Advertisement
০২ মে ২০২৪
নেতাজি নথি

গোপনীয়তা আইনেই কি বদল দরকার

নেতাজির নথির গোপনীয়তা নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত। তার মধ্যেই সরকারি গোপনীয়তা আইনে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন কি না, সেই প্রশ্ন উঠে গেল কেন্দ্রীয় সরকারের অন্দরে। নেতাজি সংক্রান্ত গোপন নথি জনসমক্ষে আনা যায় কি না, তা দেখতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশে কালই তিন সদস্যের এক কমিটি গঠন করেছিল কেন্দ্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৪৬
Share: Save:

নেতাজির নথির গোপনীয়তা নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত। তার মধ্যেই সরকারি গোপনীয়তা আইনে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন কি না, সেই প্রশ্ন উঠে গেল কেন্দ্রীয় সরকারের অন্দরে।

নেতাজি সংক্রান্ত গোপন নথি জনসমক্ষে আনা যায় কি না, তা দেখতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশে কালই তিন সদস্যের এক কমিটি গঠন করেছিল কেন্দ্র। আজ ছিল সেই কমিটির প্রথম বৈঠক। বৈঠকের পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়, শুধু নেতাজি-নথিই নয়, গোপনীয়তা আইনেই সার্বিক ভাবে পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে কি না, পর্যালোচনা করবে এই কমিটি।

সরকারি গোপনীয়তা আইন পাল্টানোর কি সত্যিই প্রয়োজন আছে?

আছে, মত বহু আইন বিশেষজ্ঞের। সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায় যেমন বলছেন, এই আইনটি বস্তাপচা, আজকালকার দিনে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক। তাঁর কথায়, ‘‘সেই ১৯৭৫ সালে সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, সরকারি গোপনীয়তা আইনের কোনও প্রয়োজনীয়তা নেই। তার পর বহু বার, বহু পরিপ্রেক্ষিতে একই কথা বলেছে শীর্ষ আদালত। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।’’ অশোকবাবুর মতে, ‘‘ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী, বাক্-স্বাধীনতার অধিকার এ দেশের প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার। আর জানার অধিকার এই বাক্-স্বাধীনতার অধিকারের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে যুক্ত।’’ ২০০৫ সালে পাশ হয় ‘তথ্যের অধিকার আইন’। সেই আইন পাশ হওয়ার পরে সরকারি গোপনীয়তা আইন আরও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গিয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রাক্তন বিচারপতি।

তথ্যের অধিকার আইন চালু হওয়ার পর থেকেই সরকারি গোপনীয়তা আইনে পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন তথ্য আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত কর্মীরা। তাঁদের যুক্তি, তথ্য অধিকার আইনের মাধ্যমে সরকারের কাছে থাকা যে কোনও তথ্য জানার অধিকার রয়েছে দেশবাসীর। কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই গোপনীয়তা আইনের দোহাই দিয়ে সেই তথ্য চেপে যাচ্ছে সরকার। এর ফলে তথ্য অধিকার আইনের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। যেমন হয়েছে নেতাজির ক্ষেত্রে।

নেতাজির ফাইল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজে সক্রিয় হওয়ায় ওই কমিটির মাধ্যমে গোপনীয়তার সংজ্ঞা নতুন করে ঠিক করতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র। আজকের বৈঠক প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অতিরিক্ত ডিজি কে এস ধাতওয়ালিয়া বলেন, ‘‘ওই আইনে পরিবর্তনের জন্য একাধিক পরামর্শ মন্ত্রকের ঘরে জমে রয়েছে। নতুন কমিটি সেগুলো খতিয়ে দেখবে। কোনও ধারার অন্তর্ভুক্তি বা বাদ দেওয়ার দরকার হলে তা করা হবে।’’

বর্তমান নিয়মে ত্রিশ বছর পেরিয়ে গেলেই কোনও সরকারি নথি আর গোপনীয় থাকে না। কিন্তু নেতাজির ক্ষেত্রে সেই সূত্র মানা হয়নি। স্বাধীনতার ৬৭ বছর পরেও নেতাজি সংক্রান্ত প্রায় ৯০টি গোপন নথি সরকারের কাছে রয়ে গিয়েছে। যেগুলো দিনের আলো দেখেনি। অথচ, দীর্ঘদিন ধরে সেগুলো জনসমক্ষে আনার জন্য তদ্বির করে আসছে একাধিক মহল। তথ্য জানার অধিকার আইনের মাধ্যমেও ওই সব ফাইলে কী রয়েছে জানার চেষ্টা করেও সাফল্য মেলেনি। কেন না, নেতাজি সংক্রান্ত কোনও আবেদন এলেই সরকার গোপনীয়তা আইনের দোহাই দিয়ে সেগুলো জনসমক্ষে আনতে চায়নি। এই সুযোগে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সরকারি গোপনীয়তা আইনে পরিবর্তন প্রয়োজন কি না, দেখতে বলা হয়েছে ওই কমিটিকে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন নেতাজি সংক্রান্ত ফাইল প্রকাশ করছেন না, কলকাতায় এসে বৃহস্পতিবার সেই প্রশ্ন তুলে দিলেন লেখক, সাংবাদিক তথা বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র এম জে আকবর। এ দিন কলকাতায় বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্সের দফতরে ‘ফ্রেন্ডস অব বিজেপি’ আয়োজিত আলোচনাসভায় আকবর বলেন, ‘‘নেতাজি সংক্রান্ত ফাইল চেপে রেখেছিল কেন্দ্র। সেই ষড়য়ন্ত্রের জমানা শেষ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এই ষড়যন্ত্রের অংশীদার হবেন না।’’ মমতার বিরুদ্ধে তোপ দেগে তাঁর দাবি, ‘‘পূর্বতন কেন্দ্রীয় সরকার না হয় নেহরু-গাঁধী পরিবারের ভয়ে নেতাজি সংক্রান্ত ফাইল চেপে রেখেছিল। কিন্তু রাজ্য সরকারের ভয় কীসের? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন নেতাজি সংক্রান্ত ফাইল প্রকাশ করছেন না?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE