Advertisement
E-Paper

জমি থেকে ফ্ল্যাট, মন জয়ে মরিয়া রাহুল

কৃষকদের পর শহুরে মধ্যবিত্তের মন জয়ের চেষ্টা রাহুল গাঁধীর। সরকারের জমি নীতিকে হাতিয়ার করে লাগাতার নরেন্দ্র মোদীর সমালোচনা করছেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি। আজ তিনি অস্ত্র করেন সরকারের আবাসন বিলকে। তাঁর অভিযোগ, ক্রেতা স্বার্থ ক্ষুন্ন করে প্রোমোটার-বিল্ডারদের সুবিধা পাইয়ে দিতে চাইছে সরকার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৫ ০৩:৩৩
ভক্তের সঙ্গে নিজস্বী। শনিবার নয়াদিল্লিতে কংগ্রেসের সদর দফতরে রাহুল গাঁধী। ছবি: রাজেশ কুমার।

ভক্তের সঙ্গে নিজস্বী। শনিবার নয়াদিল্লিতে কংগ্রেসের সদর দফতরে রাহুল গাঁধী। ছবি: রাজেশ কুমার।

কৃষকদের পর শহুরে মধ্যবিত্তের মন জয়ের চেষ্টা রাহুল গাঁধীর।

সরকারের জমি নীতিকে হাতিয়ার করে লাগাতার নরেন্দ্র মোদীর সমালোচনা করছেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি। আজ তিনি অস্ত্র করেন সরকারের আবাসন বিলকে। তাঁর অভিযোগ, ক্রেতা স্বার্থ ক্ষুন্ন করে প্রোমোটার-বিল্ডারদের সুবিধা পাইয়ে দিতে চাইছে সরকার।

মোদী সরকারের আবাসন বিল তথা রিয়েল এস্টেট (রেগুলেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) বিলটি দু’দিন আগে সংসদে রুখেছে কংগ্রেস ও অন্য বিরোধীরা। প্রোমোটারদের টালবাহানায় নাজেহাল ক্রেতাদের সঙ্গে আজ কংগ্রেস সদর দফতরে দেখা করেন রাহুল। সবিস্তার তাঁদের সমস্যা শোনেন। ওই বৈঠক থেকে ফোন করে কলকাতার ক্রেতাদের অভাব অভিযোগের কথাও জানতে চান রাহুল। এমনকী দিল্লি এলে তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্যও বলেন।

প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে ক্রেতাদের সঙ্গে আলোচনার পরে কংগ্রেস সহ-সভাপতির দাবি, ‘‘ইউপিএ জমানার আবাসন বিলে অনেকটাই স্বচ্ছতা ছিল। কিন্তু বর্তমান সরকার সেই শর্ত লঘু করতে চাইছে।’’ রাহুলের যুক্তি, ক্রেতাদের সমস্যা হল, প্রোমোটাররা সুপার-বিল্ট এরিয়ার নাম করে তাঁদের ঠকায়। তাই ইউপিএ-র বিলে বলা ছিল, কাপের্ট এরিয়ার (যতটা এলাকায় কার্পেট বিছানো যায়) হিসেবে ফ্ল্যাট বিক্রি করতে হবে। এর পরেই কংগ্রেস নেতার মন্তব্য, ‘‘ঠিক যে ভাবে কৃষক, আদিবাসীদের পাশে দাঁড়িয়েছি, সে ভাবে এঁদের পাশেও থাকব।’’

ইউপিএ জমানার শেষ পর্বে আবাসন বিলের খসড়া তৈরি করে সংসদে পেশ করেছিল কংগ্রেস। কিন্তু সময়াভাবে তা পাশ হয়নি। নরেন্দ্র মোদী এখন বিলটিতে কিছু সংশোধন করে পাশ করাতে চাইছেন। গত বৃহস্পতিবার সংসদে বিলটি পেশ করেছিল সরকার। কিন্তু বিরোধীদের বাধায় তা পাশ করানো যায়নি। কংগ্রেসের আপত্তি মূলত তিনটি সংশোধনী নিয়ে। এক, অনেক প্রোমোটারের বিরুদ্ধেই অভিযোগ, তাঁরা ক্রেতাদের থেকে এক প্রকল্পের জন্য টাকা নিয়ে অন্য প্রকল্পে খরচ করেন। সে কারণে ফ্ল্যাট বাড়ি বা আবাসন নির্মাণে দেরি হয়। ইউপিএ-র বিলে বলা হয়েছিল— কোনও প্রকল্পে ক্রেতাদের থেকে নেওয়া টাকার ৭০ শতাংশ সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের খাতে একটি অস্থায়ী অ্যাকাউন্টে রাখতে হবে। যাতে প্রোমোটার বেশিরভাগ টাকা অন্য প্রকল্পে সরিয়ে না ফেলতে পারে। কিন্তু বর্তমান সরকার সেই শর্ত লঘু করে ৫০ শতাংশ করেছে। দুই, ইউপিএ-র বিলে কার্পেট এরিয়ার শর্তে ফ্ল্যাট বিক্রির কথা বলা ছিল। নতুন বিলে তা পরিবর্তন করা হয়েছে। যাতে ক্রেতাদের বিভ্রান্তি বাড়বে ও প্রোমোটারদের সুবিধা হবে বলে কংগ্রেসের দাবি। তিন, পুরনো বিলে বলা ছিল, কোনও নির্মাণ সংস্থা নিয়ন্ত্রকের নির্দেশ অমান্য করলে বা অনিয়ম করলে তার ম্যানেজার, ডিরেক্টরদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে। প্রোমোটার বারবার অনিয়ম করলে তাকে কালো তালিকাভুক্ত করার প্রস্তাবও ছিল। নতুন বিলে সেই শর্ত বিলোপ করা হয়েছে।

বিলের শর্ত লঘু করার জন্য ক্রেতারা তাঁদের অসন্তোষের কথা রাহুলকে জানান। মার্কণ্ডেয় মিশ্র নামে এক ক্রেতার কথায়, অধিকাংশ প্রোমোটার এখন প্রকল্পের শুরুতেই ক্রেতাদের থেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন। পরে সেই টাকায় নতুন জমি কিনছেন বা অন্য প্রকল্পে সরিয়ে ফেলছেন। ফলে যে সময়ে কাজ শেষ হওয়ার কথা, কেউ কেউ তার তিন-চার বছর পরেও রেডি ফ্ল্যাট দিতে পারছেন না। ক্রেতাদের দুর্ভোগ এতটাই যে ব্যাঙ্ক ঋণের কিস্তির টাকার পাশাপাশি তাঁদের বাড়ি ভাড়ার টাকাও গুনতে হচ্ছে। আশিস পুরোহিত নামে দিল্লি সংলগ্ন নয়ডার এক ক্রেতা বলেন, বহু প্রোমোটার স্থায়ী কতৃর্পক্ষের কাছ থেকে সব রকম ছাড়পত্র না নিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতাদের থেকে আগাম বুকিংয়ের টাকা নিয়ে নিয়েছেন। অথচ আদালত প্রকল্পের কাজে স্থগিতাদেশ জারি করার পর টাকা ফিরিয়ে দিচ্ছেন না। তিনিই রাহুলকে জানান, শুধু দিল্লি বা রাজধানী এলাকা নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ক্রেতারা একই ধরনের সমস্যায় ভুগছেন। এর পর তাঁর থেকে ফোন নম্বর নিয়ে কলকাতার অভয় উপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তিকে ফোন করেন রাহুল। তাঁর সমস্যার কথা শুনতে চান। পরে অভয়বাবু আনন্দবাজারকে জানান, রাহুলকে তিনি জানিয়েছেন, ২০০৬ সালে হাওড়ায় বম্বে রোডের নিকটবর্তী একটি আবাসন প্রকল্পে তিনি একটি বাড়ি বুক করেছিলেন। প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি নিয়ে প্রকল্প শুরু হয়েছিল। ২০০৮ সালে বাড়িটি তাঁর হাতে পাওয়ার কথা। কিন্তু এখনও তিনি তা পাননি। রাহুলকে তিনি জানান, তাঁর মতো ৪০০ জন ক্রেতা এখনও ওই প্রকল্পে বাড়ি পায়নি। তাঁর অভিযোগ, গত দেড় বছর ধরে প্রকল্পের কাজ প্রায় বন্ধ হয়ে রয়েছে। অথচ প্রকল্প এলাকার জমি দেড়শো কোটি টাকায় অন্য একটি সংস্থাকে বিক্রি করে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট নির্মাণ সংস্থা। আর ফ্ল্যাট হাতে না পেয়েও মাসে ২৬ হাজার টাকা করে কিস্তি গুনতে হচ্ছে তাঁকে। এতে তাঁর ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে অসুবিধা হচ্ছে কিনা তা-ও জানতে চান রাহুল।

কৃষক সমস্যার পর এ বার সংসদে এই বিষয়টিও উত্থাপন করবেন কংগ্রেস সহ সভাপতি। অনেকেই মনে করেন, শহুরে মধ্যবিত্ত অংশে রাহুলের সমালোচকের সংখ্যা বেশি। তাই তাঁদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর চেষ্টায় নেমেছেন তিনি। এ প্রসঙ্গেই আমন ভরদ্বাজ নামে এক ক্রেতার মন্তব্য, ‘‘হতে পারে রাহুল গাঁধীর কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। কিন্তু আমরাও সমস্যার কথা তুলে ধরার একটা মঞ্চ পেলাম।’’

স্বাভাবিক ভাবেই বিজেপি রাহুলের অভিযোগের জবাব দিয়েছে। দলের মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেন, ক্রেতাদের স্বার্থ সুরক্ষিত করতে সরকার আলোচনার জন্য খোলা মন নিয়ে চলছে। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে বিলে বাধা দিয়ে কংগ্রেস আসলে ক্রেতাদের সমস্যা বাড়াচ্ছে।

Modi govt Rahul Gandhi Narendra Modi real estate bill BJP congress Parliament
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy