Advertisement
E-Paper

অসমের বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখলেন রাজনাথ

ন’দিনের প্লাবনে মারা গিয়েছেন প্রায় চল্লিশ জন মানুষ। শতাধিক বন্যপশুর মৃত্যু হয়েছে। গবাদি পশু মরার কোনও হিসেব লেখাজোকা নেই। এই পরিস্থিতিতে আজ আকাশপথে রাজ্যের বন্যাকবলিত বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ও উত্তর-পূর্ব উন্নয়নমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ। সঙ্গে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৬ ০৩:৩৯
আকাশপথে অসমের বন্যা পরিদর্শন করছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। শনিবার।—নিজস্ব চিত্র।

আকাশপথে অসমের বন্যা পরিদর্শন করছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। শনিবার।—নিজস্ব চিত্র।

ন’দিনের প্লাবনে মারা গিয়েছেন প্রায় চল্লিশ জন মানুষ। শতাধিক বন্যপশুর মৃত্যু হয়েছে। গবাদি পশু মরার কোনও হিসেব লেখাজোকা নেই। এই পরিস্থিতিতে আজ আকাশপথে রাজ্যের বন্যাকবলিত বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ও উত্তর-পূর্ব উন্নয়নমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ। সঙ্গে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল।

কিন্তু বন্যার্তদের অভিযোগ, ‘সাজানো শিবির’ দেখিয়ে রাজ্য সরকার কৃতিত্ব নিলেও বন্যা কবলিতদের হাহাকার কেন্দ্রের কানেই পৌঁছল না। রাজনাথ সিংহের কাছে বন্যাত্রাণে হাজার কোটির প্যাকেজ দাবি করেছিল কংগ্রেস। রাজ্যবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল অসমের বন্যাকে জাতীয় সমস্যা বলে ঘোষণা করা হোক। কিন্তু দু’টি দাবির কোনওটিই পূরণ করেননি রাজনাথ।

পাশাপাশি এ দিন রাজনাথের সফরে অন্য একটি কারণেও প্রবল অস্বস্তিতে পড়েছে রাজ্যের বিজেপি সরকার। এ দিন রাজনাথের হাতে রাজ্যের বন্যা নিয়ে ১০ পাতার একটি অন্তর্বর্তী রিপোর্ট তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। তাতে রাজ্যের বন্যা কবলিত এলাকাগুলির যে সব ছবি ছিল, তার মধ্যে একটি ছিল ২০১৪ সালের বাংলাদেশ বন্যার! স্বাভাবিক ভাবেই চরম বিড়ম্বনায় সরকার। ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি এক আমলাকে সাসপেন্ড করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছে তারা।

বন্যায় নিহতদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এ দিন জাগিরোডের নেলিতে বন্যার জলে পড়ে ছয় বছরের এক শিশু মারা যায়। মাজুলিতে ডুবে এক গর্ভবতী মহিলার মৃত্যু হয়। কলগাছিয়ায় জলে ডুবে পাঁচ বছরের এক শিশু মারা যায়। ভুরগাঁও, কামরূপের পুথিমারি ও করিমগঞ্জের কুশিয়ারায় জলে ডুবে তিন জনের মৃত্যু হয়। ভুটান জল ছাড়ায় গুয়াহাটির বশিষ্ঠ এলাকায় হড়পা বান নেমে আসে। এ দিন সকালে রাজনাথ সিংহ ও জিতেন্দ্র সিংহ, মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল, সাংসদ রমেন ডেকাকে সঙ্গে নিয়ে আকাশপথে কাজিরাঙা পর্যন্ত এলাকার বন্যা দেখেন। পরে মরিগাঁওয়ের জাগীভকত গ্রামে একটি ত্রাণশিবির ঘুরে দেখেন তাঁরা। মরিগাঁওয়ে বন্যায় মৃত পাঁচজনের পরিবারকে দ্রুত সাহায্য দেওয়ারও আশ্বাস দেন তিনি। বিকেলে বিমানবন্দরে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, পুলিশ প্রধান, মুখ্য সচিব, সেনা ও আধা সেনা কর্তাদের সঙ্গে বন্যা ও আইন শৃঙ্খলা নিয়ে বৈঠকের পরে দিল্লি ফেরেন রাজনাথ।

তাঁর সঙ্গে আসা স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু যান অরুণাচলের পরিস্থিতি দেখতে।

রাজনাথ বলেন, ‘‘রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি সত্যিই আশঙ্কাজনক। ২৮টি জেলায় ৩৬ লক্ষ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত। মুখ্যমন্ত্রীকে বন্যাত্রাণে সব রকম ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। রাজ্য সরকারের ত্রাণ তহবিলে ৬২০ কোটি টাকা আছে। তা হাত খুলে খরচ করতে বলেছি। কেন্দ্র সব রকম সাহায্য পাঠাবে।’’ রাজ্যের বন্যাকে জাতীয় সমস্যা হিসেবে ঘোষণা করার দাবি পাশ কাটিয়ে তিনি জানান, ‘‘জাতীয় সমস্যা ঘোষণা করা বড় কথা নয়। বন্যাত্রাণে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে সেটাই আসল। তার জন্য নির্দিষ্ট অ্যাকশন প্ল্যান নিতে হবে। রাজ্য সরকার তাঁকে স্মারকলিপি দিয়েছে। দিল্লি ফিরে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন। ব্রহ্মপুত্র বরাবর বাঁধ নতুন করে তৈরি বা মেরামত করা হবে।’’

কিন্তু স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, রাজনাথকে যে শিবির পরিদর্শনে নিয়ে যাওয়া হয়, সেটি তড়িঘড়ি এক দিন আগে তৈরি করা হয়। বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষকে ওই শিবিরে এনে সব রকম প্রয়োজনীয় সামগ্রী দেওয়া হয়। রাজনাথ সফরে এসে সকলের সঙ্গে কথা বলে শোনেন, তাঁদের কোনও অভাব-অভিযোগ নেই। আসলে গত দু’দিন বোকাখাত, মাজুলিতে গিয়ে মানুষের বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলের মুখ্যমন্ত্রী ও অন্য মন্ত্রীরা। তাই রাজনাথের সফরে কোনও ঝুঁকি নেননি তাঁরা। রাজনাথের কথায়, ‘‘মন্ত্রীদের আড়ালেও শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা বলেছেন কোনও অভিযোগ নেই। রাজ্য সরকার অসাধারণ তৎপরতায় পরিস্থিতি সামলাচ্ছে। যোগ্য সঙ্গত করছে এনডিআরএফ।’’ বিধানসভার বাজেট অধিবেশন স্থগিত রেখে সব বিধায়কদের বন্যাত্রাণে পাঠানোর যে সিদ্ধান্ত রাজ্য নিয়েছে তাকে দেশের মধ্যে বিরল দৃষ্টান্ত বলে দাবি করেন রাজনাথ।

এ দিন জলসম্পদ বিভাগ ব্রহ্মপুত্র খনন নিয়ে গুয়াহাটিতে একটি আন্তর্জাতিক আলোচনা চক্রের আয়োজন করে। সেখানে এডিবি, বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরা ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী ও জলসম্পদ মন্ত্রী বিজ্ঞানসম্মত ভাবে ব্রহ্মপুত্রের খনন, ভাঙনে ডোবা জমি পুনরুদ্ধার ও ভূমিক্ষয় রোধের উপরে জোর দেন।

Rajnath Singh assam
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy