E-Paper

আদানি নিয়ে ফের মুলতুবি অধিবেশন, গ্রেফতারি চান রাহুল

সোমবার সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনে বিরোধীরা আদানি ঘুষ-কাণ্ড নিয়ে আলোচনার দাবি তুলতেই লোকসভা ও রাজ্যসভা পত্রপাঠ মুলতুবি করে দেওয়া হয়েছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:২৬
রাহুল গান্ধী।

রাহুল গান্ধী। ছবি পিটিআই।

গৌতম আদানি ও তাঁর ভাইপোর বিরুদ্ধে আমেরিকায় দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করল আদানি গোষ্ঠী। তবে গৌতম আদানির গ্রেফতারির দাবিতে অটল রাহুল গান্ধী। লোকসভার বিরোধী দলনেতার দাবি, ‘‘আপনারা কি ভাবছিলেন, আদানি অভিযোগ স্বীকার করে নেবে? আদানিকে গ্রেফতার করতেই হবে, যেমনটা আমরা বলেছি।’’

আদানি ঘুষ-কাণ্ড নিয়ে আলোচনা এড়াতে বুধবারও সংসদের অধিবেশন মুলতুবি করে দেওয়া হয়েছে। সোমবার সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনে বিরোধীরা আদানি ঘুষ-কাণ্ড নিয়ে আলোচনার দাবি তুলতেই লোকসভা ও রাজ্যসভা পত্রপাঠ মুলতুবি করে দেওয়া হয়েছিল। মঙ্গলবার সংবিধান দিবসের জন্য অধিবেশন বসেনি। বুধবার ফের লোকসভা, রাজ্যসভায় কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা বাকি সব কার্যসূচি মুলতুবি করে আদানি ঘুষ-কাণ্ড নিয়ে আলোচনা চাইতেই এ দিনের মতো অধিবেশন মুলতুবি করে দেওয়া হয়।

আদানি গোষ্ঠী আজ শেয়ার বাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি-কে তাদের বিরুদ্ধে ও সংস্থার ডিরেক্টরদের বিরুদ্ধে আমেরিকার আদালতে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ দায়েরের কথা জানিয়েছে। আমেরিকার বিভারবিভাগীয় দফতর সে দেশের আদালতে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ভারতে ঘুষ দিয়ে সৌর বিদ্যুৎ বেশি দামে বেচার বরাত আদায়ের অভিযোগ তুলেছিল। শেয়ার বাজার আদানি গ্রিন এনার্জি সংস্থার বিরুদ্ধে তথ্য গোপন করে লগ্নিকারীদের প্রতারণার অভিযোগ তোলে।

আজ আদানি গ্রিন জানিয়েছে, আমেরিকার আদালতে পাঁচ দফা অভিযোগ উঠেছে। গৌতম ও সাগর আদানির বিরুদ্ধে আমেরিকার ‘ফরেন কোরাপ্ট প্র্যাকটিস অ্যাক্ট’ লঙ্ঘনের অভিযোগ বা বিচারবিভাগীয় প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠেনি। তাঁদের বিরুদ্ধে শুধুমাত্র শেয়ার বাজারের নিয়ম লঙ্ঘনের তিন দফা অভিযোগ রয়েছে। যাতে শুধুমাত্র জরিমানা হয়। আদানি গোষ্ঠীর এই দাবির পরে সংসদ চত্বরে লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘ছোট ছোট অভিযোগে বহু মানুষকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আমেরিকার আদালতে হাজার হাজার কোটি টাকার ঘুষের চার্জশিট জমা পড়েছে। তারপরেও কেন্দ্রীয় সরকার তাঁকে বাঁচাচ্ছে।’’

সরকারি সূত্রের বক্তব্য, আদানিদের বিরুদ্ধে আমেরিকায় গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে এখনও ভারতকে সরকারি ভাবে কিছুই জানানো হয়নি। ফলে সরকারের কিছু করার নেই। লোকসভায় কংগ্রেসের উপ-দলনেতা গৌরব গগৈ বলেন, গৌতম আদানির বিরুদ্ধে আমেরিকার আদালতে অভিযোগের পরে ফ্রান্স, বাংলাদেশ, কেনিয়া, আমেরিকা-সহ একাধিক দেশ আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের চুক্তি বাতিল করছে বা পর্যালোচনা করছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার বা সরকারের কোনও তদন্তকারী সংস্থা কোনও পদক্ষেপ করেনি। কেন মোদী সরকার দেশের স্বার্থের বদলে এক জন ব্যবসায়ীর স্বার্থ রক্ষায় মরিয়া?

এ দিন সকালে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে ও লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল ‘ইন্ডিয়া’র বাকি শরিকদের সঙ্গে সংসদের কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন। লোকসভা ও রাজ্যসভায় কংগ্রেস সাংসদেরা মুলতুবি প্রস্তাব এনেছিলেন। রাজ্যসভার কংগ্রেস সাংসদেরা আদানি কাণ্ড নিয়ে মুলতুবি প্রস্তাব আনলেও আম আদমি পার্টি দিল্লির অপরাধ, তৃণমূল-ডিএমকে-সিপিআই মণিপুরের অশান্তি নিয়ে, এসপি সাংসদেরা সম্ভলের হিংসা নিয়ে মুলতুবি প্রস্তাব এনেছিলেন।

আদানি গোষ্ঠীর হয়ে আজ দুই দুঁদে আইনজীবী মুকুল রোহতগি ও মহেশ জেঠমলানী ময়দানে নেমেছেন। কেন্দ্রের প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল বলেন, ‘‘আমি আমেরিকার আদালতের চার্জশিট পড়ে নিজের মতামত জানাচ্ছি। আমি আদানি গোষ্ঠীর মুখপাত্র নই। তবে আদানি গোষ্ঠীর হয়ে অনেক মামলা লড়েছি।’’ রাজ্যসভার রাষ্ট্রপতি মনোনীত সাংসদ মহেশ বলেন, ‘‘এটা রাজনৈতিক হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। আমেরিকার বিচারবিভাগীয় দফতর তাড়াহুড়ো করেছে।’’

প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে গৌতম আদানি অভিনন্দন জানানোয় তাঁর বিরুদ্ধে বাইডেন প্রশাসন পদক্ষেপ করেছে কি না, সেই প্রশ্ন তোলেন জেঠমলানী। কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেন, ‘মোদানি’ বড় আইনজীবীদের দিয়ে কামান দাগছে। কিন্তু পালানোর পথ নেই। আদানির বিরুদ্ধে যে সব তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে, তার পরে ইডি, সিবিআই, সেবি-র সক্রিয় ভাবে তদন্ত করা উচিত। তাদের উচিত, দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক-শিল্পপতির আঁতাঁতের হাতিয়ার হিসেবে কাজ না করে দেশের প্রতি দায়িত্ব পালন করা। ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Gautam Adani bribery case

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy