Advertisement
২২ মার্চ ২০২৩

রেল বাজেটের আগে চোখ বিদেশ লগ্নির দিকেই

এক দিকে লোকসানের বোঝা কমিয়ে আয় বাড়ানোর দায়। অন্য দিকে বিশ্বমানের পরিষেবা দেওয়ার সংকল্প। মূলত এই জোড়া লক্ষ্য সামনে রেখেই রেলে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এ বার সুনির্দিষ্ট নীতি আনতে চাইছে কেন্দ্র। আসন্ন রেল বাজেটেই এই সংক্রান্ত ঘোষণা থাকতে পারে বলে মন্ত্রক সূত্রে খবর। সংসদের বাজেট অধিবেশেন শুরু হচ্ছে সোমবার। আর তার পরের দিন, ৮ জুলাই রেল বাজেট।

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৪ ০২:২৮
Share: Save:

এক দিকে লোকসানের বোঝা কমিয়ে আয় বাড়ানোর দায়। অন্য দিকে বিশ্বমানের পরিষেবা দেওয়ার সংকল্প। মূলত এই জোড়া লক্ষ্য সামনে রেখেই রেলে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এ বার সুনির্দিষ্ট নীতি আনতে চাইছে কেন্দ্র। আসন্ন রেল বাজেটেই এই সংক্রান্ত ঘোষণা থাকতে পারে বলে মন্ত্রক সূত্রে খবর।

Advertisement

সংসদের বাজেট অধিবেশেন শুরু হচ্ছে সোমবার। আর তার পরের দিন, ৮ জুলাই রেল বাজেট। কার্যত নতুন সরকারের প্রথম পরীক্ষা। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী দিনে সরকারের অভিমুখ কী হতে চলেছে তা স্পষ্ট করে প্রথম বছরের বাজেটই। ক্ষমতায় আসা ইস্তক দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে যুঝতে হচ্ছে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে। এই পরিস্থিতিতে জনমোহিনী নীতি না সংস্কারমুখী কড়া দাওয়াই কোন পথে হাঁটে ভারতীয় রেল, তা স্পষ্ট হবে আগামী সপ্তাহে।

ক্রমাগত লোকসানে চলা রেলকে অক্সিজেন জোগাতে গত কয়েক বছর ধরেই আর্থিক সাহায্যের পরিমাণ উল্লেখজনক ভাবে বাড়িয়েছে অর্থ মন্ত্রক। যদিও প্রয়োজন তাতে মেটেনি। রেল চালানোর খরচ বেড়েছে, অথচ ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি বারবার আটকেছে রাজনীতির দড়ি টানাটানিতে। বর্তমানে রেলের ‘অপারেটিং রেশিও’ প্রায় ৯১। অর্থাৎ রেলকে একশো টাকা আয় করতে গেলে খরচ করতে হচ্ছে ৯১ টাকার কাছাকাছি। স্বভাবতই নতুন প্রকল্পে আর সে ভাবে বিনিয়োগ করা যাচ্ছে না। রেল মন্ত্রকের বক্তব্য, বেতন-পেনশন এই জাতীয় খরচের পর যা টাকা বাঁচছে, তা চলে যাচ্ছে পুরনো প্রকল্পে। ফলে পরিকাঠামো ও পরিষেবার দিকটিও বঞ্চিত হচ্ছে। সমস্যায় পড়ছেন আম যাত্রীরা।

এ হেন পরিস্থিতি সামাল দিয়ে রেলের আয়-ব্যয়ে ভারসাম্য আনতে মোদী সরকার বড় ভরসা রাখছে বেসরকারি বিনিয়োগেই। বিশেষত, বড় মাপের রেল প্রকল্পগুলি রূপায়ণের দায়িত্ব আর নিজের ঘাড়ে রাখতেই চাইছে না রেল মন্ত্রক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন বড় প্রকল্প রূপায়ণে পিপিপি মডেলের উপর জোর দিয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমান রেলকর্তাদের দাবি, সেই মডেল ত্রুটিপূর্ণ থাকায় তা সফল হয়নি। এই পরিস্থিতিতে সমাধান একটাই বিদেশি বিনিয়োগ।

Advertisement

মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, মমতার আমলে থেকেই বহু বিদেশি সংস্থা রেলে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। তৎকালীন সরকারের নীতিপঙ্গুত্বের কারণে তারা টেন্ডারে অংশ নিয়েও পিছিয়ে যায়। কিন্তু এখনও বেশ কিছু বিদেশি সংস্থা রেলের যন্ত্রাংশ বা কোচ কারখানা নির্মাণ নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে। স্টেশনের পরিকাঠামো উন্নয়নেও অর্থ বিনিয়োগে তারা রাজি। তাই বিরোধী দলগুলির বিরোধিতা করবে জেনেও রেলে বিদেশি বিনিয়োগের প্রশ্নে এখন সুনির্দিষ্ট নীতি আনতে চাইছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। বস্তুত, গত কাল কাটরায় নতুন রেলপথের উদ্বোধনে এ ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মোদী নিজেই।

পাশাপাশি, বুলেট ট্রেনকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যেও বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানানোর কথা ভাবা হয়েছে। মোদী চান, গোটা দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলির মধ্যে বুলেট ট্রেনের যোগাযোগ থাকুক। কিন্তু ওই প্রকল্পে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ প্রয়োজন। স্রেফ মুম্বই-আমদাবাদ বুলেট ট্রেনের পরিকাঠামো নির্মাণেই খরচ হবে প্রায় ৬৩ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতি কিলোমিটারে একশো কোটি টাকার বেশি। এই পরিস্থিতিতে বুলেট ট্রেনের জন্য

একটি আলাদা তহবিল গড়ার পরিকল্পনা করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা সামান্যই। ফলে বুলেট ট্রেনের ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগই আসতে চলেছে বলে আশায় শিল্প-বাণিজ্যমহল।

অবশ্য পরিকাঠামো উন্নয়নে বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানানো হলেও রেল পরিচালনার ক্ষেত্রে এখনই সে রকম কিছু ভাবা হচ্ছে না। তবে যে ভাবে যাত্রী ভাড়া থেকে আয় কমছে, তাতে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন রেল মন্ত্রক। গত তিন-চার বছরের মতো এ বছরেও ভাড়ার লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা কম আয় হয়েছে রেলের। সাম্প্রতিক ভাড়া বৃদ্ধির জেরে রেলের ঘরে বাড়তি প্রায় দশ হাজার কোটি আসবে ঠিকই। কিন্তু মনে রাখতে হবে, গত আর্থিক বছরে যাত্রী ও পণ্য মাসুলের ক্ষেত্রে ক্রস সাবসিডি ছিল এই অঙ্কের দ্বিগুণেরও বেশি প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা।

এ দিকে, যে পণ্য মাসুল থেকে আয়ের ভরসায় রেল যাত্রী-ভাড়ায় ভর্তুকি দিয়ে থাকে, সেই ছবিটিও বিশেষ আশানুরূপ নয়। রেল দফায় দফায় মাসুল বাড়ানোয় পণ্য পরিবহণ কমে গিয়েছে বলেই অনেকের মত। অথচ ডলারের তুলনায় টাকার দাম পড়ে যাওয়ায় গত এক বছরে রেলের ডিজেল আমদানি খাতে খরচ ১৩ হাজার কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটিতে। মজার কথা, এর মধ্যে নতুন ট্রেন চালানোর জন্য ডিজেল খরচ বেড়েছে মাত্র তিন শতাংশ। বাকি টাকা বেরিয়ে গিয়েছে স্রেফ আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেলের দাম বৃদ্ধির জন্য।

ফলে আয় বাড়াতে বিকল্প রাস্তার খোঁজে মরিয়া রেলমন্ত্রক। সম্প্রতি ১৪.২ শতাংশ হারে রেল ভাড়া বৃদ্ধির পরে নতুন করে বাজেটে আর যাত্রী ভাড়া চাপবে না বলেই ধরে নেওয়া যায়। তাই বাড়তি টাকার জোগানের লক্ষ্যে আরও বেশি করে প্রিমিয়াম ট্রেন চালানোর কথা ভাবছে রেল। বিমানের মতো ওই ট্রেনগুলিতেও যাত্রী-চাহিদার ভিত্তিতে ভাড়া নির্ধারিত হয়। গোটা দেশে বিভিন্ন রুটে প্রিমিয়াম ট্রেনের সফল প্রয়োগে উৎসাহী রেল মন্ত্রক এখন হাওড়া-দিল্লি, হাওড়া-মুম্বই, হাওড়া-চেন্নাই, দিল্লি-বেঙ্গালুরু, দিল্লি-আমদবাদ রুটেও ওই ট্রেন চালাতে চাইছে।

ভাবনা অনেক। ৮ জুলাই রেলমন্ত্রী সদানন্দ গৌড়া কী চমক দেন, এখন তারই অপেক্ষা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.