শিবিরেই। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ভয়ের চোটে স্বয়ং নরেন্দ্র মোদী পর্যন্ত প্রচারে যেতে চাইছেন না। উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে মোদীকে সামনে রেখেই এগোচ্ছে প্রচারের যাবতীয় কৌশল। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর ১০-১৫টি জনসভার প্রস্তুতি চলছে। ছোট রাজ্য গোয়াতেও যাচ্ছেন মোদী। কিন্তু পঞ্জাবে বিজেপির হাল দুয়োরানির মতো। হারের ভয়ে যার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন স্বয়ং মোদী। আর এই অবস্থায় পাল্টা খোঁচা দিচ্ছেন বিরোধীরা। মোদীকে নিশানা করে কংগ্রেসের এক নেতার মন্তব্য, ‘‘কাজ হোক না হোক, নিজের ঢাক পেটানোই যাঁর স্বভাব, তিনি পর্যন্ত প্রচার করতে চাইছেন না। ভাবা যায়!’’

৪ ফেব্রুয়ারি এক দিনেই শেষ হবে পঞ্জাবের ভোট। আর এক সপ্তাহের মাথায় ভোটের প্রচার শেষ হবে। এই সময়েই তো সব শক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা! কিন্তু মোদী আসতে চাইছেন না জেনে একেবারে জলে পড়ে গিয়েছেন বিজেপি ও অকালি নেতারা। মোদীকে পঞ্জাবে আসতে বারবার অনুরোধ করেছেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত কোনও মতে প্রচারে রাজি করানো গিয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। ঠিক হয়েছে সামনের সপ্তাহে তিনি পঞ্জাবে এক দিনে জোড়া সভা করবেন। এর একটি বিজেপির উদ্যোগে, অন্যটি অকালি দলের জোরাজুরিতে।

জালন্ধর ও লুধিয়ানায় একই দিনে সভা করার কথা ছিল মোদীর। কিন্তু অকালি দল তাদের লুধিয়ানার সভাটি কোটাকপুরায় করতে চাইছে। অকালি নেতারা বলছেন, ওই দিন মনমোহন সিংহও লুধিয়ানায় প্রচারে যাচ্ছেন। কিন্তু মনমোহনের জন্য মোদীর সভাস্থল বদলাতে হচ্ছে— এটা হজম হচ্ছে না বিজেপিরই। মোদী সরকারের এক মন্ত্রী বলেন, ‘‘অকালি-বিজেপি জোটের ফিরে আসার কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। তাই সেখানে সভা করার ইচ্ছেও নেই প্রধানমন্ত্রীর। পাছে হেরে গেলে দায় ঘাড়ে চাপে!’’

কিন্তু কেন এমন আশঙ্কা?

বিজেপি নেতারা বলছেন, পঞ্জাব জুড়ে এখন অকালি সরকারের বিরুদ্ধে প্রবল হাওয়া। প্রকাশ সিংহ বাদলের পরিবারের বিরুদ্ধে আক্রোশ ভোটবাক্সে পড়ার সম্ভাবনা। পঞ্জাবে ড্রাগ সমস্যা, বেকারি, কৃষি সঙ্কট প্রবল হয়েছে। সুযোগ পেয়ে অরবিন্দ কেজরীবাল পঞ্জাবে ঘাঁটি গেড়েছেন। ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহ-ও তাঁর জীবনের ‘শেষ’ নির্বাচনে কংগ্রেসকে আবার ক্ষমতায় ফেরাতে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে অকালির ভোটব্যাঙ্ক তাদের থেকে সরে যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্ম বরং কংগ্রেস ও আপের উপরই ভরসা রাখছে।

এমন অবস্থা যে বিজেপি আঁচ করেনি— তা নয়। অকালির সঙ্গে জোট ভেঙে দিয়ে একা ভোটে লড়ার জন্য বিজেপির পঞ্জাব নেতৃত্বের তরফে প্রবল চাপ ছিল। কিন্তু জোট ছাড়তে রাজি হননি বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। এক নেতার যুক্তি, ‘‘পঞ্জাব সীমান্তবর্তী রাজ্য। অকালির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে ঠিকই। কিন্তু দেশের স্বার্থে অকালিকে সঙ্গে রাখা দরকার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Shiromani Akali Dal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE