Advertisement
E-Paper

ফরাসি প্রযুক্তি সংস্থায় স্বপ্নযাপন ধেমাজির তরুণীর

বাবা মনোজ দাস পেশায় এক জন ইঞ্জিনিয়ার। গুয়াহাটির নেডফির ডিরেক্টর তিনি। মা অজন্তা বড়ুয়া দাস দিল্লির স্বাস্থ্য দফতরের কর্তা। নাতনি কী হতে চায় জানতে চেয়েছিলেন ঠাকুর্দা রবিচন্দ্র দাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৮ ০৪:২৬
প্রিয়াঙ্কা দাস।

প্রিয়াঙ্কা দাস।

ছোটবেলায় ঠাকুর্দার আঙুল ধরে হাঁটা মেয়েটা আকাশের দিকে তাকিয়ে পাখির মতো ওড়ার ইচ্ছের কথা জানাত। সেই মেয়েই এখন বিশ্বের অন্যতম সেরা প্রযুক্তি নির্মাণসংস্থার অন্যতম গবেষক। পাইলট না হলেও উড়োজাহাজ থেকে উপগ্রহ- সে সব ওড়ানোর কলকাঠি এখন সেই তরুণীর নখদর্পণে। অদূর ভবিষ্যতে ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে আসতে চলা অত্যাধুনিক রাফালে বিমান তৈরির ক্ষেত্রে প্রযুক্তি দেয় 'সাফ্রান' সংস্থা। মাত্র ২৭ বছর বয়সেই সাফ্রান-এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠা অসম কন্যা প্রিয়াঙ্কা দাসকে ইতিমধ্যেই নাগরিকত্ব দিয়েছে ফ্রান্স। ঘরের মেয়েকে নিয়ে গর্বিত বরদলনি চৌখান গ্রাম।

বাবা মনোজ দাস পেশায় এক জন ইঞ্জিনিয়ার। গুয়াহাটির নেডফির ডিরেক্টর তিনি। মা অজন্তা বড়ুয়া দাস দিল্লির স্বাস্থ্য দফতরের কর্তা। নাতনি কী হতে চায় জানতে চেয়েছিলেন ঠাকুর্দা রবিচন্দ্র দাস। তখন সে ঠাকুর্দাকে আকাশ দেখিয়ে বলেছিল, ওইখানে উড়তে পারলে খুব ভাল হত। স্বপ্নের কর্মস্থল পেতে বেশি সময় নেয়নি মেয়েটি। দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজ থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে স্নাতক প্রিয়াঙ্কা ১৭৯৪ সালে নেপোলিয়নের গড়া ফ্রান্সের বিখ্যাত 'ইকল পলিটেকনিক' কলেজে সুযোগ পান। প্যারিস থেকে প্রিয়াঙ্কা জানান, ফুল স্কলারশিপ নিয়ে ইকলে পড়তে আসার পর 'ফ্রেঞ্চ সেন্টার ফর স্পেস স্টাডিজ' আয়োজিত 'অ্যাকুইন্টন স্পেস' বিজ্ঞান সমাবেশে ওরিগামি ভিত্তিক সোলার প্যানেলের নকশা তৈরি করে প্যারিসে প্রথম ও ফ্রান্সে পঞ্চম হন। পরে মাইক্রো স্যাটেলাইট 'কিউবি-৫০' তৈরিতে ভূমিকা নেন তিনি। 'কিউবি-৫০' 'অ্যাটলাস ৫' রকেটের মাধ্যমে মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল। এখনও সেই মাইক্রো স্যাটেলাইট মহাকাশে চক্কর কাটছে। “মহাকাশের আমার হাতের স্পর্শ লেগে আছে ভাবলেই ভাল লাগে”, বলছিলেন প্রিয়াঙ্কা।

এর পর বিশ্বের ৩২ জনের মধ্যে তিনিও নাসার ‘জেট প্রপালসন ল্যাবরেটরি’তে কাজ করার সুযোগ পান। ইকল থেকে ডেটা সায়েন্সে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পরে তিনি ব্রাজিলের সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ে রোবোটিক্স ও আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে কাজ করেন। এর পর ‘আইএসএই-সুপায়রো’ থেকে এয়ারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে দ্বিতীয় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পান প্রিয়াঙ্কা। সেখান থেকে সাফ্রানের গবেষণা প্রকল্পে পা রাখা।

বিশ্বখ্যাত প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তি সংস্থা 'সাফ্রান' যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার, ড্রোন, রণতরী, মিসাইলের জন্য উন্নততম প্রযুক্তি তৈরি করে। ভারতের কেনা রাফালের প্রযুক্তিও অনেকাংশে সাফ্রানের তৈরি। সেখানেই আপাতত মাথা খাটাচ্ছেন ধেমাজির প্রিয়াঙ্কা। তাঁর গবেষণার বিষয় হল স্যাটেলাইট থেকে নেভিগেশন সিস্টেমে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র তথ্য আদান-প্রদান। যাতে বিমান হোক বা ক্ষেপণাস্ত্র— স্বচালিত যে কোনও যান চলতে পারে নিখুঁত লক্ষ্যে। প্রিয়ঙ্কা বলেন, “আমার গবেষণা এমন বিষয় নিয়ে যেখানে সেন্টিমিটারের ফারাকও জীবন-মরণের তফাৎ গড়তে পারে। স্বয়ংচালিত গাড়ি, বিমানের ক্ষেত্রে কাজে আসবে ওই গবেষণা।” কিন্তু তিনি বিশ্বাস করেন বিজ্ঞান ইতিবাচক ও উন্নয়নকামী। তাই প্রাণঘাতী যুদ্ধবিমানের সঙ্গে নিজের নাম জড়ালে ভাল লাগে না প্রিয়াঙ্কার।

প্রিয়াঙ্কার বাবা মনোজ দাস মেয়েকে নিয়ে গর্বিত। তিনি বলেন, “ছোট থেকেই বিজ্ঞানের প্রতি ওর অসম্ভব আগ্রহ। নিজের জেদে স্বপ্ন সফল করে চলেছে ও।”

Priyanka Das Satellite Assam
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy