Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সংঘাত মেটাতে আসরে গৌতম-পত্নী

হাইলাকান্দির রায় পরিবারের ‘মুশকিল আসান’ যেন তিনিই। কাটলিছড়া কেন্দ্রে ভোটযুদ্ধ ঘিরে পিতাপুত্রের মনোমালিন্য মেটানোর সমাধান-সূত্র খুঁজতে এ বারও তা-ই আসরে মন্দিরা রায়।

অমিত দাস
হাইলাকান্দি শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৫ ০২:৫৬
Share: Save:

হাইলাকান্দির রায় পরিবারের ‘মুশকিল আসান’ যেন তিনিই। কাটলিছড়া কেন্দ্রে ভোটযুদ্ধ ঘিরে পিতাপুত্রের মনোমালিন্য মেটানোর সমাধান-সূত্র খুঁজতে এ বারও তা-ই আসরে মন্দিরা রায়।

ওই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে কয়েক মাস আগে সংঘাত শুরু হয়েছিল অসমের মুখ্যমন্ত্রীর উপদেষ্টা গৌতম রায় ও তাঁর ছেলে রাহুল রায়ের মধ্যে। গৌতমবাবু প্রকাশ্যেই বলেছিলেন— ‘অবাধ্য ছেলেটা আমাকে সরিয়ে আমার কেন্দ্রেই দাঁড়াতে চায়।’’ জবাবে রাহুলবাবু ঘোষণা করেন— ‘বাবার কথা জানি না, কাটলিছড়ায় এ বার আমি লড়বই।’

শেষে পিতাপুত্রের সেই লড়াই মেটানোর উদ্যোগ নিলেন মন্দিরাদেবী।

এর আগেও ২০১৩ সালে আলগাপুর বিধানসভা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচন ঘিরেও গৌতম-রাহুলের মধ্যে সংঘাত তৈরি হয়েছিল। ২০০৬ সালে আলগাপুর কেন্দ্রে ভোটে জিতে বিধায়ক হন গৌতম-তনয় রাহুল। অসম গণ পরিষদের দু’বারের মন্ত্রী সহিদুল আলম চৌধুরীকে পরাস্ত করেছিলেন তিনি। কিন্তু পরের নির্বাচনেই ফলাফল উল্টে যায়। সহিদুলের কাছে পরাজিত হন রাহুলবাবু। ২০১৩ সালে ওই কেন্দ্রের তৎকালীন বিধায়ক সহিদুলের অকাল প্রয়াণে উপ-নির্বাচন জরুরি হয়ে ওঠে। হারানো আসন পুনরুদ্ধারে প্রস্তুত হন রাহুলবাবু। কিন্তু কংগ্রেসের একটি গোষ্ঠী তাঁকে টিকিট দেওয়া নিয়ে আপত্তি তোলে। গৌতমবাবুকে ওই গোষ্ঠীর নেতারা বোঝান— রাহুলবাবু ওই আসনটি ফের দখল করতে পারবেন না। তা মেনে নেন গৌতমবাবু। রাহুলকে টিকিট দেওয়ার বিষয়ে তিনি অসম্মতি প্রকাশ করেন। তা নিয়ে পিতা-পুত্রের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। তখনও পরিস্থিতি সামলাতে নামেন গৌতমপত্নী মন্দিরাদেবী। গৌতমবাবুও জানতেন, জেদি ছেলেকে এক মাত্র মা-ই সামলাতে পারেন। তাই রাজনীতির ময়দান থেকে অনেকটা দূরে থাকা প্রাক্তন স্কুলশিক্ষিকা মন্দিরাদেবীকে আলগাপুর উপ-নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

রাহুলবাবুর ঘনিষ্ঠ শিবিরের খবর, ওই সময় পিতা-পুত্রের মধ্যে একটা অলিখিত চুক্তি হয়েছিল। ঠিক হয়, মন্দিরাদেবী নির্বাচিত হলে ওই এলাকার উন্নয়নের যাবতীয় দায়িত্ব রাহুলবাবুর হাতেই তুলে দেওয়া হবে। গৌতমবাবু রাজ্যসভা নির্বাচনে লড়বেন। জিতে রাজ্যসভায় গেলে শূন্য হওয়া কাটলিছড়া আসনের উপ-নির্বাচনে রাহুলবাবু হবেন কংগ্রেসের প্রার্থী।

এ ভাবেই মন্দিরাদেবীর মধ্যস্থতায় পিতা-পুত্রের সংঘাত থেমেছিল। আলগাপুর উপ-নির্বাচনে মন্দিরাদেবী জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু কিছু দিন পরই নতুন করে পিতাপুত্রের মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয়। সে বার সমস্যাটা ছিল পারিবারিক। তবে, গৌতমবাবুকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে ছেলের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে রাজি করান মন্দিরাদেবী।

কিন্তু ফের অশান্তির কালো মেঘ ঘিরেছিল রায় পরিবারকে। গৌতম রায়ের তিন দশকের খাসতালুক কাটলিছড়ায় লড়াইয়ের কথা ঘোষণা করে বাবার বিরুদ্ধে যুদ্ধের দামামা বাজিয়েছিলেন রাহুলবাবু। পরিস্থিতি সামলাতে মাঠে নামেন মন্দিরাদেবী। কংগ্রেস শিবিরের কানাঘুষো, তাঁকে এই অনুরোধ জানিয়েছিলেন দলেরই কয়েক জন প্রথম সারির নেতা।

রায় পরিবারের অন্তর্বিরোধের ছবিও তাতে কিছুটা বদলায়। দু’দিন ধরে কাটলিছড়ার পাশাপাশি আলগাপুরেও জনসংযোগ করতে দেখা গিয়েছে রাহুলবাবুকে। তা নিয়ে হাইলাকান্দিতে ছড়িয়েছে নতুন গুঞ্জন। কংগ্রেসের একটি সূত্রের দাবি, রাহুলবাবুকে বুঝিয়েছেন মন্দিরাদেবীই। তিনি ছেলেকে বলেছেন— কাটলিছড়া কেন্দ্রে ভোটে লড়াইয়ের জেদ ধরলে আখেরে ক্ষতি হবে রায় পরিবারের। কংগ্রেসের টিকিট না পেয়ে রাহুল যদি নির্দল বা অন্য দলের হয়ে কাটলিছড়ায় লড়েন, সে ক্ষেত্রে আসনটি রায় পরিবারের হাতছাড়াও হয়ে যেতে পারে। তাই আপাতত কাটলিছড়ার পাশাপাশি আলগাপুরেও জনসংযোগ চালানোর জন্য তিনি রাহুলবাবুকে পরামর্শ দিয়েছেন।

কংগ্রেসের ওই সূত্রের বক্তব্যের কিছুটা সত্যতা মিলেছে গত সপ্তাহে। হাইলাকান্দিতে গৌতমবাবু ইফতার পার্টিতে তাঁর পাশে বসতে দেখা গিয়েছে রাহুলবাবুকে। তবে কি কাটলিছড়ার বদলে অন্য কেন্দ্রে লড়ছেন? সরাসরি জবাব রাহুলবাবু। শুধু বলেছেন, ‘‘অপেক্ষা করুন, এ বার জোরদার লড়াই হবে।’’

লড়াইটা কোথায়, কার সঙ্গে— তা জানতেই এখন উৎসুক বরাকবাসী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE