Advertisement
E-Paper

অন্তরালে তিনি, তবু তাঁর জেদেই পথে তাবড় নেতা

এখনও অজ্ঞাতবাসে রয়েছেন তিনি। প্রকাশ্য রাজনীতির উঠোন থেকে দূরে। ‘আত্মমন্থন’ সেরে রাহুল গাঁধী কবে ফিরবেন তা নিয়ে দলের শীর্ষ সারির নেতারাও ধোঁয়াশায়। কিন্তু গাঁধী পরিবারের একরোখা তরুণটির দাওয়াই যে শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসে কাজ করতে শুরু করেছে, সংসদের সামনের সড়কেই তার একটা স্পষ্ট আভাস মিলল আজ। ঠান্ডা ঘরের রাজনীতি ছেড়ে নেতাদের পথে নেমে আন্দোলন করার কথা অনেক দিন ধরেই বলে যাচ্ছেন রাহুল। সংসদের সামনে আজ তেমনটাই দেখা গেল, রাহুল নিজে হাজির না থাকা সত্ত্বেও!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৫ ০৩:৩৯
কংগ্রেস সমর্থকদের হটাতে পুলিশের জল-কামান। সোমবার নয়াদিল্লির পার্লামেন্ট স্ট্রিটে। ছবি: পিটিআই

কংগ্রেস সমর্থকদের হটাতে পুলিশের জল-কামান। সোমবার নয়াদিল্লির পার্লামেন্ট স্ট্রিটে। ছবি: পিটিআই

এখনও অজ্ঞাতবাসে রয়েছেন তিনি। প্রকাশ্য রাজনীতির উঠোন থেকে দূরে। ‘আত্মমন্থন’ সেরে রাহুল গাঁধী কবে ফিরবেন তা নিয়ে দলের শীর্ষ সারির নেতারাও ধোঁয়াশায়। কিন্তু গাঁধী পরিবারের একরোখা তরুণটির দাওয়াই যে শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসে কাজ করতে শুরু করেছে, সংসদের সামনের সড়কেই তার একটা স্পষ্ট আভাস মিলল আজ। ঠান্ডা ঘরের রাজনীতি ছেড়ে নেতাদের পথে নেমে আন্দোলন করার কথা অনেক দিন ধরেই বলে যাচ্ছেন রাহুল। সংসদের সামনে আজ তেমনটাই দেখা গেল, রাহুল নিজে হাজির না থাকা সত্ত্বেও!

কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকার গঠিত হয়েছে দশ মাস। এই প্রথম জমি বিলের বিরোধিতা করে তথা কৃষকদের স্বার্থে পথে নেমে লাঠি খেলেন কংগ্রেস সমর্থকরা। তার থেকেও বড় ঘটনা হল, সেই ধর্নায় অংশ নিয়ে সংসদ মার্গে পুলিশি ব্যারিকেড ভাঙার নেতৃত্ব দিতে রাস্তায় নামতে হল সনিয়া গাঁধীর রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেলকে। যুব কংগ্রেসের সমর্থকদের উজ্জীবিত করতে এ-ও স্লোগান তুলতে হল, “নরেন্দ্র মোদী / কৃষক-বিরোধী।” প্রায় এক দশকের জড়তা কাটিয়ে আহমেদের মতোই পথে নামতে হল, গুলাম নবি আজাদ, আনন্দ শর্মা, অম্বিকা সোনি, কুমারী শৈলজা, জয়রাম রমেশদের মতো ‘তথাকথিত’ শীর্ষ স্তরের এক ঝাঁক নেতা-নেত্রীকে।

কংগ্রেসে সাংগঠনিক সংস্কার আনার ব্যাপারে রাহুলের একরোখা মনোভাব ও দলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সাপেক্ষে ছবিটা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।

তার কারণ, লোকসভা ভোটের আগে থেকেই সনিয়া-রাহুল সমানে দলের মধ্যে বলেছেন, ইউপিএ সরকার গত দশ বছরে মোটেই তেমন খারাপ কাজ করেনি। বরং প্রচুর ভাল কাজ করেছে। কিন্তু দলের নেতারা মানুষের থেকে এতটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন যে, আম আদমির কাছে সেই ভাল কাজগুলির কথাও ঠিক মতো তুলে ধরতে পারেননি তাঁরা। এমনকী, দলের কর্মীদের সঙ্গে দেখাই পর্যন্ত করতে চান না কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকে। তুলনায় তাঁদের কাছে প্রাধান্য পাচ্ছে গোষ্ঠী রাজনীতি ও স্বজনপোষণ। জেলা, রাজ্য বা কেন্দ্রীয় স্তরে কায়েমি স্বার্থ চরিতার্থ করাই তাঁদের লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। লোকসভা ভোটের পর থেকে কংগ্রেসের এই ধরনের নেতাদের মৌরসিপাট্টাই ভাঙতে চাইছেন রাহুল। চাইছেন, পদের দেমাকে যে বর্ষীয়ান নেতারা দলে ছড়ি ঘোরান, তাঁদের সঙ্গে নিচুতলার নেতাদের ফারাক কমিয়ে আনতে। রাহুলের তাই স্পষ্ট বক্তব্য, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে রাজনীতির তত্ত্ব না আওড়ে শীর্ষ নেতারাও সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করুন। রাহুল-ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, “আহমেদ পটেল, গুলাম নবির মতো নেতাদের রাস্তায় নামাটা সে দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ।”

প্রশ্ন উঠেছে তা হলে রাহুল নিজেই কেন অন্তরালে? জবাবে রাহুল-ঘনিষ্ঠ নেতাদের যুক্তি, সব আন্দোলনেই যে দলের সহ-সভাপতিকে সামিল হতে হবে, তিনি না থাকলে কর্মসূচি নেওয়া হবে না, এটা চলতে পারে না। যেখানে প্রয়োজন হবে, সেখানে শুধু রাহুল নন, সনিয়া গাঁধীও থাকবেন। যেমন, সম্প্রতি কয়লা খনি বণ্টন মামলায় মনমোহন সিংহকে সিবিআই তলবের কথা জেনেই, তাঁর বাসভবন পর্যন্ত মিছিল করে গিয়েছিলেন সনিয়া। ডেকে নিয়েছিলেন দলের সামনের সারির নেতাদেরও। কাল মোদীর জমি নীতির বিরুদ্ধে সংসদ ভবন থেকে রাষ্ট্রপতি ভবন পর্যন্ত মিছিল করবেন বিরোধী সাংসদরা। তাতেও দলীয় সাংসদের নেতৃত্বে থাকবেন সনিয়াই।

কেন্দ্রের জমি নীতির বিরোধিতা করে সপ্তাহ দুই আগে নয়াদিল্লির যন্তর-মন্তরে ধর্নার ডাক দিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতারা। কিন্তু জয়রাম রমেশের নেতৃত্বে সেই কর্মসূচি ডাহা ফেল করে। এর পর যুব কংগ্রেসকে কৃষক সত্যাগ্রহের দায়িত্ব দেন রাহুল। যুব কংগ্রেস সভাপতি তথা পঞ্জাব কংগ্রেসের তরুণ নেতা অমরেন্দ্র সিংহ রাজা ব্রারের নেতৃত্বে আজ প্রথমে রাজঘাট থেকে যন্তর-মন্তর পর্যন্ত মিছিল করেন কংগ্রেস সমর্থকরা। সেখানে সভা করে সংসদ ঘেরাওয়ের জন্য হাঁটা লাগান। সংসদ মার্গে ব্যারিকেড গড়ে পুলিশ জল-কামান ছুড়লে সেখানেই খণ্ডযুদ্ধ বাধে। তবে বেশি ক্ষণ চলেনি তা। কংগ্রেসের নেতাদের মতে, রাস্তায় নেমে আন্দোলন করাটাই ভুলতে বসেছিল কংগ্রেস। আজ যে এটুকু অন্তত করা গেল, সেটাই ইতিবাচক।

আর এটাই ভাবনায় রাখছে মোদী সরকারকে। কংগ্রেসের আক্রমণাত্মক অবস্থানেই স্পষ্ট, জমি বিল নিয়ে এখনও অনেকটা পথ হাঁটতে হবে সরকারকে। বাজেট অধিবেশনের প্রথমার্ধ্ব শেষ হচ্ছে শুক্রবার। লোকসভায় পাশ হয়ে গেলেও জমি বিল এখনও রাজ্যসভায় পেশই হয়নি। এবং তা করতে গেলেই কংগ্রেস ধুন্ধুমার বাধাবে, জানিয়ে দিয়েছেন দলের এক মুখপাত্র। ইঙ্গিত স্পষ্ট, বিল ছিঁড়ে, তাণ্ডব চালিয়ে রাজ্যসভা অচল করে দেওয়াই লক্ষ্য বিরোধীদের। কংগ্রেস, তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টি-সহ বিরোধী দলগুলির বাধা পেরিয়ে রাজ্যসভায় বিলটি পেশ করা গেলেও তা সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর দাবি উঠবে। এবং চলতি অধিবেশনে সিলেক্ট কমিটির পর্ব পেরিয়ে আসা শক্ত। সে ক্ষেত্রে ফের জমি অধ্যাদেশ জারি করতে হতে পারে সরকারকে।

rahul gandhi land aquisition bill congress agitation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy