— ফাইল চিত্র।
ফাফড়া, থেপলা, ধোকলা খেয়ে-খেয়ে ভুঁড়ি বাড়ছিল রাহুল গাঁধীর।
এক বছর আগের কথা। গুজরাতের বিধানসভা ভোটের জন্য চুটিয়ে প্রচার করছেন। নিজেই জানালেন, গুজরাতি খাবার খেয়ে ‘ওজন’ বাড়ছে তাঁর। কয়েক দিনের মাথায় দায়িত্ব নিলেন কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে। ঠিক আজকের দিনটিতেই। আর ঠিক এক বছরে তাঁর রাজনৈতিক ওজন এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে শুধু কংগ্রেস নয়, বিরোধী জোটের শরিক নেতারাও রাহুলকে পরের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাইছেন। এমনকি খোদ বিজেপির শরিক শিবসেনাও মনে করছে, নরেন্দ্র মোদীকে মাত দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন একমাত্র রাহুল গাঁধীই।
গত বছর আজকের দিনটিতেই দিল্লিতে এআইসিসি দফতরের লনে মা সনিয়া গাঁধীর কপালে চুমু খেয়ে দলের ভার নিজের হাতে তুলে নেন রাহুল। তখনও পর্যন্ত বিজেপির কাছে রাহুল ছিলেন শুধু ‘পাপ্পু’ই। কিন্তু বছর ঘুরতে আর সে কথাটি মুখে আনার সাহস কুলোয় না বিজেপির কোনও ছোট-মাঝারি নেতার। সংসদে মোদীর সামনেই রাহুল বলেছেন, ‘‘আমি আপনার কাছে ‘পাপ্পু’ হতে পারি, আপনি আমায় ঘৃণা করতে পারেন। কিন্তু আমি আপনাকে ভালবাসা শেখাব।’’ বলেই মোদীকে জড়িয়ে ধরেছিলেন ভরা লোকসভায়।
ছক-ভাঙা রাহুলের এই রাজনীতিই এখন চিন্তায় ফেলে দিয়েছে মোদী এবং অমিত শাহকে। মোদীর ‘নেতিবাচক’ রাজনীতির বিকল্প হিসেবে রাহুল নিয়ে এসেছেন নতুন এক ‘ইতিবাচক’ রাজনীতি। আর তাতেই মোদী-শাহের রাজ্য গুজরাতে প্রায় ধরাশায়ী করে ফেলেছিলেন বিজেপিকে। কর্নাটকে মোক্ষম চালে বিজেপিকে টেক্কা দিয়ে কুমারস্বামীর সঙ্গে সরকার গড়ে ফেলেছেন। আর হালে বিজেপির গড় হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যও ছিনিয়ে নিয়েছেন।
এই ধাক্কা সামলাতে না-পেরে মোদী আর তাঁর সেনাপতিরা রোজ এক জনকেই নিশানা করছেন। রাহুল গাঁধী। কংগ্রেসের নেতারাও রাহুলের নতুন কাজের ধরনে চাঙ্গা। তাঁরা বলছেন, ‘‘রাহুলের চালে মোদীর হিন্দুত্ব-রাজনীতিও এখন ভোঁতা হয়েছে। রাহুল যখন প্রথম যখন রাফালের কথা তুলতে শুরু করলেন, আমরাও ভাবিনি এটি এই মাত্রায় যাবে। কিন্তু এখন সকলের মুখে মুখে ঘুরছে, ‘চৌকিদার চোর’! অনেক বিরোধী নেতাও আগে রাহুলের নেতৃত্ব মানতে কুণ্ঠা বোধ করতেন। তাঁরাও ধীরে ধীরে মানছেন, নেতা রাহুলই।’’ তিন রাজ্যের ফলের পরে মায়াবতীর মতো জোট না-করা নেত্রীও কংগ্রেসকে সমর্থন করেছেন। বলেছেন, লোকসভা ভোটে বিজেপির বিরুদ্ধে ফায়দা পাবে কংগ্রেসই।
শিবসেনার সঞ্জয় রাউতের কথায়, ‘‘রাহুল গাঁধী এখন নেতা হয়ে উঠেছেন। মানুষ তাঁর কথা শুনতে চাইছেন। ২০১৯-এ লড়াইটা রাহুলের সঙ্গে মোদীরই।’’ নভজোৎ সিংহ সিধু অনেক দিন ধরেই বলছেন, ‘‘২০১৯ সালে লালকেল্লায় পতাকা ওড়াবেন রাহুলই।’’ চন্দ্রবাবু নায়ডু রাহুলকে নেতা মেনে বিরোধী জোটের সলতে পাকাচ্ছেন। আজ স্ট্যালিন সরাসরি প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে রাহুলের নাম প্রস্তাব করেন। এই অবস্থায় কংগ্রেসের রাজীব শুক্ল বলেন, ‘‘রাহুল এমন এক নেতা, যিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। তিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও বেছেছেন ঐক্যমতের ভিত্তিতে। ভোটের আগেও যেমন সকলকে একজোট করেছেন, ভোটের পরেও দলে কোনও কোন্দল দানা বাঁধতে দেননি।’’
সভাপদি পদে রাহুলের বর্ষপূর্তিতে সকাল থেকে শুভেচ্ছার ঢল নামে ১২ তুঘলক লেনে। অনেকে ফোনেও অভিনন্দন জানান রাহুলকে। সন্ধেয় চেন্নাইয়ে নেমে রাহুল টুইট করেন, ‘‘কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর পূর্তিতে একটি শক্তিশালী, ঐক্যবদ্ধ ও চনমনে কংগ্রেস গড়তে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকার কথা ফের জানাচ্ছি। আপনাদের শুভেচ্ছার জন্য ধন্যবাদ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy