E-Paper

রেডিয়ো কলারের ফাঁসে প্রধানমন্ত্রীর সাধের প্রকল্প

গত সেপ্টেম্বরে মধ্যপ্রদেশের কুনো জাতীয় উদ্যানে চিতা পুনঃস্থাপন কেন্দ্র চালু হওয়ার পরে, প্রথম পর্যায়ে নামিবিয়া এবং দ্বিতীয় ধাপে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে মোট ২০টি চিতা উড়িয়ে আনা হয়েছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:৩৫
cheetah.

রেডিয়ো কলার পরিয়ে চিতাদের উপরে গোয়েন্দাগিরি করতে চেয়েছিলেন প্রকল্পের কর্তারা। —ফাইল চিত্র।

রেডিয়ো কলারের ফাঁসে নাভিশ্বাস উঠেছে প্রধানমন্ত্রীর সাধের চিতা পুনঃস্থাপন প্রকল্পের। শেষতক এমনই তত্ত্ব খাড়া করল কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশমন্ত্রক। গত আড়াই মাসে শাবক-সহ ১০টি চিতার প্রাণহানি এবং গত কয়েক দিনে আরও দুটি অসুস্থ হয়ে পড়ায় বিপত্তির কারণ হিসেবে রেডিয়ো কলারকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন ‘প্রজেক্ট চিতা’র কর্তারা। কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে কলার লাগানোর পরে ইতিমধ্যেই তা তড়িঘড়ি খুলে ফেলার হিড়িক পড়ে গিয়েছে।

চামড়ার একটি বকলেস, তাতে জুড়ে দেওয়া ছোট্ট একটি রেডিয়ো ট্রান্সমিটার। যার সাহায্যে ক্রমাগত নজরদারি চালানো যায় চিতার গতিবিধির উপরে। সঙ্গে মিলতে পারে তার ব্যবহারিক আচরণের ইশারাও। রেডিয়ো কলার পরিয়ে চিতাদের উপরে এমনই গোয়েন্দাগিরি করতে চেয়েছিলেন প্রকল্পের কর্তারা। রেডিয়ো কলার বিশেষজ্ঞ ইন্দ্রজিৎ কুমার বলছেন, ‘‘বন্যপ্রাণীর গলায় খুব আঁটোসাঁটো করে রেডিয়ো কলার পরালে হাঁসফাঁস অবস্থা হতে পারে। সম্ভাবনা থাকে নেকরোসিস হওয়ার। আবার খুব ঢিলেঢালা করে পরালে বার বার গলায়-ঘাড়ে কলারের ঘষা লেগে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে। ‘স্টাফাইলোকক্কাস অরাস’
নামে এক ধরনের জীবাণু সেই ক্ষতকে বিষিয়ে সেপ্টিসেমিয়ার দিকে ঠেলে দিতে পারে। কুনোর চিতাদের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় কারণই দায়ী বলে মনে হচ্ছে।’’ তিনি জানান, বাঘ বা লেপার্ডের তুলনায় চিতার চামড়া রোমশ হলেও কিঞ্চিৎ পাতলা হয়। ফলে ক্রমাগত ঘষা লাগায় দ্রুত ক্ষত হতে বাধ্য। প্রজেক্ট চিতা সূত্রে জানা গিয়েছে, যে ৫টি চিতা মারা গিয়েছে তার মধ্যে দু’টির গলায় ক্ষত বিষিয়ে সেপ্টিসেমিয়া হয়েছিল। অন্য তিনটির গলাতেও ছিল স্পষ্ট ক্ষত চিহ্ন।

বিশেষজ্ঞদের সিংহভাগের আপত্তি খারিজ করে গত সেপ্টেম্বরে মধ্যপ্রদেশের কুনো জাতীয় উদ্যানে চিতা পুনঃস্থাপন কেন্দ্র চালু হওয়ার পরে, প্রথম পর্যায়ে নামিবিয়া এবং দ্বিতীয় ধাপে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে মোট ২০টি চিতা উড়িয়ে আনা হয়েছিল। মাস কয়েক তাদের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ঘেরাটোপে রেখে অতঃপর রেডিয়ো কলার পরিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল কুনোর জঙ্গলে।

শুধু রেডিয়ো কলারই নয়, বিশেষজ্ঞদের কপালে ভাঁজ ফেলে দোসর হয়েছে আরও কয়েকটি কারণ। মধ্যপ্রদেশের কুনো জাতীয় উদ্যানকে চিতা পুনঃস্থাপন কেন্দ্র হিসেবে বেছে নেওয়ার প্রথম দিবস থেকেই— বিস্তৃর্ণ ঘাসজমি বা সাভানা সুলভ বনাঞ্চলের অভাব, বিরূপ আবহাওয়া, চিতাদের খাদ্য তালিকায় উপযুক্ত জেমবাক ও স্প্রিংবাকের মতো ছোট হরিণের আকাল, বাঘ এবং চিতাবাঘের (লেপার্ড) দাপট সর্বোপরি বনাঞ্চলে ২০টির বেশি চিতার স্থান সঙ্কুলতা, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছিলেন বিশেষজ্ঞরা। রেডিয়ো কলারের বিপত্তি সেই তালিকায় শেষ সংযোজন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Cheetah Narendra Modi

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy