Advertisement
E-Paper

‘বাতিল’ রেল টিকিটে চুরি কাউন্টারেই

রেল কর্তারা জানাচ্ছেন, যাত্রী না থাকলেও কম্পিউটারে কম দূরত্ব দেখিয়ে বেশ কিছু টিকিট ‘সেভ’ করে রেখে দেওয়া হতো। তার কোনও ‘প্রিন্ট’ দেওয়া হতো না। স্বাভাবিক ভাবে সেই টিকিটের দামও হতো কম।

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৭ ০৩:৪৯
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

কম্পিউটারে সামান্য কারসাজি। আর তাতেই গায়েব রেলের কোটি কোটি টাকা!

দক্ষিণ-পূর্ব রেলের রাঁচি ডিভিশনের হটিয়া স্টেশনের একটি অসংরক্ষিত টিকিট বিক্রির কাউন্টারে তদন্ত চালিয়ে এমনই এক অভিনব দুর্নীতির হদিস পেয়েছেন রেল কর্তারা! রেল বোর্ডের দাবি, গোটা দেশেই কয়েক বছর ধরে এই কারবার চলছে। তাই রেলের প্রতিটি জোনকে সতর্ক করে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হটিয়ার ঘটনায় সাসপেন্ড করা হয়েছে ১০ জন কর্মী-অফিসারকে।

কী করে হতো এই দুর্নীতি?

রেল কর্তারা জানাচ্ছেন, যাত্রী না থাকলেও কম্পিউটারে কম দূরত্ব দেখিয়ে বেশ কিছু টিকিট ‘সেভ’ করে রেখে দেওয়া হতো। তার কোনও ‘প্রিন্ট’ দেওয়া হতো না। স্বাভাবিক ভাবে সেই টিকিটের দামও হতো কম। এ বার হয়তো কোনও যাত্রী বেশি দূরত্বের টিকিট চাইলেন। সংশ্লিষ্ট রেলকর্মী ‘সেভ’ করে রাখা টিকিটের তথ্য মুছে তার উপরেই যাত্রীর কথামতো স্টেশনের নাম লিখলেন। কিন্তু তা ‘সেভ’ না করেই প্রিন্ট দিয়ে দিলেন। ফলে বাড়তি অর্থ তাঁর পকেটে চলে গেল।

আরও পড়ুন: দিনভর নাটক শেষে জয় হল পটেলরই

উদাহরণ দিয়ে এক রেলকর্তা জানান, ধরা যাক কাউন্টারে কোনও যাত্রী নেই। সংশ্লিষ্ট রেলকর্মী নিজেই কম্পিউটার সিরিয়ালের এক নম্বর টিকিটে শিয়ালদহ থেকে দমদম লিখে (ভাড়া হয়তো ১০ টাকা) তা ‘সেভ’ করে রাখলেন। তার পরে প্রিন্টারের সুইচ অফ করে দিলেন। ফলে প্রিন্ট বেরোলো না। রেলের ভাষায়, টিকিটটি ‘নন ইস্যু’ হয়ে থেকে গেল। মানে, এই টিকিট বিক্রি হয়নি। এর পরে এক জন যাত্রী এসে জানালেন তিনি অসংরক্ষিত টিকিটে দিল্লি যাবেন (ভাড়া হয়তো ৩০০ টাকা)। এ বার ওই কর্মী ‘সেভ’ করা টিকিটের তথ্য মুছে তার ওপরে শিয়ালদহ-নয়াদিল্লি লিখে টিকিটের প্রিন্ট দিলেন। কিন্তু নতুন এই তথ্য আর ‘সেভ’ করলেন না। ফলে কম্পিউটারে আগেরটাই থেকে গেল। আর পুরো ৩০০ টাকাই চলে গেল ওই কর্মীর পকেটে।

হটিয়ার বুকিং কাউন্টারে হানা দিয়ে এই কারসাজিটাই ধরে ফেলেছেন রেল কর্তারা। তাঁদের সন্দেহ— কয়েক হাজার স্টেশনে এই কীর্তি চলছে বহু দিন ধরে। এর ফলে কত কোটি টাকা রেল খুইয়েছে, ভেবে উঠতে পারছেন না তাঁরা। হটিয়ার ঘটনার পরে রেল বোর্ডের সদস্য (বাণিজ্য) বিক্রম সিংহের নির্দেশে বিভিন্ন জোনে তদন্ত শুরু হয়েছে।

রেল কর্তাদের বক্তব্য, দূরপাল্লা বা স্বল্প দূরত্বের প্রায় কোনও ট্রেনেই যাত্রীর সংখ্যা কম থাকে না। অথচ হিসাব বলছে, গত কয়েক বছর ধরে রেলের যাত্রী ও আয় কমছে। গরমিলটা এখানেই। কারণ খুঁজতে গেলে রেল কর্তাদের এ-ও শুনতে হয়েছে যে, অনেকেই এখন সড়ক বা বিমানের মতো পরিবহণের অন্যান্য মাধ্যম বেছে নেওয়ায় আয় হারাচ্ছে রেল।

কিন্তু হটিয়ার ঘটনা কার্যত নতুন দরজা খুলে দিয়েছে। রেল কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, যাত্রী সংরক্ষণ কেন্দ্রগুলিতে কম্পিউটার আসার পর থেকে এখনও কোনও অডিট করেনি রেল বোর্ড। কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশনে রেল কর্মীদের বিরুদ্ধেই সব চেয়ে বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে। প্রাক্তন কর্তারা দাবি তুলেছেন, শুধু অসংরক্ষিত কাউন্টার নয়, এ বার অডিট হোক সংরক্ষিত টিকিটের কাউন্টারেও।

Indian Railway Rail Ticket Counter Rail Ticket Scam Ranchi রাঁচি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy