Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
National News

ইসলামাবাদকে বোঝাতে পারেনি ওয়াশিংটন, বলছেন মার্কিন বিশেষজ্ঞরা

মার্কিন বিশেষজ্ঞরা বলতে চাইছেন, জঙ্গি সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমেরিকা ও রাষ্ট্রপুঞ্জের মতো আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলি পাকিস্তানকে যে চাপ দিচ্ছে, তা পর্যাপ্ত নয়।

পুলওয়ামা। বৃহস্পতিবার। ছবি- এএফপি

পুলওয়ামা। বৃহস্পতিবার। ছবি- এএফপি

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৩:২৬
Share: Save:

নিজেদের ভূখণ্ডে ঘাঁটি গেড়ে থাকা সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে দ্রুত কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন কতটা, তা ইসলামাবাদকে এখনও বোঝাতে পারেনি আমেরিকা। পারেনি রাষ্ট্রপুঞ্জের মতো আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলিও। পুলওয়ামার ঘটনা সেটাই বোঝাল। বলছেন মার্কিন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের বক্তব্য, ওই ঘটনার পর যে ভাবে কালক্ষেপ না করে জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ (জেইএম) এই ঘটনার দায় নিয়েছে, তাতে এটাই প্রমাণিত, পাকিস্তানের সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) খুব সক্রিয় মদত রয়েছে পাক ভূখণ্ডে ঘাঁটি গেড়ে থাকা জঙ্গি সংগঠনগুলির পিছনে। যে আইএসআই-তে রয়েছেন পাক সেনাবাহিনীর জনাকয়েক কর্তাও। বৃহস্পতিবার জইশ হানায় পুলওয়ামায় প্রাণ হারিয়েছেন সিআরপিএফের ৪০ জন জওয়ান।

মার্কিন বিশেষজ্ঞরা বলতে চাইছেন, জঙ্গি সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমেরিকা ও রাষ্ট্রপুঞ্জের মতো আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলি পাকিস্তানকে যে চাপ দিচ্ছে, তা পর্যাপ্ত নয়। ফলে, নতুন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের জমানাতেও পুলওয়ামার মতো ঘটনা ঘটছে। যা আগামী দিনে ভারত-পাক সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলতে পারে। আরও একটা ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর চাপ বাড়তে পারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপর।

পুলওয়ামা: ফের প্রশ্ন আইএসআইয়ের ভূমিকা নিয়ে

মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) প্রাক্তন বিশেষজ্ঞ ব্রুস রিডল বলেছেন, ‘‘জেইএম কালক্ষেপ না করে পুলওয়ামার ঘটনার দায় নেওয়ায় জঙ্গি সংগঠনগুলির মাস্টারমাইন্ডদের পিছনে আইএসআইয়ের মদত ও ভূমিকা নিয়ে সত্যি-সত্যিই প্রশ্ন উঠছে।’’

ব্রুকিংস ইনস্টিটিউট থিঙ্ক-ট্যাঙ্কের সদস্য রিডল এও বলেছেন, পাক প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর পুলওয়ামার ঘটনাই ইমরান খানের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল। তাঁর কথায়, ‘‘জঙ্গিদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশে শান্তির আবহ সৃষ্টির গুরুদায়িত্ব বর্তাল পাক প্রধানমন্ত্রীর কাঁধে। পাক সেনাবাহিনীরই একাংশ ভারত-পাক সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে অন্তরায় হয়ে উঠছে কি না, তার উপরেও নজর রাখা প্রয়োজন নতুন পাক প্রধানমন্ত্রীর।’’

আরও পড়ুন- জঙ্গি অভিযান ঘিরে ফের উত্তপ্ত কাশ্মীর, সেনার সঙ্গে সংঘর্ষে আহত ১৬​

আরও পড়ুন- নিরপরাধের উপরে গুলিবৃষ্টি পাক সেনার​

পাকিস্তানকে কড়া বার্তা দিতে পারেনি আমেরিকা, বলছেন বিশেষজ্ঞরা

পূর্বতন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসনে জাতীয় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অফিসার অনীশ গোয়েল মনে করেন, পুলওয়ামার ঘটনা দেখাল, পাকিস্তানে ঘাঁটি গেড়ে থাকা জঙ্গি সংগঠনগুলি কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের ব্যাপারে এখনও কতটা সক্রিয়। পিছনে খুব শক্ত মদত না থাকলে যা সম্ভব নয়। যে ভাবে দ্রুত বীরদর্পে ঘটনার দায় স্বীকার করেছে জইশ, তাতে বোঝা যাচ্ছে, এমন ঘটনা তারা বা তাদের মতো জঙ্গি সংগঠনগুলি আরও ঘটাবে কাশ্মীরে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ককে জটিল থেকে জটিলতর করে তোলার চেষ্টায়।

গোয়েলের কথায়, ‘‘এই সব ঘটনার জেরে পাক জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মতো কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার চাপ বাড়বে প্রধানমন্ত্রী মোদীর উপর। সব কিছু মিলিয়ে ওই অঞ্চলে অশান্তি আরও বাড়বে।’’

‘কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্স’-এর নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ অ্যালিসা আইরেস বলেছেন, ‘‘পুলওয়ামার ঘটনা, দুর্ভাগ্যবশত, এটাও দেখিয়েছে যে, জঙ্গি সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন ইসলামাবাদকে পুরোপুরি বোঝাতে পারেনি আমেরিকা ও রাষ্ট্রপুঞ্জের মতো আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলি। পাকিস্তানকে কড়া বার্তা দিতে পারেনি। যে প্রশ্নটা উঠছে, তা হল, এর পর কি আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলি এ ব্যাপারে আরও কড়া হবে?’’

মাসুদ আজহার: এ বার কি বোঝানো প্রয়োজন চিনকেও

মাসুদ আজহারের মতো কট্টর জঙ্গিকে গোটা বিশ্বে নিষিদ্ধ করার যে জোরালো প্রস্তাব অনেক দিন ধরেই রয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জে, বার বার চিনের ভেটোয় তা কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, পুলওয়ামার ঘটনার পর কি এ বার চিনকে তার অবস্থান থেকে সরে আসার জন্য পরিস্থিতির গুরুত্বটা আরও বোঝানো হবে?

‘ফের ভারত-পাক আলোচনা শুরুর সম্ভাবনা ফিকে হল’

বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, ভারত ও পাকিস্তানকে আলোচনায় কাছাকাছি টেনে আনার ব্যাপারে সৌদি আরব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারত। কারণ, ভারত ও পাকিস্তান, দু’টি দেশের সঙ্গেই সৌদি আরবের সম্পর্ক ভাল। সৌদি রাষ্ট্রপ্রধান মহম্মদ বিন সলমন শুক্রবার পৌঁছেছেন পাকিস্তানে। সেখান থেকে তাঁর ভারতেও আসার কথা। ‘‘কিন্তু এই পরিস্থিতিতে সেই সম্ভাবনাটাও নষ্ট হল’’, বলছেন ‘ইউএস ইনস্টিটিউট অফ পিস’-এর নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মঈদ ইউসুফ। তাঁর মতে, ‘‘পুলওয়ামার ঘটনার জেরে ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কের অবনতি হবে। ভারতে লোকসভা ভোটের পর দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সরকারি স্তরে আলোচনা শুরু হওয়ার যে সম্ভাবনার কথা শোনা যাচ্ছিল, পুলওয়ামার ঘটনায় তা অনেকটাই ফিকে হয়ে গেল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE