উত্তরাখণ্ডে মৃত সাংবাদিক রাজীব প্রতাপের মৃত্যুর তদন্তের জন্য বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করল পুলিশ। যোশিয়ারা বাঁধের কাছে উদ্ধার হয় রাজীবের দেহ। ময়নাতদন্তে জানা গিয়েছে, বুক ও পেটে অভ্যন্তরীণ আঘাতের ফলেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর দাবি, রাজীবের মৃত্যুর ঘটনাপ্রবাহে ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত রয়েছে। বিজেপি জমানায় সৎ সাংবাদিকতার উপরে আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তারছায়া পড়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ১৮ সেপ্টেম্বর নিখোঁজ হন রাজীব। ১৯ সেপ্টেম্বর তাঁর পরিবার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পুলিশের দাবি, অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই উত্তরকাশী পুলিশ তদন্তে নামে। উত্তরকাশী বাজার ও তার আশপাশের এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে কিছু সূত্র পাওয়া যায়। ওই এলাকাতেই রাজীবকে শেষ বার দেখা গিয়েছিল। পরে জাতীয় ও রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যেরাও তল্লাশি অভিযানে যোগ দেন। ২০ সেপ্টেম্বর যে গাড়িটি রাজীবকে শেষ বার চালাতে দেখা গিয়েছিল সেই গাড়িটিকে ভাগীরথী নদীতে বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখা যায়।
এর পরে অপহরণের সন্দেহ দেখা দেয় রাজীবের পরিবারের সদস্যদের মনে। ২৮ সেপ্টেম্বর একটি দেহ উদ্ধার করে যৌথ বাহিনী। পরে সেই দেহটি রাজীবের বলে শনাক্ত করা হয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরে উত্তরকাশী পুলিশের ডেপুটি সুপারের নেতৃত্বে একটি দল গঠন করা হয়। উত্তরাখণ্ড পুলিশের ডিজি দীপম শেঠ জানান, ওই দলটি সব দিক নিয়ে তদন্ত করে দ্রুত রিপোর্ট জমা দেবে।
উত্তরকাশীর পুলিশ সুপার সরিতা ডোবরাল জানান, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তাঁরা বুঝতে পারেন ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে রাজীব বন্ধুদের সঙ্গে ছিলেন। পরে বন্ধুর গাড়িতে তিনি গাঙ্গোরীর দিকে যান। রাত ১১ বেজে ৩৯ মিনিটে দেখা যায় তিনি একা গাড়ি চালাচ্ছেন। পরের দিন উদ্ধার হয় গাড়িটি। ২৮ সেপ্টেম্বর ভাগীরথী নদীর উপরে তৈরি যোশীয়ারা বাঁধের কাছে তাঁর দেহের খোঁজ পাওয়া যায়।
রাজীবের মৃত্যুর কারণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তাঁর পরিবার। তাঁর ভাই অলোকপ্রতাপ সিংহের দাবি, জেলা হাসপাতালের অবস্থা নিয়ে খবর করার ফলে রাজীবকে চাপের মুখে পড়তে হয়েছিল। সম্প্রতি তাঁকে বারবার খুনের হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
অলোকের দাবি, ‘‘রাজীবকে বারবার ওর করা খবর মুছে দেওয়ার জন্য ফোন করা হত। কিন্তু ও কখনও রাজি হয়নি। ফেব্রুয়ারি মাসে এক দল লোক মত্ত অবস্থায় আমাদের বাড়িতে এসে হুমকি দেয়।’’ অলোকের দাবি, রাজীবের দেহের ক্ষত গাড়ি দুর্ঘটনার তত্ত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। রাজীবের ডিজিটাল খবরের মঞ্চটি ওই এলাকায় নানা গোপন তথ্য ফাঁস করার জন্য পরিচিত ছিল।
বিষয়টি নিয়ে উত্তরাখণ্ড তথা কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে নিশানা করেছেন কংগ্রেস নেতা তথা লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। তাঁর মতে, ‘‘বিজেপি জমানায় যাঁরা সত্য খবর লিখছেন, মানুষের জন্য মুখ খুলছেন ও সরকারকে প্রশ্ন করছেন তাঁদের মুখ হুমকি ও হিংসার মাধ্যমে বন্ধ করা হচ্ছে। রাজীবের মৃত্যুর ঘটনাপ্রবাহে ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত আছে। তাই এখনই নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের প্রয়োজন। রাজীবের পরিবারের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার আছে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)