তামাম বিশ্বের ক্যানসার মানচিত্রে ভারতের জায়গাটা উদ্বেগের মাপকাঠিতে একেবারে উপরের সারিতে। বস্টনে সারা বিশ্বের স্বাস্থ্য প্রতিনিধিদের সম্মেলনে তাই ভারতে ক্যানসার রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকার বিষয়টি শুধু আলাদা গুরুত্বই পেল না, ভারতে তামাকের ব্যবহার আটকানোর ব্যর্থতার প্রসঙ্গটাও বারবার উঠে এল।
মার্কিন সরকারের ‘ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটর্স লিডারশিপ প্রোগ্রামে’র অংশীদার হিসেবে ‘গ্লোবাল হেলথ— বিল্ডিং কান্ট্রি ক্যাপাসিটি’ শীর্ষক সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা। সেখানে সকলেই এক বাক্যে বললেন, ক্যানসার বিশ্বের সর্বত্র ত্রাসের কারণ হয়ে উঠেছে। আমেরিকাও তার ব্যাতিক্রম নয়। সেখানে বিশেষ কিছু ক্যানসার বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। ফলে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ থেকে শুরু করে দানা ফার্বের ক্যানসার ইনস্টিটিউট অথবা ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হসপিটালের চিকিৎসক থেকে হার্ভার্ড গ্লোবাল হেলথ ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী— সবাই স্বীকার করলেন ক্যানসার যে ভাবে ছড়াচ্ছে, তাকে প্রতিহত করতে গেলে দু’টি বিষয় খুব জরুরি। দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আর রাজনৈতিক সদিচ্ছা।
হার্ভার্ড গ্লোবাল হেলথ ইনস্টিটিউটের অধিকর্তা আশিস ঝা’র কথায়, ‘‘এই রোগের সঙ্গে লড়তে হলে সরকার তার দায় এড়াতে পারবে না। ক্যানসারকে স্বাস্থ্য কর্মসূচিতে সবার আগে রাখা দরকার। কিন্তু আক্ষেপের বিষয় হল, কোনও দেশই তা যথাযথ ভাবে করে উঠছে না।’’ ডানা ফার্বার ক্যানসার ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী ইভ নাগলের ভারত-সহ কয়েকটি দেশে ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা তৈরির ব্যাপারে একটি প্রকল্প চালাচ্ছেন। তিনি বললেন, ‘‘ভারতে মুখের ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। কারণ তামাক-এর ব্যবহারে লাগাম টানতে পারছে না সরকার। নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও বড় শহরে গুটখা বিক্রি হচ্ছে অবাধে। সরকার চাইলে এটা আটকানো যায় না তা বিশ্বাস করি না।’’ আমেরিকাতেও ক্যানসারের বাড়বৃদ্ধির পিছনে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবই দায়ী বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অথচ নিরন্তর গবেষণা, আধুনিক পরিকাঠামো— কোনও কিছুরই অভাব নেই আমেরিকায়। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ-এর চিকিৎসক-গবেষকরা বলছিলেন, দশ বছর আগে যে ভাবে ক্যানসারের চিকিৎসা হতো এখন সে ভাবে হয় না। আগে চিকিৎসা ছিল ‘রিঅ্যাকটিভ’, রোগী বেঁচে গেলে জীবনের মান নিয়ে মাথা ঘামানো হতো না। কিন্তু এখন চিকিৎসা অনেক বেশি ‘প্রোঅ্যাকটিভ’। শুধু রোগ সারা নয়, রোগমুক্ত জীবনের মানও সেখানে সমান গুরুত্ব পায়। সেই তাঁরাও বলছেন, ‘‘এতেই হবে না, রোগটার সঙ্গে সমবেত ভাবে লড়তে হবে। তার জন্য শুধু প্রযুক্তি নয়, চাই রাজনৈতিক সদিচ্ছা। ক্ষমতার রদবদল যেন কোনও দেশে এই অগ্রাধিকারকে নষ্ট করতে না পারে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy