প্রিয়ঙ্কার শিমলার বাড়ি নিয়ে বিতর্ক

মাসখানেক আগেই মা-মেয়ে গিয়েছিলেন শিমলায়! দিল্লির গরম থেকে ছুটি নিয়ে দিন তিনেক সেখানে ছিলেন। মেয়ের বাড়ির কাজ কতটা এগিয়েছে, দেখেও আসেন মা!

শিমলায় জমি কিনে ভিন রাজ্যের লোকেরা সচরাচর বাড়ি করতে পারেন না। নিয়মকানুনের অনেক ফিকির রয়েছে। কিন্তু আলোচ্য মানুষ দু’জন তো আর সাধারণ নন! প্রিয়ঙ্কা গাঁধী ও সনিয়া গাঁধী। প্রিয়ঙ্কা-রবার্ট শিমলায় একটা বাড়ি বানাচ্ছেন। এ বার বিতর্ক দানা বাঁধতে শুরু করল তা নিয়েই। প্রিয়ঙ্কা কী ভাবে জমি পেলেন সে ব্যাপারে তথ্যের অধিকার আইনের আওতায় আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু শুরুতে তা জানাতে চাননি স্থানীয় তথ্য আধিকারিক ও জেলা তথ্য আধিকারিক। বরং তাঁরা এ ব্যাপারে প্রিয়ঙ্কার মত জানতে চান। আবার প্রিয়ঙ্কা স্থানীয় ও জেলা তথ্য আধিকারিককে একটি আবেদন জানিয়ে বলেন, এ বিষয়ে তথ্য যেন প্রকাশ করা না হয়। কারণ, তাঁর নিরাপত্তার ব্যাপারটি এ ক্ষেত্রে জড়িত। কিন্তু আজ হিমাচল প্রদেশের রাজ্য তথ্য কমিশনের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ তাদের রায়ে জানিয়ে দেয়, দশ দিনের মধ্যে জমি কেনা সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করতে হবে রাজ্য প্রশাসনকে।

এমনিতেই রবার্ট বঢড়ার বিরুদ্ধে জমি কেলেঙ্কারির অভিযোগ নিয়ে জেরবার কংগ্রেস ও গাঁধী পরিবার। শিমলার জমি নিয়ে কোনও অনিয়মের আঁচ পাওয়া গেলে সন্দেহ নেই তা বিজেপি-র কাছে গাঁধী পরিবারের বিরুদ্ধে ফের নতুন অস্ত্র হয়ে উঠবে।

হিমাচল প্রদেশের বাসিন্দা তথা সামাজিক আন্দোলনকারী দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কিছু একটা অনিয়ম না থাকলে চাপা দেওয়ার চেষ্টা হবে কেন? আইনানুযায়ী জমি কেনা হলে তা নিয়ে লুকোছাপার তো কারণ দেখছি না!’’ দেবাশিসবাবু জানান, হিমাচল প্রদেশ জমি ও টেনান্সি আইনের ১১৮ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, শর্তসাপেক্ষে হিমাচল প্রদেশের বাইরের মানুষ সেখানে গৃহনির্মাণের জন্য জমি পেতে পারেন। তবে পাঁচশো স্কোয়ার মিটারের বেশি জমি কেউ পাবেন না। তা ছাড়া কোনও এক জন ব্যক্তিকে দু’বার জমি দেওয়া যাবে না। আবার জমি পাওয়ার তিন বছরের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করতে হবে। তাঁর দাবি, আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আইনজীবী ও একদা আম আদমি পার্টির সদস্য কিছু দিন আগে পালমপুরে একটি চা বাগান কিনেছিলেন। কিন্তু তথ্যের অধিকার আইনে তাঁর চাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে সেই কেনাবেচা খারিজ হয়ে যায়। প্রিয়ঙ্কার জমি কেনার ক্ষেত্রেও অনিয়মের আশঙ্কা রয়েছে বলে তাঁর মত। কারণ, তাঁর কথায়, প্রিয়ঙ্কাকে দু’বার জমি দেওয়া হয়েছিল। একবার ২০০৭ সালে। পরের বার লাগোয়া একটা জমি ২০১২ সালে তাঁকে দেওয়া হয়। তা ছাড়া নির্মাণকাজও এখনও শেষ হয়নি। তবে তাঁর মতে, ইতিবাচক দিক এটাই যে, শেষ পর্যন্ত রাজ্য তথ্য কমিশনার দশ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলেছেন। তা ছাড়া তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে বিলম্বের জন্য জেলা তথ্য আধিকারিকের কাছেও কৈফিয়ত চেয়েছেন।

মজার ব্যাপার হল, এমনিতে রবার্টের বিরুদ্ধে যত বারই কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে, আগ বাড়িয়ে মুখ খুলেছে কংগ্রেস। শিমলার জমি বিতর্ক নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কংগ্রেস মুখপাত্র শাকিল অহমেদ বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে আমার কাছে কোনও তথ্য নেই। বিষয়টা প্রিয়ঙ্কা গাঁধীর একেবারেই ব্যক্তিগত।’’ তবে হিমাচলের এক কংগ্রেস নেতা আজ বলেন, বাইরের কোনও ব্যক্তি হিমাচলে জমি কিনলে রাজ্য মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিতে হয়। তার পর ভূমিরাজস্ব মন্ত্রক চূড়ান্ত ছাড়পত্র দেয়। প্রিয়ঙ্কাকে যখন প্রথম বার জমি দেওয়া হয়েছিল তখন রাজ্যে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় ছিল। কোনও অনিয়ম হলে তখনই বা তার পরেও বিজেপি নিশ্চয়ই প্রশ্ন তুলত। প্রিয়ঙ্কা এসপিজি নিরাপত্তা পান। তিনি কোথায় বাড়ি কিনেছেন, তার ঠিকানা কী, তা ঢাক পিটিয়ে বলা সে কারণেই সমস্যার। তথ্য কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশ পেলেই সব ধোঁয়াশা কেটে যাবে।