E-Paper

‘রক্ত অনেক দেখেছি, আর নয়’

ছত্তীসগঢ়ে পরপর ‘সংঘর্ষে’ প্রাণ যাচ্ছে মাওবাদীদের। কেন? স্থানীয়, আদিবাসীরা কি মুখ ফেরাচ্ছেন?

ছত্তীসগঢ় রাজ্য পুলিশের জনসংযোগ। দন্তেওয়াড়ার হান্দেওয়াড়ায়।

ছত্তীসগঢ় রাজ্য পুলিশের জনসংযোগ। দন্তেওয়াড়ার হান্দেওয়াড়ায়। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

কিংশুক গুপ্ত ও দেবরাজ ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২৫ ০৬:৪৭
Share
Save

বস্তারের জেলা সদর জগদলপুর থেকে চলেছি দন্তেওয়াড়া জেলায়।

বস্তার জেলাকে কেন্দ্র গত মার্চে মাওবাদী কার্যকলাপ-মুক্ত হিসেবে ঘোষণা করলেও দন্তেওয়াড়া, বিজাপুর, সুকমা এখনও অতি নকশাল প্রভাবিত জেলা। সেখানে যাওয়ার পাহাড়ি রাস্তায় কিছু দূর অন্তর সিআরপি’র শিবির। পিচরাস্তার ধারে খিসকেপাড়া এলাকায় পাকা আম, স্থানীয় জঙ্গলের মাশরুম ‘পুটু’ বিক্রি হয়। সামনে আম নিয়ে বসেছিলেন গোন্ড জনজাতির মহিলারা। বিক্রির ফাঁকে মায়া গাউড়ে, হম্মলবতী গাউড়ে দাবি করলেন, এখন তাঁরা ভাল আছেন। পাশে মোবাইল ফোনে ইউটিউবে স্থানীয় খবরে চোখ বুলোচ্ছিলেন মাধুরী সোডি। হেসে বললেন, ‘‘মোবাইল ফোন আসায় এখন বাইরের খবরাখবরও পাচ্ছি।’’

পিচ রাস্তা থেকে ভিতরে ঢুকে জঙ্গলঘেরা খিসকেপাড়া গ্রাম। আগে পাতকুয়োই ছিল পানীয় জলের ভরসা। মাধুরী অবশ্য বললেন, ‘‘এখন সরকারি টিউবওয়েল হয়েছে। তবে পুরনো অভ্যাস তো। এখনও অনেকেই সেই চুয়া-র (পাতকুয়ো) জলতুলেই খায়।’’

কিছুটা এগোতেই গিদম। ২০০৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে, প্রায় ১০০ জন সশস্ত্র মাওবাদী গিদম থানার পুরনো ভবনে আক্রমণ চালিয়েছিল। এক কনস্টেবল নিহত হন, গুরুতর আহত হন সাত জন পুলিশ কর্মী। অনেক অস্ত্রও তারা লুট করে নেয়। তার পরে ২০১১ সালের ২৭ ডিসেম্বর। গিদম থানার নির্মীয়মাণ নতুন ভবনটিকেও বিস্ফোরক দিয়ে উড়িয়ে দেয় মাওবাদীরা। সেই সময়ে গোটা দন্তেওয়াড়া জেলায় ছড়িয়ে গিয়েছিল ভয় ও অনিশ্চয়তার বাতাবরণ।

এখন অবশ্য বদলে গিয়েছে এলাকা। দোকান-বাজারে লোকজনের ভিড়। রাস্তায় বিক্রি হচ্ছে আম, মাশরুম। স্থানীয় বাসিন্দা মানসিংহ মারকম চাষ করেন। বলছেন, “আমরা শান্তি চাই। আমরা চাই, আমাদের গ্রামে আর কোনও দিন যেন বারুদের গন্ধ না আসে।” দোকানে মশলাপাতি কিনতে আসা গৃহবধূ সুধারানি কাশ্যপেরও একই কথা, “বেশ কয়েক বছর ধরে পুলিশ ক্যাম্প আছে, রাস্তাঘাট হয়েছে, আপাতদৃষ্টিতে সমস্যা নেই। ওই আতঙ্কের দিন আর চাই না।”

এর পরে ৩০ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে এগিয়ে যাওয়া গভীরতর প্রান্তে। কিছু একদা-রক্তাক্ত গ্রাম। দু’পাশে দিগন্ত জোড়া শাল-পিয়াল-সেগুনের জঙ্গল। কোথাও ছোট ছোট টিলা উঠে গিয়েছে সবুজে ঢাকা পাহাড়ের দিকে। গ্রামে যাওয়ার রাস্তা বেশ ভাল। মাঝে মধ্যে দেখা যাচ্ছে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বসতি। গাড়ি যত দক্ষিণে যাচ্ছে, মোবাইল টাওয়ারের সঙ্কেত তত দুর্বল হচ্ছে, আর জঙ্গল তত গভীর। চোলনার পর নাহাড়ি এলাকাতেও রাস্তার ধারে পাকা আম আর ‘পুটু’ বিক্রি করছেন মহিলারা। বিজাপুরের মারিগুড়ার দিকে ঢুকতে আরও ঘন জঙ্গল। রাস্তায় বাইকে টহল দিচ্ছে পুলিশ আর কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। গাঁয়ে ঢোকার মুখেই এক ৫০ পেরোনো জানালেন, তাঁর ভাইকে ২০১৯ সালে অপহরণ করে মেরেছিল মাওবাদীরা। সন্দেহ করেছিল, পুলিশের চর। তাঁর ‘অপরাধ’ ছিল, সরকারি শিবির থেকে তিনি কিছু রেশন নিয়ে এসেছিলেন। চারদিকের চোখমুখ বলছে, সেই পরিস্থিতি আর নেই। তা অবশ্য অনেকটাই কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভরসায়।

দন্তেওয়াড়ার গিরসাপাড়ায়যেমন মোবাইল সিগন্যাল এসেছে। মাঠে-ঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছে যুবক, কিশোররা। তাদের চোখ বলে দেয়, পরিস্থিতি আগের মতো নেই। এক কিশোরের মা সোমরতি মারকম (নাম পরিবর্তিত) বলছিলেন, “আগে স্কুল বন্ধ থাকায় বাচ্চারা বই ছুঁত না। এখন ক্লাসে যেতে চায়। সেলাইয়ের কাজ শিখেছেন কিছু মহিলা। তারা নিজেদের মতো জীবন গড়ছে। ভয় এখনও আছে, কিন্তু স্বপ্নটাও এখন হাঁটছেবাস্তবের দিকে।”

দীর্ঘপথ উজিয়ে সুকমা-দন্তেওয়াড়ার সীমানা লাগোয়া বুরকাপালেও একই কথা। ২০১৭-র এপ্রিলে এখানেই মাওবাদী হামলায় নিহত হন ২৫ জন সিআরপি জওয়ান। কাসোলি গ্রামের কল্পনা কোড়াম (নাম পরিবর্তিত) বলছিলেন, ‘‘আমার স্বামীকে মাওবাদীরা মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। স্বামী জঙ্গলের তেঁতুল, মহুল ফুল সংগ্রহ করে, সেগুলিই বিক্রি করে সংসার চালাত। কেন ওকে মেরেছিল, কী অপরাধ ছিল, তা আজও জানি না।’’ কল্পনা এখন চাষের পাশাপাশি স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরিচারিকার কাজ করেন। তরুণ কলেজ পড়ুয়া সঞ্জীব মারকমের কথা সোজাসাপ্টা, ‘‘আমরা পড়াশোনা করতে চাই, চাকরি করতে

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Maoists Chhattisgarh lalgarh

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে আপনার সাবস্ক্রিপশন আপনাআপনি রিনিউ হয়ে যাবে

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।