বিহারে নির্বাচনের আগে সংস্কারমুখী পদক্ষেপ নিতে গিয়ে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ বার নির্বাচন কমিশনের হাতে বাড়তি ক্ষমতা তুলে দেওয়া হচ্ছে বলে সংবিধান সংশোধনকারী ‘এক দেশ এক ভোট’ বিল নিয়ে আলোচনার জন্য গঠিত যৌথ কমিটিতে আশঙ্কা প্রকাশ করলেন দেশের দুই প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ও জে এস খেহর। আজ দুই প্রাক্তন বিচারপতিই আজ বিলের একাধিক পদ্ধতিগত ত্রুটি নিয়ে সমালোচনায় সরব হওয়ায় কিছুটা অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে সরকার পক্ষকে।
সূত্রের মতে, আজকের বৈঠকে দুই প্রাক্তন বিচারপতি খেহর ও চন্দ্রচূড় দু’জনই জানান, ওই বিলটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোয় আঘাত না করলেও, বিলে এমন কিছু ত্রুটি রয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে আইনি জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। ওই আইন প্রয়োগ হলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে অতীতে যুক্তি দিয়েছেন অনেক বিরোধী সাংসদ। বিরোধীরা গণতন্ত্রের বৈচিত্রকে বাঁচিয়ে রাখার উদ্দেশে আলাদা ভোট করার দাবি করেছিলেন। যদিও চন্দ্রচূড়ের মতে, গণতন্ত্র ও যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা সংবিধানের মূল কাঠামো হলেও, তার জন্য আলাদা নির্বাচনের প্রয়োজন হয় না। কারণ সংবিধানে এমন কোনও শর্ত নেই, যা আলাদা করে নির্বাচনের কথা বলে। সূত্রের দাবি, বৈঠকে চন্দ্রচূড় বলেন, ১৯৫০-’৬০ পর্যন্ত লোকসভা ও বিধানসভার ভোট একসঙ্গে হয়েছে। তিনি বলেন, ১৯৫৭ সালে লোকসভা ও বিধানসভা ভোট এক সঙ্গে করার জন্য বেশ কিছু রাজ্যের বিধানসভা আগেই ভেঙে দিতে হয়েছিল।
তবে আলোচ্য বিলটি যে নির্বাচন কমিশনকে অতিরিক্ত ক্ষমতা দিচ্ছে, তা নিয়ে প্রাক্তন বিচারপতি খেহেরের সঙ্গে একই সুরে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ও। দু’জনেরই মতে, বিলটি পাশ হলে তা কমিশনকে একসঙ্গে নির্বাচন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা ভোটে স্থগিতাদেশ জারি বা বিধানসভার মেয়াদ ছোট করার ক্ষমতা দেবে। সংবিধানের যে অংশে নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশন গঠন করার কথা বলা হয়েছে, সেই পঞ্চদশ অংশ পরিবর্তন করার ক্ষমতাও পাবে কমিশন। ভবিষ্যতে তাই রাষ্ট্রপতিকে পাঠানো কেবল একটি রিপোর্টের মাধ্যমে কোনও বিধানসভার মেয়াদ সংক্ষিপ্ত করা বা কমিশনের হাতে সংবিধান পরিবর্তন করার ক্ষমতা তুলে দেওয়া কোনও ভাবেই সাংবিধানিক মাপকাঠিতে উতরোতে পারে না, মত চন্দ্রচূড়ের। অন্য দিকে খেহরের মতে, কোনও বিধানসভার মেয়াদ সংক্ষিপ্ত করা হবে কি না, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকুক সংসদ কিংবা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার হাতে। কমিশনের হাতে নয়।
দুই প্রাক্তন প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, সংখ্যাগরিষ্ঠতার অভাবে যদি কোনও সরকার পড়ে যায় এবং যৌথ নির্বাচন যদি কিছু মাস পরেই হওয়ার থাকে, সে ক্ষেত্রে ওই রাজ্যে কী হবে, সে বিষয়ে বিলে স্পষ্ট ভাবে কিছু বলা নেই। চন্দ্রচূড় আরও বলেন, সংবিধানের ৩৫২ নম্বর ধারায় বলা আছে, জরুরি অবস্থার সময়ে লোকসভা ও বিধানসভার মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে। তাঁর মতে, কমিশনের হাতে লোকসভা ও বিধানসভার মেয়াদ ছোট-বড় করার ক্ষমতা তুলে দেওয়া হলে তাতে সংবিধানের ওই ধারার কোনও গুরুত্ব থাকে না। তা ছাড়া ওই জরুরি অবস্থা শেষ হলে লোকসভা-বিধানসভা নির্বাচন কী সূত্র মেনে হবে, সে বিষয়ে কোনও কিছু বলা নেই বিলে। সূত্রের মতে, চন্দ্রচূড় বলেন, সে ক্ষেত্রে সরকারকে বেছে নিতে হবে, তারা লোকসভা না বিধানসভা, কার মেয়াদ ছোট-বড় করবে। যা নিয়েও নীরব বিলটি।
সূত্রের মতে, আজ নিজের বক্তব্যে তিন দফা সুরক্ষাবিধির সুপারিশ করেছেন চন্দ্রচূড়। তিনি জানিয়েছেন, কেবল জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার পরিস্থিতিতেই যেন একমাত্র নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। দ্বিতীয়ত, এ ধরনের ভোট পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত যেন সংসদের দু’টি কক্ষেই সর্বসম্মতিক্রমে পাশ করানো হয়। তৃতীয়ত, অনির্দিষ্টকালীন ভাবে ভোট পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না কমিশন। কবে ভোট করা হবে, সেই নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিতে হবে কমিশনকে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)