Advertisement
E-Paper

কেদার-যাত্রী রাহুলকে ধরতে ঘোড়ায় মুখ্যমন্ত্রী

রাস্তা এত খাড়াই, মনে হয় কোথাও কোথাও সটান উঠে গিয়েছে প্রায় ৯০ ডিগ্রি কোণে। এক দিকে পাহাড়ের দেওয়াল, অন্য দিকে অতলস্পর্শী খাদ। কত নীচে বয়ে চলেছে মন্দাকিনী। ওই বন্ধুর পথ বেয়ে স্বচ্ছন্দে এগিয়ে চলেছেন তিনি— রাহুল গাঁধী। সেই হাঁটার সঙ্গে তাল রাখতে গিয়ে হিমসিম ক্যামেরাধারী তামাম মিডিয়া, সঙ্গী রাজনীতিকদের ভিড়টা। একমাত্র ইস্পাতকঠিন মুখের এসপিজি অফিসারেরাই কিছুটা পাল্লা দিয়ে হাঁটছেন। হরিশ রাওয়াত কোথায়? গত কাল যিনি বলছিলেন, ‘‘৩৬ বছর আগে আমিই ইন্দিরাজির সঙ্গে বদ্রীনাথে এসেছিলাম।’’ শোনা গেল অনেকটা, অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী। মাঝেমধ্যে নাকি টাট্টুঘোড়ার পিঠেও চড়তে হচ্ছে প্রবীণ কংগ্রেস নেতাকে।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১৪
প্রধান পুরোহিত ভীমশঙ্কর লিঙ্গের সঙ্গে রাহুল গাঁধী। শুক্রবার কেদারনাথ মন্দির চত্বরে। ছবি: পিটিআই।

প্রধান পুরোহিত ভীমশঙ্কর লিঙ্গের সঙ্গে রাহুল গাঁধী। শুক্রবার কেদারনাথ মন্দির চত্বরে। ছবি: পিটিআই।

রাস্তা এত খাড়াই, মনে হয় কোথাও কোথাও সটান উঠে গিয়েছে প্রায় ৯০ ডিগ্রি কোণে। এক দিকে পাহাড়ের দেওয়াল, অন্য দিকে অতলস্পর্শী খাদ। কত নীচে বয়ে চলেছে মন্দাকিনী।

ওই বন্ধুর পথ বেয়ে স্বচ্ছন্দে এগিয়ে চলেছেন তিনি— রাহুল গাঁধী।

সেই হাঁটার সঙ্গে তাল রাখতে গিয়ে হিমসিম ক্যামেরাধারী তামাম মিডিয়া, সঙ্গী রাজনীতিকদের ভিড়টা। একমাত্র ইস্পাতকঠিন মুখের এসপিজি অফিসারেরাই কিছুটা পাল্লা দিয়ে হাঁটছেন। হরিশ রাওয়াত কোথায়? গত কাল যিনি বলছিলেন, ‘‘৩৬ বছর আগে আমিই ইন্দিরাজির সঙ্গে বদ্রীনাথে এসেছিলাম।’’ শোনা গেল অনেকটা, অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী। মাঝেমধ্যে নাকি টাট্টুঘোড়ার পিঠেও চড়তে হচ্ছে প্রবীণ কংগ্রেস নেতাকে।

রাহুল কিন্তু হাঁটলেন। গোটাটাই। গৌরীকুণ্ড থেকে কেদারনাথ— ১৬ কিলোমিটার। এবং শুধু হাঁটলেন নয়, সঙ্গীদের হাঁটিয়ে মারলেন। এ বছরের মতো আজই দরজা খুলল কেদারের মন্দিরের। নির্ধারিত সময় ছিল সকাল সাড়ে আটটা। সেটা হতে হতে আরও মিনিট কুড়ি পিছোয়। তার দেড় ঘণ্টা আগেই হেসেখেলে মন্দিরে পৌঁছে গিয়েছেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি।

পরনে ছাই রঙের টি-শার্টের ওপরে কালো জ্যাকেট, নীল জিন্‌স। রাহুলের কেদারনাথ যাত্রা শুরু হয়েছিল গত কাল। দেহরাদূনের জলি গ্রান্ট বিমানবন্দর থেকে প্রথমে গৌরীকুণ্ডে পৌঁছেছিলেন। এক পর টানা ১০ কিলোমিটার ‘ট্রেক’। লিঞ্চোলি পৌঁছে সেখানেই সদলবল রাত কাটান রাহুল। এই লিঞ্চোলি থেকেই শেষ ছ’কিলোমিটার রাস্তা সব চেয়ে কঠিন। কিন্তু আজ ভোরে বেরিয়ে সেই পথটুকুই যে ভাবে অনায়াসে পেরিয়েছেন রাহুল, পাকা ট্রেকাররাও লজ্জা পাবেন।

শীতকালীন আবাস থেকে কেদারের বিগ্রহ মন্দিরে পৌঁছেছিল গত সন্ধ্যায়। আজ ছিল ‘কপাট খোলা’ অনুষ্ঠান ও উদ্বোধনী পুজো। সেই পুজোয় অংশ নেওয়ার পর পুজো দেন রাহুল নিজেও। মিনিট দশেক মন্দিরে ছিলেন। তার পর প্রধান পুরোহিত ভীমশঙ্কর লিঙ্গের সঙ্গে যখন বেরিয়ে আসেন তখন তাঁর কপাল জুড়ে হলুদ প্রসাদী তিলক। রাহুল বললেন, ‘‘সাধারণত ঈশ্বরের কাছে কিছু চাই না। আজ কিন্তু ভিতরে ঢুকতেই শরীরে আগুনের মতো একটা শক্তি অনুভব করলাম।’’

রাতারাতি অমেঠী সফর বাতিল করে সনিয়া-পুত্রের কেদার-যাত্রার খবর চাউর হতেই শুরু হয়েছিল জল্পনার পর জল্পনা। একটাই প্রশ্ন— কেন কেদার? কেউ বলেছিলেন, সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়কে বার্তা দিচ্ছেন রাহুল। আবার কারও মতে, এ আসলে তাঁর ঠাকুমার দেখানো পথ। ১৯৭৭-এর লোকসভা ভোটে হেরে গিয়ে ’৭৯-এ বদ্রীনাথে গিয়েছিলেন ইন্দিরা গাঁধী। কংগ্রেসের অবস্থা তখন শোচনীয়। দিকে দিকে ভাঙন। কিন্তু ইন্দিরার বদ্রীনাথ ধাম সফরের পরেই ’৮০ সালে বিপুল ভোটে জিতে কেন্দ্রে ক্ষমতায় ফেরে কংগ্রেস। আজ দলের নৌকো তেমনই টালমাটাল। তাই প্রশ্ন উঠেছে, সত্যিই কি ম্যাজিকের আশায় কেদারের দ্বারে রাহুল?

কংগ্রেস সহ-সভাপতি অবশ্য সাফ জানালেন, কেদারনাথে এসেছেন দু’টো কারণে। প্রথমত, ২০১৩ সালে হড়পা বানে মৃতদের শ্রদ্ধা জানাতে। সে বার বিপর্যয়ের পরে নিজে এসেছিলেন কেদারে। এ বার যে গোটা রাস্তাটা হেঁটে এসেছেন, তা-ও একটা বিশেষ কারণে। রাহুল মনে করেন, তিনি হেলিকপ্টারে এলে মৃত পর্যটকদের অশ্রদ্ধা করা হতো।

আর দ্বিতীয় কারণ? সেটা হল, স্থানীয় মালবাহকদের পাশে দাঁড়ানো। রাহুলের কথায়, ‘‘ওই বিপর্যয়ের পর থেকে কেদারনাথে পর্যটকদের আনাগোনা বেশ কমে গিয়েছে। পর্যটন ব্যবসার হাল খুবই খারাপ। এবং তার সঙ্গে জড়িত মানুষগুলোর অবস্থাও শোচনীয়। ভাবলাম, আমি যদি হেঁটে যাই, তা হলে সাধারণ মানুষের ভয় একটু কমবে। লোকে ফের আসা শুরু করবে। এখানকার কুলিভাইদেরও উপকার হবে।’’

একই কথা বললেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীও। জানালেন, চার ধাম যাত্রা যে আর কষ্টকর নেই, সেই বার্তা দিতেই হেঁটে কেদার যাবেন বলে ঠিক করেছিলেন রাহুল। সেই সঙ্গে হরিশ রাওয়াত যোগ করলেন, ‘‘রাহুল যে ভাবে ট্রেক করলেন, তাতে স্পষ্ট, কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ এখন নিরাপদ হাতে।’’

Kedarnath Rahul Gandhi Uttarakhand Kedarnath Temple Congress
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy