দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে মৃত জওয়ানদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
প্রত্যুত্তর দেওয়া হবেই— জঙ্গি হামলার প্রেক্ষিতে বার্তা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। পুলওয়ামায় হামলাকারী জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ শুধু নয়, জঙ্গিদের মদতদাতাদেরও ‘জবাব’ দেওয়া হবে বলে মোদী শুক্রবার মন্তব্য করেছেন। পাকিস্তানের মদতেই যে হামলা, প্রকাশ্য সভা থেকে এ কথা বলার সময়ে এ দিন আর কোনও কূটনৈতিক রাখঢাকের ধার ধারেননি মোদী। প্রত্যাঘাতের বিষয়ে যে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সেনাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী এ দিন ঘোষণা করেছেন।
উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসিতে আয়োজিত এক সভায় ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এ দিন অত্যন্ত কঠোর বার্তা দিয়েছেন। যারা পুলওয়ামায় হামলা চালিয়েছে, তারা কিছুতেই ছাড় পাবে না— এ দিন দেশকে আশ্বস্ত করতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘‘সন্ত্রাসবাদীদের এবং তাদের মদতদাতাদের আমি বলতে চাই, তারা খুব বড় ভুল করে ফেলেছে। এর জন্য খুব চড়া মূল্য চোকাতে হবে তাদের।’’
বৃহস্পতিবারই হামলার দায় স্বীকার করেছিল জইশ-ই-মহম্মদ। আর জইশ যে পাক মদতপুষ্ট সংগঠন, জইশ-প্রধান মৌলানা মাসুদ আজহারকে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিষেধাজ্ঞার হাত থেকে বাঁচাতে যে পাকিস্তান সব সময় তৎপর, তা কারও অজানা নয়। তাই ভারতের প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার আর কোনও রাখঢাক করেননি। ‘পাকিস্তানে বসে থাকা শত্রুরা’— ঠিক এই ভাষাই মোদীর মুখে শুক্রবার শোনা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: সিরিয়ার কায়দায় পুলওয়ামায় হামলা হতে পারে, আগাম জেনেও নেওয়া যায়নি ব্যবস্থা!
আরও পড়ুন: শ্রীনগরে রাজনাথ, কাঁধে নিলেন জওয়ানের কফিন
পুলওয়ামায় বৃহস্পতিবার হওয়া ভয়ঙ্কর হামলার ছবি গোটা বিশ্বের সামনে তুলে ধরে পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক মহলের সামনে আরও কোণঠাসা করতে তৎপর হয়েছে ভারত সরকার। এত দিন পর্যন্ত পাকিস্তানকে ‘মোস্ট ফেভার্ড নেশন’-এর মর্যাদা দিয়ে রেখেছিল ভারত। দেশের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এ দিন সকালেই ঘোষণা করেছেন যে, পাকিস্তানের ওই বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেওয়া হল। এত দিন বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ভারতের কাছ থেকে যে সব সুবিধা পেত পাকিস্তান, ‘মোস্ট ফেভার্ড নেশন’ তকমা চলে যাওয়ায় এক ধাক্কায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সেই সুবিধাপ্রাপ্তি।
প্রধানমন্ত্রীর আক্রমণের সুর আরও চড়া। ভারতে অস্থিরতা তৈরি করতে চাইছে পাকিস্তান— এ দিন সরাসরি এমন অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তিনি বলেন, ‘‘প্রতিবেশী দেশ যদি ভাবে যে, তারা এ ভাবে ভারতে অস্থিরতা তৈরি করতে পারবে, তা হলে ভুলে যাক সে কথা। কোনও দিন তা হবে না।’’ পাকিস্তান যে রাস্তা বেছে নিয়েছে, সেই রাস্তাই পাকিস্তানকে আজ চরম বেহাল দশায় নিয়ে গিয়েছে— বলেন মোদী। অবস্থা এতটাই বেহাল যে ‘ভিক্ষাপাত্র’ নিয়ে গোটা বিশ্বের সামনে হাত পাততে হচ্ছে পাকিস্তানকে, তবু সহজে সাহায্য মিলছে না— মন্তব্য মোদীর।
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রদূতকে তলব, পাকিস্তান আর ‘সবচেয়ে সুবিধাপ্রাপ্ত দেশ’ নয়, ঘোষণা ভারতের
আরও পড়ুন: ইসলামাবাদকে বোঝাতে পারেনি ওয়াশিংটন, বলছেন মার্কিন বিশেষজ্ঞরা
পুলওয়ামায় যে ঘটনা ঘটেছে, তার ‘উপযুক্ত জবাব’ দেওয়া হবেই— এ দিন বার বার আশ্বস্ত করতে চেয়েছেন মোদী। তিনি বলেছেন, ‘‘আমি জানি যে, দেশের মানুষের রক্ত এখন ফুটছে।’’ তাই সেনাকে অবাধ ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী এ দিন ঘোষণা করেছেন। পাল্টা আঘাত কবে করা হবে, কী ভাবে করা হবে এবং কোথায় করা হবে, সে বিষয়ে যে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়ে দেওয়া হয়েছে দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে— ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
নরেন্দ্র মোদীর এই মন্তব্যে ফের ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর জল্পনা শুরু হয়েছে। যে ভাবে সেনা প্রত্যাঘাত করতে চায়, সে ভাবেই করতে পারে— এ কথার অর্থ কী? তা হলে কি আবার অভিযান চালানো হবে? যে ভাবে চালানো হয়েছি উরি হামলার পরে? নাকি এ বার অন্য কোনও ধাঁচের সামরিক পদক্ষেপ হবে? এ সব প্রশ্নকে ঘিরে জোর জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে গোটা দেশে। চর্চা শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলেও।
আরও পড়ুন: আগামী বছরই অবসর নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল বাবলুর, কিন্তু তার আগেই সব শেষ
আরও পড়ুন: রাস্তায় পড়ে নিহতদের ব্যাগ-রুকস্যাক, কান্না চেপে সেগুলো কুড়চ্ছেন সেনারা
ঝাঁসির সভা থেকে নরেন্দ্র মোদী এ দিন জানান, গোটা বিশ্ব ভারতের পাশে রয়েছে। এই হামলার নিন্দা করে বিভিন্ন দেশ থেকে তাঁর কাছে বার্তা আসছে বলে মোদী এ দিন জানিয়েছেন। বড় শক্তিগুলি যে ভাবে এক হচ্ছে, তাতে সন্ত্রাস আর বেশি দিন টিকবে না, বলেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy