গত কিছু দিন ধরে একের পর এক অপহরণের ঘটনা করিমগঞ্জ পুলিশের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। একের পর এক ব্যবসায়ী অপহরণের ঘটনায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে পুলিশ। শেষ পর্যন্ত সেই অপহরণ চক্রের চাঁইদের গ্রেফতার করে মুখরক্ষা করল করিমগঞ্জ জেলা পুলিশ।
আজ জেলা পুলিশ সুপার প্রদীপরঞ্জন কর রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক ডেকে এই ‘অপারেশন’-এর খুঁটিনাটি জানান। তিনি জানান, শুধু অপহরণই নয়, নারীদেহের ব্যবসাও চালাত আলফাস, নুর খান, কালাম, জামাল, খালিকরা। গত কাল রাতে করিমগঞ্জ পুলিশ অভিযান চালিয়ে একটি পিস্তল-সহ অপহরণে ব্যবহার করা একটি অল্টো গাড়ি উদ্ধার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। এখন পর্যন্ত দু’দফার অভিযানে দু’টি পিস্তল, কয়েক রাউন্ড গুলি, বেশ কিছু মোবাইল ফোন, তিনটি গাড়ি, একটি মোটরবাইক-সহ ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে একজন মহিলাও রয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, শহরের পেট্রোল পাম্প এলাকায় যাত্রীর খোঁজে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখত অপহরণকারীরা। গাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকত দুষ্কৃতীরা। নির্দিষ্ট লোকটি গাড়িতে উঠলেই বাইরে থাকা অন্য দুষ্কৃতীরা যাত্রী সেজেই গাড়িতে চড়ে বসত। গাড়িটি কিছু দূর যাওয়ার পর দুষ্কৃতীরা নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে অপহরণ করার কথা জানিয়ে দিত। করিমগঞ্জ শহর থেকে নারায়ণ পাল, সুরজিত্ চক্রবর্তীকে একই ভাবে অপহরণের পর পুলিশ সুপার নিজেই তদন্তে নামেন। আজ পুলিশ কর্তারা জানান, নারায়ণ পালকে অপহরণের পর গুয়াহাটিতে মুক্তিপণের টাকা দেওয়ার সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নবীন সিংহ নিজেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু সেই সময় দুষ্কৃতীদের পুলিশ পাকড়াও করলে নারায়ণ পালকে তারা মেরে ফেলতে পারে বলেই পুলিশ অ্যাকশনে নামে। তারপর থেকেই পুলিশ করিমগঞ্জের সর্বত্র জাল বিছিয়ে রাখে। বদরপুরের বানিয়ারগুল থেকে আলফাস, নুর খান এবং কালামকে গ্রেফতার করা হয়। পাশাপাশি একটি পিস্তল, দু’টি গাড়ি, একটি বাইক উদ্ধার করে। পিস্তল রাখার দায়ে আনোয়ারা বেগম নামে এক মহিলাকেও গ্রেফতার করে তারা। গত কাল রাতে করিমগঞ্জ পুলিশ বসলা এলাকায় দ্বিতীয় দফার অভিযান চালিয়ে আব্দুল খালিকের বাড়ি থেকে অপর একটি পিস্তল, একটি অল্টো গাড়ি-সহ জামাল এবং খালিককে গ্রেফতার করে। করিমগঞ্জ পুলিশের খাতায় খালিক একজন দাগি অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত। আট বছর আগে বাংলাদেশে মাদক পাচার করতে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে জখম হয় সে। অপহরণের ঘটনায় সে অন্যতম অভিযুক্ত। প্রদীপবাবু জানান, ১০-১২ জন দুষ্কৃতী এই চক্রে জড়িত। বরাক উপত্যকা ছাড়াও গুয়াহাটিতে তাদের নেটওয়ার্ক রয়েছে। এমনকী অপহরণের পাশাপাশি, নারীদেহের ব্যবসাও চালাত এই দুষ্কৃতীরা। তাদের সঙ্গে থাকা মহিলাদের দিয়ে বিভিন্ন জনকে দিয়ে ফোন করিয়ে তাদের ফাঁসিয়ে অপহরণ করত বলে পুলিশের সন্দেহ।
করিমগঞ্জ পুলিশের একটি বিশেষ দল আজই গুয়াহাটির রওয়ানা হচ্ছে বলে সুপার জানান। তাঁর মতে এই চক্রটিকে উত্খাত করতে না পারলে বরাকে অপহরণ ‘ব্যবসা’র আকার নিত। কিছুদিনের মধ্যেই শিলচর থেকে একজনকে অপহরণের ছক কষে ছিল এই দুষ্কৃতীরা। সুপার জানান, অপহরণে জড়িত দুষ্কৃতীরা অত্যন্ত চতুর। যে মোবাইল ফোন থেকে মুক্তিপণের টাকা দাবি করা হত সেই ফোন থেকে কাউকে ফোন করা হত না। ফলে পুলিশকে অপহরণের সূত্র পেতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy