Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সুরক্ষাই বেলাইন, হাল ফেরাতে মরিয়া রেল

মোটেই ফেলনা নয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। জেট-যুগে দ্রুত গতি এবং দ্রুততর গতির তাগিদও উপেক্ষা করা চলে না। তবু রেলে অগ্রাধিকারের প্রশ্নে ট্রেন সাফসুতরো রাখা বা জোরে ছোটার অভিযানকে আপাতত পিছনে ফেলে দিচ্ছে সুরক্ষা। ট্রেনযাত্রায় যাত্রী-সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতেই এখন কালঘাম ছুটে যাচ্ছে রেলকর্তাদের।

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৬ ০৪:১৩
Share: Save:

মোটেই ফেলনা নয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। জেট-যুগে দ্রুত গতি এবং দ্রুততর গতির তাগিদও উপেক্ষা করা চলে না। তবু রেলে অগ্রাধিকারের প্রশ্নে ট্রেন সাফসুতরো রাখা বা জোরে ছোটার অভিযানকে আপাতত পিছনে ফেলে দিচ্ছে সুরক্ষা। ট্রেনযাত্রায় যাত্রী-সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতেই এখন কালঘাম ছুটে যাচ্ছে রেলকর্তাদের।

কানপুরের দুর্ঘটনার পরে আর সব পিছনে রেখে রেল বোর্ডের নতুন নির্দেশ, যে-ভাবেই হোক, ট্রেনযাত্রা পুরোপুরি নিরাপদ করতে হবে। সুনিশ্চিত করতে হবে যাত্রী-সুরক্ষা। বোর্ডের সেই নির্দেশের ভিত্তিতেই রেলের সব জোনে বিশেষ ভাবে শুরু হয়েছে নতুন ‘সুরক্ষা প্রকল্প’।

অথচ এক মাস আগেও সুরক্ষা নিয়ে রেলের তেমন মাথাব্যথা ছিল না বলে যাত্রীদের একাংশের অভিযোগ। তাঁদের অভিজ্ঞতা, সুরক্ষা-নিরাপত্তার বিষয়টি শিকেয় তুলে প্রধানমন্ত্রীর ‘স্বচ্ছ ভারত’ প্রকল্প নিয়ে মেতে উঠেছিলেন রেলকর্তারা। স্টেশনে স্টেশনে তাঁরা ঢাকঢোল পেটাতেন ওই প্রকল্পেরই। প্ল্যাটফর্ম, স্টেশন-চত্বর, ট্রেন সাফ করতে জেনারেল ম্যানেজার থেকে শুরু করে গ্যাংম্যান— সব শ্রেণির অফিসার-কর্মীরই ঝাঁটা হাতে সে কী হুড়োহুড়ি! তাতে সুরক্ষা-নিরাপত্তার বিষয়টি চলে গিয়েছে পিছনে। কিন্তু স্বচ্ছতা মিলেছে কতটা? রেলকর্তাদের অনেকেই কবুল করছেন, গত দু’বছরে রেল কতটা সাফসুতরো হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে রেল বোর্ডের রিপোর্টই। দেখা গিয়েছে, দেশের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ছাড়া বেশির ভাগ রেল স্টেশনই পরিচ্ছন্নতার পরীক্ষায় পাশ করেছে টেনেটুনে!

এর মধ্যেই রেল জানিয়েছিল, আরও একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে তারা। তার নাম ‘রেল রফতার’। অর্থাৎ ট্রেনের গতি বাড়ানো। তা নিয়েও রেলকর্তারা উঠেপড়ে লেগেছিলেন। যদিও তাঁদের একাংশ জানান, রেলের পরিকাঠামো দীর্ঘদিন বদলানো হয়নি। রক্ষণাবেক্ষণের হালও খুব খারাপ। এই অবস্থায় ট্রেনের গতি বাড়িয়ে দেওয়ার প্রয়াস কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল রেলের অন্দরেই। সেই প্রশ্ন জোরদার হয়েছে কানপুরের দুর্ঘটনার পরে। ২০ নভেম্বর শেষ রাতের ওই দুর্ঘটনায় দেড় শতাধিক যাত্রী প্রাণ হারান। আহত আড়াইশোরও বেশি। প্রাথমিক তদন্ত জানাচ্ছে, কানপুরে ইনদওর-পটনা এক্সপ্রেসের গতি একটু কম থাকলে ওই দুর্ঘটনার ভয়াবহতা কিছুটা কম হতে পারত।

রেলের খবর, ওই দুর্ঘটনার পরেই ‘রেল রফতার’ নিয়ে তৎপরতায় ভাটা পড়েছে। যথাযথ পরিকাঠামো এবং যাত্রী-সুরক্ষার পর্যাপ্ত বন্দোবস্ত না-করে গতি বাড়ালে যে লাভের চেয়ে ক্ষতির আশঙ্কা বেশি, তা বুঝতে পারছেন কর্তারা। তাই যাত্রী-সুরক্ষা নিয়ে বিশেষ নির্দেশ এসেছে জেনারেল ম্যানেজারদের অফিসে।

কী আছে ওই নির্দেশে?

জেনারেল ম্যানেজারদের বলা হয়েছে, রেলের ম্যানুয়ালে যে-ভাবে সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে, আগামী এক মাসের মধ্যে অক্ষরে অক্ষরে তা মেনে সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে হবে। সব ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম)-কে বলা হয়েছে, নিয়মিত নজরদারি চালাতে হবে প্রতিটি শাখায়। মেকানিক্যাল, সিভিল, টেলিকম সিগন্যালিং এবং অপারেটিংয়ের মতো দফতরের বিভাগীয় প্রধানদেরও বলা হয়েছে, প্রয়োজনে সুরক্ষা বিভাগের কর্মীদের সঙ্গে লাইনে নেমে কাজ করতে হবে। জানতে হবে, কাজ করতে গিয়ে সুরক্ষাকর্মীদের কী কী অসুবিধার মুখে পড়তে হচ্ছে। ঘন কুয়াশায় সুষ্ঠু ভাবে ট্রেন চালানোর জন্য কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, জানাতে হবে সেটাও। যাত্রী-সুরক্ষা নিশ্চিত করতে রেল বোর্ডের আধিকারিকদেরও প্রতিটি জোনের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলতে হবে ভিডিও-সম্মেলনে।

রেলযাত্রার হাজারো সমস্যা নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগের অন্ত নেই। যাতে চটজলদি সেই সব অভিযোগের সুরাহা-সমাধান করে দেওয়া যায়, সেই জন্যই সোশ্যাল মিডিয়ার হাত ধরেছিলেন রেল-কর্তৃপক্ষ। তাতে কাজও হয়েছে কিছু কিছু। কিন্তু ওই কাজ করতে গিয়ে রেলের সুরক্ষা, সময়ানুবর্তিতা ও নিরাপত্তার মতো রোজকার অতি-জরুরি কাজকর্মে অনেকটাই ভাটা পড়েছিল বলে রেলকর্তাদের একাংশের অভিযোগ। তাঁদের বক্তব্য, সোশ্যাল মিডিয়ার উপরে একটু বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ায় রেলকর্তারা মূল লক্ষ্য থেকে অনেকটাই সরে গিয়েছিলেন। আবার তাঁরা মূল লক্ষ্যে ফিরতে চাইছেন।

যাত্রী-সুরক্ষার অন্যতম শর্ত হিসেবেই রেললাইন রক্ষণাবেক্ষণের কাজে বিশেষ নজর দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সব জোনকে। রেললাইনের নবীকরণ সেই রক্ষণাবেক্ষণের আবশ্যিক অঙ্গ। কত কিলোমিটার রেললাইন নবীকরণ বা নতুন করে গড়ে তুলতে হবে, প্রতি বছরই রেল বাজেটে তার একটা পরিকল্পনা করা হয়। এ বছরও হয়েছে। কানপুরের দুর্ঘটনার পরে প্রতিটি জোনকে অবিলম্বে লাইন সংস্কারের সেই কাজ শেষ করে ফেলতে বলা হয়েছে। তাতে টাকার অভাব হবে না। রেল বোর্ড ইতিমধ্যে জানিয়েছে, ওই কাজ শেষ করার জন্য অতিরিক্ত টাকা বরাদ্দ করা হচ্ছে। ২০১৬-’১৭ আর্থিক বছরে গোটা দেশে মোট ১২ হাজার ৪৬৮ কিলোমিটার রেললাইন নবীকরণ বা সংস্কার করার কথা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Passenger Security Railways Trying to Improve
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE