ফাইল চিত্র।
সোমবার রামমন্দিরের ভূমিপূজার আচার-অনুষ্ঠান শুরু অযোধ্যায়। বুধবার, ৫ তারিখ পঞ্জিকা মিলিয়ে দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে শিলান্যাস করার কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। কিন্তু গণেশ পূজা, দিনভর মন্ত্রপাঠ, রাম-ভজনের মতো পর পর সাজিয়ে রাখা কার্যক্রম শুরু দু’দিন আগে থেকে।
করোনা বাধ সেধেছে। তবু খামতি নেই প্রস্তুতিতে। শিলান্যাসের বিশেষ পূজায় কাশী থেকে আসছেন বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণের দল। সঙ্গে রুপোর বেলপাতা, পূজার অন্যান্য উপকরণও। স্থপতি ঘোষণা করেছেন, প্রাথমিক পরিকল্পনার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হতে চলেছে মন্দিরের মাপ। কিন্তু তা হবে বাস্তুশাস্ত্র মেনে। প্রশ্ন উঠছে, বাস্তু মেনে মন্দির না-হয় হবে। কিন্তু পারস্পরিক দূরত্ববিধি-সহ করোনা রুখতে জারি করা সরকারি নিয়মকানুন ঠিক ভাবে মানলে, এই অনুষ্ঠান এখন হয় কি?
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেই যে আড়ে-বহরে মন্দিরের মাপ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছিল, তা আগেই জানিয়েছিলেন স্থপতি চন্দ্রকান্তভাই সোমপুরা, তিন দশক আগে মন্দিরের নকশা তৈরির দায়িত্ব বর্তেছিল যাঁর উপরে। তাঁর দাবি, মন্দিরে এখন তিনের বদলে চূড়া হবে ৫টি। আর মূল গর্ভগৃহের উপরে থাকবে শিখর। বাড়বে উচ্চতা। হবে ১৬১ ফুট।
গুজরাতের অক্ষরধাম মন্দিরের নকশা করা সোমপুরা জানিয়েছেন, প্রথমে দ্বিতলের পরিকল্পনা থাকলেও, নতুন নকশা মেনে মন্দির হবে তিন তলা। পাঁচ চূড়ার নীচে পাঁচটি মণ্ডপ- কুড়ু, রং, নৃত্য, কীর্তন এবং প্রার্থনা। ১০ একরের উপরে তৈরি এই মন্দিরে স্তম্ভ থাকবে ৩৬০টি। প্রাথমিক ভাবে পরিকল্পনা ছিল ২১২টির। রাজস্থান থেকে আসা পাথর কেটে এই মন্দির তৈরি হবে উত্তর ভারতের জনপ্রিয় নাগারা নকশায়। মূল মন্দিরকে চার পাশে ঘিরে থাকবে চারটি ছোট মন্দির। তিন দশক ধরে জমিয়ে রাখা ‘শ্রীরাম’ প্রায় দু’লক্ষ লেখা ইটও ব্যবহৃত হবে ভিত তৈরিতে।
জোর খবর, ৫ অগস্ট বিতরণের জন্য তৈরি হবে ১.১১ লক্ষ লাড্ডু। তা বিলি হবে স্টিলের টিফিন কৌটোয়। এক একটি কৌটোয় ১০ টি করে লাড্ডু। অযোধ্যা, দিল্লি-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অনুষ্ঠান সরাসরি দেখাতে বসবে পেল্লাই পর্দা। সারা পৃথিবীর নজর অযোধ্যায় আঁচ করে ‘দর বাড়াচ্ছেন’ স্থানীয়দের অনেকেরও। ১৯৯১ সালে তোলা এক ছবির সৌজন্যে শিরোনামে এক স্থানীয় ফোটোগ্রাফার। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুরলীমনোহর জোশীর পাশে দাঁড়ানো কমবয়সি নরেন্দ্র মোদীর ছবি দেখিয়ে তাঁর দাবি, তখনই নাকি মোদী বলেছিলেন যে, মন্দির তৈরি চূড়ান্ত হলে, তবেই ফের অযোধ্যা আসবেন তিনি! ফোটোগ্রাফারের অভিমান অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না-পাওয়ায়!
এই সব কিছুর মধ্যেও অব্যাহত রাজনীতির জল মাপা। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সময়ে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকা কল্যাণ সিংহের দাবি, তখন অযোধ্যার জেলাশাসকের আর্জি সত্ত্বেও করসেবকদের উপরে একটিও গুলি চালাতে দেননি তিনি। এ জন্য তিনি গর্বিত। পরোয়া নেই পরে সরকার পড়ে যাওয়া নিয়ে। দলিত পুরোহিতকে না-ডাকা নিয়ে জলঘোলা অব্যাহত বিএসপি নেত্রী মায়াবতীর। মন্দিরের ‘কৃতিত্ব’ বিজেপিকে একা দিতে নারাজ মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা কমল নাথ। তাঁর বক্তব্য, এটা তৈরি হচ্ছে সবার সম্মতিতেই। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের দাবি, এই শিলান্যাস ভারতের ইতিহাসে উজ্জ্বল বিন্দু। প্রবীণ বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী, জোশীদের অবশ্যই আমন্ত্রণ জানানো হবে বলে ফের জানিয়েছে তারা।
কিন্তু ওই উজ্জ্বল মুহূর্তের সামনে দাঁড়িয়েও দেশকে ঘিরে রয়েছে করোনার আঁধার। দিনে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা দৌড়চ্ছে ৬০ হাজারের দিকে। প্রশ্ন উঠছে, তা রুখতে জারি সরকারি নিয়ম মেনে শিলান্যাসের এমন রাজকীয় আয়োজন এখন হয় কি করে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy