কৃষকদের আত্মহত্যা ও বিক্ষোভ যেন পিছু ছাড়ছে না মোদী সরকারের। রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, এমনকী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্নের প্রকল্প বুলেট ট্রেনের জমি অধিগ্রহণ করতে গিয়েও কৃষক বিক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে কেন্দ্রের শাসক শিবিরকে। সেই ক্ষোভকে পুঁজি করে জমি ফিরে পেতে চাইছে কংগ্রেস। বুধবারেও রাহুল গাঁধী টুইট করে বলেছেন— এ কোন উন্নয়নের মডেল? যে মাটির সন্তানেরা আমাদের মুখে খাবার তুলে দেন, তাঁরাই আজ নির্যাতনের শিকার?
রাজস্থানে জয়পুর থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে নিন্দারে আবাসন গড়ার জন্য চাষের জমি অধিগ্রহণ করেছে বসুন্ধরা সরকার। বিনিময়ে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই ক্ষতিপূরণ যথেষ্ট নয় দাবি করে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। এক মানুষ গর্তে গলা পর্যন্ত শরীর কাদায় ঢেকে আন্দোলনে নেমেছেন স্থানীয় কৃষকেরা। নাম দিয়েছেন ‘জমিন সমাধি সত্যাগ্রহ’। গাঁধীর জন্মদিনে শুরু হওয়া এই সত্যাগ্রহে এ পর্যন্ত ৫৪ জন কৃষক অংশ নিয়েছেন, যাঁদের মধ্যে ৪ জন মহিলা।
রাজস্থানের মতোই অস্বস্তিতে মধ্যপ্রদেশে শিবরাজ সিংহ চৌহানের সরকারও। বুন্দেলখণ্ডের টিকমগড়ে কিছু দিন ধরেই সরকার যাতে উপযুক্ত দাম দিয়ে ফসল কিনে নেয় তার জন্য আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন কৃষকেরা। গত কাল এই নিয়ে পুলিশ ও কৃষকের সংঘর্ষ এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে ২৫-৩০ জন কৃষক ও জনা দশেক পুলিশ আহত হন। টিকমগড়ের ধৃত কৃষকদের থানায় তল্লাশির নামে অন্তর্বাস পরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখা ও তার পরে লক আপে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। পরে জেলা পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে আটকদের ছেড়ে দেয় পুলিশ। কিন্তু কংগ্রেস এ ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আদালত ও মানবাধিকার কমিশনেও যাওয়ার কথাও ভাবছে কংগ্রেস নেতৃত্ব।
আরও পড়ুন: তথ্য তুলে আত্মরক্ষায় প্রধানমন্ত্রী
এমন কোনও ঘটনা আদৌ ঘটেনি বলে দাবি করেও রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহ পুলিশ প্রধানকে তদন্ত করে তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলেছেন। মুখ্যমন্ত্রী চৌহানের মতে, ‘‘বিরোধী কংগ্রেস শিবিরের উস্কানিতেই ওই কাণ্ড ঘটিয়েছেন কৃষকেরা।’’ অন্য দিকে কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘বিজেপি শাসিত রাজ্যের পুলিশ মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে।’’
এর মধ্যেই মহারাষ্ট্রের যবতমলে তুলোক্ষেতে কীটনাশক ছড়াতে গিয়ে তার বিষক্রিয়ায় ১৮ জন কৃষকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। আরও বহু কৃষক অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে। মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবীশ এ ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। মৃতদের ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণের নির্দেশও দিয়েছেন। রাহুল গাঁধী তাঁর টুইটে যবতমলের ঘটনার কথা উল্লেখ করে মৃত কৃষকদের সহমর্মিতাও জানিয়েছেন।