Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
বরাক উপত্যকা

বাবার আসনে লড়তে চান গৌতমপুত্র, জল্পনা

ভোটের ময়দানে অসমের প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম রায়ের বিরুদ্ধে লড়তে পারেন তাঁরই ছেলে? এখন এই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছে গোটা রাজ্য, বরাক। জল্পনা উস্কে দিয়েছেন খোদ গৌতম-পুত্র রাহুলই! গত কাল নিজের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে তিনি ঘোষণা করেন, ‘‘২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে আমি কাটলিছড়া কেন্দ্রে লড়বই। কোনও দলের টিকিট পেলে ভাল, না হলে নির্দল প্রার্থী হিসেবে ময়দানে নামব।’’

গৌতম-পুত্র রাহুল রায়।

গৌতম-পুত্র রাহুল রায়।

অমিত দাস
হাইলাকান্দি শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৫ ০৩:২৯
Share: Save:

ভোটের ময়দানে অসমের প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম রায়ের বিরুদ্ধে লড়তে পারেন তাঁরই ছেলে? এখন এই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছে গোটা রাজ্য, বরাক।

জল্পনা উস্কে দিয়েছেন খোদ গৌতম-পুত্র রাহুলই! গত কাল নিজের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে তিনি ঘোষণা করেন, ‘‘২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে আমি কাটলিছড়া কেন্দ্রে লড়বই। কোনও দলের টিকিট পেলে ভাল, না হলে নির্দল প্রার্থী হিসেবে ময়দানে নামব।’’ উল্লেখ্য, বর্তমানে কাটলিছড়ারই বিধায়ক গৌতমবাবু।

পিতা-পুত্রের মধ্যে ঠাণ্ডা লড়াইয়ের আঁচ আগেও কয়েক বার মিলেছিল। কিন্তু এ বার তা প্রকাশ্যে এল। গৌতমবাবুর তিন দশকের খাসতালুক কাটলিছড়া দখলে কার্যত যুদ্ধের দামামা বাজালেন রাহুল রায়।

রাহুলবাবুর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে কাটলিছড়া-সহ বরাকের তিনটি জেলার অনেকে হাজির ছিলেন। গৌতম-তনয়ের ঘনিষ্ঠ কয়েক জন ইঙ্গিত দেন, প্রয়োজনে বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাতে পারেন রাহুলবাবু। তবে, এ নিয়ে সরাসরি তিনি কোনও কিছু বলতে চাননি।

ক্ষমতা দখলের জন্য হাইলাকান্দির রায় পরিবারের মধ্যে অসন্তোষের ‘চোরাস্রোত’ এ বার সবার সামনে এল। স্বাধীনতার এত বছর পরও তাঁর বাবার বিধানসভা কেন্দ্র কাটলিছড়ায় উন্নয়ন হয়নি বলে সমালোচনা করেছেন রাহুল। তাঁর কথায়, ‘‘ওখানে বিদ্যুৎ নেই, পানীয় জল নেই, নেই রাস্তা। সাধারণ মানুষ প্রচণ্ড সমস্যায় রয়েছেন।’’ সরাসরি বাবার (গৌতমবাবু) নাম না করে তিনি বলেন, ‘‘কাটলিছড়ার অনেক এলাকার বাসিন্দারা অপরিষ্কার জল ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন।’’

উল্লেখ্য, রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরী বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন গৌতমবাবু। পানীয় জলের সঙ্কটের কথা তুলে কার্যত তাঁর দিকেই তির ছুঁড়েছেন রাহুল। কাটলিছড়ায় অনেককে খোলা আকাশের নীচে অর্ধাহার-অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছ বলেও দাবি করেন গৌতম-পুত্র।

ওই অনুষ্ঠানে দেখা মেলেনি গৌতমবাবু, তাঁর স্ত্রীর। গত কাল সারা দিন কাটলিছড়ায় ঘুরেছেন গৌতমবাবু। কয়েকটি জন-সমাবেশ করেন। একই সঙ্গে তিনি জানিয়ে দেন, ফের কাটলিছড়া থেকেই ভোটে লড়বেন। দক্ষিণ হাইলাকান্দির রামনাথপুরে জেলা কংগ্রেস সভাপতি অশোক দত্তগুপ্তকে পাশে নিয়ে এক জনসভায় গৌতমবাবু বলেন, ‘‘এখনও এখানে অনেক কাজ বাকি। সে সব শেষ করতেই হবে। আমাকে এখানকার মানুষ ছাড়তে চান না। আগামী ভোটে তাই কাটলিছড়া থেকেই লড়ব।’’

গৌতমবাবুর ওই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পর কাটলিছড়াতেই ভোটে লড়ার কথা জানান তাঁর ছেলে।

রায় পরিবারের ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটের পর থেকেই গৌতমের সঙ্গে রাহুলের সম্পর্ক খারাপ হচ্ছিল। ওই নির্বাচনে আলগাপুর কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী রাহুল পরাজিত হন। আলগাপুরের বিধায়ক শহিদুল আলম চৌধুরীর প্রয়াণের পর ২০১৩ সালে ওই কেন্দ্রে উপনির্বাচন হয়। রাহুলবাবুর ইচ্ছা ছিল, তাঁকে ফের আলগাপুরে কংগ্রেস প্রার্থী করা হোক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গৌতমবাবুর স্ত্রী মন্দিরাদেবীকে কংগ্রেস প্রার্থী করা হয়। ভোটে তিনি জয়ী হন। এর পর গৌতমবাবুর সঙ্গে রাহুলের সম্পর্ক আরও খারাপ হয়।

জেলার বাসিন্দাদের একাংশ বলছেন, রায় পরিবারে এ যেন অনেকটা ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি। ১৯৮৫ সালে সন্তোষকুমার রায়কে চাপে ফেলে কাটলিছড়ার কংগ্রেস টিকিট আদায় করেন তাঁর ছেলে গৌতম। এ বার ওই ধাঁচেই কাটলিছড়ায় ভোটে লড়তে চাইছেন রাহুল।

তফাৎ একটাই। রাহুলবাবু জানিয়েছেন, কংগ্রেসের টিকিট না পেলে নির্দল হিসেবেই ভোটের ময়দানে নামবেন। হাইলাকান্দির অনেকে বলছেন, বিজেপি প্রার্থী হয়েও কাটলিছড়ায় লড়তে পারেন রাহুল। সে ক্ষেত্রে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হবেন গৌতমবাবু। রাহুলবাবুর ঘনিষ্ঠ কয়েক জন জানিয়েছেন, তাঁর বিজেপি প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রাজনৈতিক সূত্রে খবর, রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে গোপনে দেখা করেছেন রাহুল। তাঁকে সম্প্রতি সঙ্ঘ পরিবারের কয়েকটি অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছে। ১৭ এপ্রিল হাইলাকান্দির কৈয়া চা বাগানে একটি অনুষ্ঠানের মঞ্চে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, আরএসএস, বিজেপি নেতাদের পাশে তিনিও হাজির ছিলেন।

এক জন খেলোয়াড় হিসেবে মাঠ থেকে রাজনীতির ময়দানে এসেছেন গৌতম-পুত্র। তিনি এখনও হাইলাকান্দি সিনিয়র ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। কাটলিছড়া থেকে জেলা পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৬ সালে আলগাপুর কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে ভোটে লড়ে অগপ প্রার্থী এবং দু’বারের মন্ত্রী শহিদুল আলম চৌধুরীকে পরাজিত করেন। তবে ২০১১ সালের নির্বাচনে পরাজিত হন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE